আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশেষ পোষ্ট ঃ কলিকাতার একটি ব্লগে প্রকাশিত “বাংলাদেশী সংখ্যালঘুদের বাঁচান” শিরোনামের পোষ্টটির জবাবে-



গতকাল কলিকাতার একটি ব্লগে অপরাজিত নিকের জনৈক একজন ব্লগারের আপলোডকৃত পোষ্টটির প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। সামুর ব্লগাররা পোষ্টটি পড়তে চাইলে নিুের লিংকটি ক্লিক করুন: View this link লেখককে বলছিঃ আপনি এই পোষ্টটি দেয়ার আগে আরো চিন্তা ভাবনা করা উচিত ছিল কেননা ইস্যুটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আপনার প্রকাশিত তথ্যাবলীর সত্যতার ব্যাপারে নিখাদ রেফারেন্স দেয়া উচিত ছিল, যা আপনার পোষ্টে অনুপস্থিত। রেফারেন্স হিসেবে আপনি একটি ইনভেলিড লিংক ব্যবহার করেছেন। তাছাড়া, শিরোনামের সাথে নিজস্ব বাংলাদেশী প্রতিনিধি প্রেরিত বলতে আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন তাও স্পষ্ট নয়।

আপনার অবগতির জন্য বলছি কোন পাবলিক ফোরামে কোন স্পর্শকাতর ইসুতে তথ্য প্রদানের পূর্বে তার সত্যতা ও প্রকাশ পরবর্তী সামাজিক প্রভাব এর ব্যাপারে যথেষ্ট দৃষ্টি দেয়া অবশ্যই বান্থনীয় এবং তা একজন লেখকের প্রধান দায়িত্ব। আপনার পোস্টটি পড়ে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আপনি একপেশে ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মনোভাব নিয়ে এই পোষ্টটি দিয়েছেন। ব্যক্তিগত আক্রোশকে আপনি সমষ্টিগত আক্রোশে পরিণত করতে চাইছেন উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে। আমি আপনার এই মনোবৃত্তির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগোষ্টির ধর্ম ইসলাম।

কিন্তু তাই বলে এখানে অন্যান্য ধর্মাবল্বী সংখ্যা লঘুরা নির্যাতিত বা নিস্পেশিত নয় কোন ভাবেই। একথা শুধু আমি কেন আন্তর্জাতিক কমিউনিটিও এটা স্বীকার করবেন যে বাংলাদেশ ধর্মীয় স¤প্রতির একটি দেশ। যা ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলী ছাড়া বাংলাদেশে ১০০ ভাগ ধর্মীয় সম্প্রতি বিদ্যমান। আর তাইতো এখানে দেখা যায় ঈদ-পূজা-পার্বনে সকল ধর্মের মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহন।

এখানে মুসলমানদের ঈদের সময় হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান পড়শী বা বন্ধুরা মুসলমানদের বাড়ীতে যায় ঈদের আনন্দের সাথে ভাগীদার হতে। ঠিক তেমনি বড়দিন, পুজা-পার্বন বা বৌদ্ধ পূর্ণিমার উৎসবে ও মুসলমানরা তাদের খৃষ্টান-হিন্দু বা বৌদ্ধ পড়শী বা বন্ধুদের বাড়িতে যায় তাদের উৎসবের আনন্দে ভাগ বসাতে। বাংলাদেশের শিক্ষিত সংখ্যালঘু তরুন-তরুনীদের সরকারী বা বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠানেই চাকুরী পেতে বৈষম্যের স্বীকার হতে হয় না। বরঞ্চ ক্ষেত্র বিশেষে তাদের কোটার সুবিধা প্রদান করা হয়। এক কথায় বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ধর্মাবল্বীরা পারস্পরিক স¤প্রতি ও সহযোগীতার মাধ্যমে অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক একটি সামাজিক পরিবেশে বসবাস করছে।

অত্যন্ত জনবহুল একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে যা অনস্বীকার্য কিন্তু আর যাই হোক বাংলাদেশে অন্তত ধর্মীয় হানাহানি বা বৈষম্যতা বা সম্পদায়িকতা নেই। ধর্মের বিভাজন নিয়ে বাংলাদেশে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও খুব বড় বা ভয়াবহ সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়েনি, অথচ ভারতে বিভিনè সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অনেক বারই ভয়াবহ আকার ধারন করেছিল। আর ভারতের এইসব ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আঁচ কিছুটা বাংলাদেশে লাগলেও বাংলাদেশের সকল ¯তরের সহনশীল নাগরিকেরা তা সামাল দিয়েছে অত্য›ত ধৈর্য্য সহকারে। আপনি এমন কোন রাষ্ট্রের নাম বলতে পারবেন যেখানে ছোট বা বড় কোন সন্ত্রাস