হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র
আজকে dhakanews24.com এর জন্য লেখাটা অনুবাদ করলাম। শেয়ার করতে ইচ্ছে হলো, তাই শেয়ার করলাম।
যুদ্ধ, শান্তি আর ওবামার নোবেল
নোয়াম চমস্কি
শান্তির জন্য আশা আর আকাঙ্ক্ষার মধ্যে মিল খুব বেশি না, কাছাকাছিও না। আসল কাজ হচ্ছে এ দুটোকে কাছাকাছি আনা। ধারণা করা যেতে পারে, নোবেল কমিটির এরকম কোন উদ্দেশ্য ছিলোনা,থাকলে হয়ত তারা বারাক ওবামাকে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দিতো না।
এই পুরস্কারকে বরং মনে হয়েছে এক ধরনের আবেদন,একটু পিঠ চাপড়ানো উৎসাহ, ভবিষ্যতের ভালো কাজ আর অপেক্ষাকৃত বুঝদার আমেরিকান নেতৃত্বের প্রত্যাশায়। স্টিভেন আরলেঙ্গার আর সেরিল গে তো এই কথাই লিখলেন সেদিন নিউইয়র্ক টাইমস এ। বুশ আর ওবামার মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল যেভাবে হয়েছে, তাতে এধরণের আবেদন আর উৎসাহের ফলাফল ভালো হতে পারে এমনটা অবশ্য মানুষ ভাবতেই পারে। নোবেল কমিটির আশংকা সঠিক। পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের বিষয়ে ওবামার আন্তরিকতাহীন লোক দেখানো উদ্বেগ তারা ঠিকই বুঝতে পেরেছে।
এই মুহুর্তে ইরানের পারমাণবিক দুঃসাহস হলো পত্রিকার পাতার সবচেয়ে গরম খবর, নিয়মিত শিরোনাম। চারিদিকে আশংকা আর উদ্বেগ, ইরান নির্ঘাত ‘আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)’র কাছে কিছু লুকাচ্ছে, জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ‘রেস্যুলেশন ১৮৮৭’ ভঙ্গ করছে। গত মাসে এই রেস্যুলেশন পাস হয়, সবাই বলছে বারাক ওবামার এটা আরেকটা বিজয়,এবার ইরান যাবে কোথায়? এরই মধ্যে বিতর্ক চলছে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম লঘুকরণ বিষয়ে ওবামার সিদ্ধান্তটা কি রাশিয়ার কাছে মাথা নিচু করা হয়েছে,নাকি ইরানের পারমাণবিক হামলা থেকে পশ্চিমা দেশগুলোকে রক্ষা করার জন্য একটা সময়োপযোগী পদক্ষেপ হয়েছে।
সে যাই হোক,নৈশব্দ মাঝে মাঝে উচ্চস্বরে গলাবাজির চেয়েও অনেক বেশি কিছু বলে। তাই আসেন,যা বলা হচ্ছেনা আমরা তা নিয়েই একটু আলোচনা করি।
ইরানের বেয়াদবি নিয়ে হৈ চৈ এর মাঝখানে একটা ব্যাপার অনেকেই খেয়াল করেন নাই। ইসরায়েল যাতে নিউক্লিয়ার প্রোলিফেরাশন ট্রিটি(NPT) মেনে নিয়ে পারমানবিক অস্ত্র আর না বাড়ায় এবং জাতিসংঘকে তাদের পারমানবিক গবেষণা তদন্তের জন্য খুলে দেয়, সে বিষয়ে একটা রেস্যুলেশনও পাস করেছে IAEA। মজার কথা হলো, এই রেস্যুলেশনের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপ। তবে যেভাবেই হোক রেস্যুলেশনটা পাস হয়েছে। সারা দুনিয়ার মিডিয়া যে কোন কারণেই হোক বিষয়টা মোটামুটি এড়িয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়লকে আগেই নিশ্চিত করেছে যে এই রেস্যুলেশনের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন দেবে। আমেরিকার সাথে ইসরায়েলের এ বিষয়ে অনেক পুরোন বোঝাপড়া আছে। তার সূত্রেই আমেরিকা তাদের সমর্থন দেয়। আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটির মুখের সামনে বিশাল বড় পারমানবিক অস্ত্র ভাণ্ডার নিয়ে বসে থাকার সাহস ইসরায়েল এভাবেই পায়।
ভারত কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের এই রেস্যুলশনকে স্বাগত জানিয়েছে,তারা অত্যন্ত খুশি।
তারা বলছে,“ ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমানবিক শক্তি সমৃদ্ধ দেশগুলোর মত মহা ধ্বংসাত্মক পারমানবিক বোমার ভান্ডার বানাতে পারবে ”। এই খবর জানা গেছে ফাইনান্সিয়াল টাইমসের সূত্রে। ভারত আর পাকিস্তান এই দুই দেশই ক্রমাগত তাদের পারমানবিক শক্তি বৃদ্ধি করে যাচ্ছে,এর আগে দুইবার তারা প্রায় পারমানবিক যুদ্ধ বাধিয়েই ফেলেছিলো। যেইসব কারণে তারা যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছিলো,ঐসব কারন এখনো বহাল তবিয়তে বিদ্যমান।
ওবামা অবশ্য রেস্যুলেশন ১৮৮৭কে ভিন্নভাবে স্বাগত জানিয়ছেন।
নতুন করে পারমানবিক বোমা বানানোর আগ্রহ মনে হয় তার তেমন নাই। শান্তির প্রতি তার মহান ব্রতের জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগের দিন পেন্টাগন ঘোষণা করেছে তারা এখন থেকে পারমানবিক বোমার বাইরে সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ১৩ টন ওজনের B-2 আর B-52 বোমা বানাবে,বাঙ্কার বিধ্বংসী এই সব বোমা দশ হাজার পাউন্ডের কংক্রিট ধুলায় মিশিয়ে দিত সক্ষম। এইসব বোমা যে ইরানে ব্যবহার করার জন্যই বানানো হচ্ছে, তা আসলে কোন গোপন খবর না। বুশের আমলে এই বোমা বানানোর পরিকল্পনা গৃহিত হলেও ওবামা ক্ষমতায় আসার পর এর উন্নয়নের কাজ চলছে ঝড়ের গতিতে।
রেস্যুলেশন ১৮৮৭ তে সারা বিশ্বে আগ্রাসন বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে আর সব দেশকে NPT তে যোগ দিতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে।
যে দেশগুলো NPT তে সাক্ষর করে নাই তারা হচ্ছে ইসরায়েল,ইন্ডিয়া আর পাকিস্তান। তিনটি দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নিয়ে পারমানবিক বোমা বানিয়েছে।
গত কয়েকশ বছরে ইরান অন্য কোন দেশে হামলা চালায় নাই, যুক্তরাষ্ট্র চালিয়েছে, ইসরায়লে চালিয়েছে,ইন্ডিয়া চালিয়ছে (ইন্ডিয়া জোরপূর্বক কাশ্মীর দখল করে রেখেছে)। বিশ্বের জন্য ইরান খুব সামান্যই ক্ষতিকারক। ইরানের যদি পারমানবিক বোমা থাকতো আর তা ছোড়ার মতো প্রযুক্তি থাকতো তাহলে এতদিনে দেশটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো।
ইসরায়েল বা অন্য কোন দেশকে হামলা করার জন্য ইরান পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে এইরকম ভাবা ইরানের নেতাদের “বদ্ধ উম্মাদ” আর তাদের একমাত্র লক্ষ্য নিজেদের দেশটাকে পশ্চিমা হামলার মুখে “তেজস্ক্রিয় ময়লায়” পরিণত করা এমনটা ভাবার মতো। এ কথা বলেছেন,সমর বিশেষজ্ঞ লিওনার্ড ওয়েইস। তার মতে, ইসরায়েলের মিসাইল বাহক সাবমেরিন গুলো বর্তমান বিশ্বে মোটামুটি অজেয় ধরনের, আর আমেরিকার বিশাল সমরাস্ত্রের ভান্ডারের কথা না বলাই ভালো। গত জুলাই মাসেই ইসরায়েল বেশ কিছু ডলফিন ক্লাস সাবমেরিন আর যুদ্ধ জাহাজ সুয়েজ খাল দিয়ে লোহিত সাগরে এমন যায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে যেখান থেকে তারা সহজেই ইরানে হামলা চালাতে পারে। ডলফিন ক্লাস সাবমেরিন পারমানবিক বোমা বহনে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাউডেনের মতে “ইহা ইসরায়েলের সার্বভৌম অধিকার”।
আবারও, সত্যকে নিঃশব্দে ঢেকে রাখা খবরই হবে আমাদের সমাজের শীর্ষ খবর, যে সমাজ মানুষের স্বাধীনতার সবচেয়ে বেশি মূল্য দেয়,যে সমাজ সারা বিশ্বের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ইরান সরকার রূঢ় হতে পারে,ইরান সরকার নিজের দেশে দমন নীতি অনুসরণ করতে পারে,কোন বিবেকবান মানুষই চায় না ইরান বা অন্য কোন দেশের কাছে পারমানবিক অস্ত্র থাক,কিন্তু এই সমস্যা গুলোর ক্ষেত্রে সামান্যতম সততা প্রদর্শন করলেও কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যায়।
পারমানবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারলেই কি নোবেল পুরস্কার পাওয়া যায়?
এ পুরস্কার পাওয়ার জন্য তো যেকোন যুদ্ধের বিরোধিতা করা উচিৎ,বিরোধিতা করা উচিৎ যে কোন যুদ্ধের প্রস্তুতির। ওবামার মনোনয়নে তাই মানুষ ভুরু কুচকাবেই, ইরানের মানুষ তো অবশ্যই কুচকাবে।
দেশটার চারদিকেই তো ঘিরে আছে যুক্তরাষ্ট্রের দখলদার সৈন্যবাহিনী।
আফগানিস্তান আর পাকিস্তান দুটো দেশই ইরানের সিমান্তবর্তী। বুশের পরিকল্পনা মাফিকই আগ্রাসন চালিয়ে যাবেন ওবামা,বোধ হয় বুশের চেয়ে তার আগ্রাসনের ধার একটু বেশীই হবে। ওবামা এরই মধ্যে পরিষ্কার করেছেন এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন তাদের দখলদারিত্ব বজায় রাখতে চায়। বাগদাদ শহরের ভেতর আরেকটা শহর, মার্কিন দূতাবাস।
দুনিয়ার আর কোথাও এত বড় দূতাবাস নাই। ওবামা এরই মধ্যে ইস্তাম্বুল আর কাবুলে এরকম মহা-দূতাবাস আর পাকিস্তানের পেশোয়ারে মহা-কনসুলেট তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন।
নন পার্টিজান বাজেট আর সিকিউরিটি মনিটরের দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী,২০১০ অর্থ বছরের জন্য ওবামা সরকার ৫৩৮ বিলিয়ন ডলার নিরাপত্তা খাতে খরচের জন্য চেয়েছে যাতে প্রেসিডেন্ট ওবামা নিরাপত্তার জন্য ভবিষ্যতে অর্থকষ্টে না পরেন,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক মেয়াদে নিরাপত্তা খাতে এত টাকা খরচ করেন নাই। এর বাইরেও আগামী বছর ইরাক আর আফগানিস্তানে খরচ করার জন্য ওবামা সরকার চেয়ছে ১৩০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড। এ খরচ ভবিষ্যতের দিনগুলোতে আরো বাড়বে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্য আরো সঠিক ব্যাক্তি অনেকেই ছিলেন,নোবেল কমিটি যাদের পুরস্কারটা দিতে পারতেন। প্রতিবাদী আফগান সমাজকর্মী মালালয় জয়া নোবেল পুরস্কারের জন্য অনেক বেশি যোগ্য ছিলেন। এই সাহসী মহিলা সোভিয়েত দখলদারিত্বে থেকেছেন,তারপর তাকে লড়াই করতে হয়েছে ইসলামী চরমপন্থিদের সাথে,তারপর সইতে হয়েছে তালিবানদের রাজত্ব। জয়া তালিবানদের কাছে মাথা নত করেন নি, এখনো তাকে লড়তে হচ্ছে হামিদ কারজাইয়ের সামন্ত শাসনের বিরুদ্ধে। এতকিছুর মধ্যেও জয়া মানবাধিকারের জন্য লড়েছেন,বিশেষ করে নারী অধিকারের জন্য।
তিনি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন কিন্তু সামন্তবাদী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। আফগানিস্তানে এখন তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে আছেন,তাকে থাকতে হচ্ছে সার্বক্ষনিক নিরাপত্ত্বার মাঝে। তারপরও তিনি লড়ছেন,কথায় এবং কাজে। বিশ্বের সব যায়গায় তার মতো কথা আর কাজের লড়াই থাকলে শান্তির জন্য আশা আর আকাঙ্খার মেলবন্ধনটা খুব ঘনিষ্ট হতো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।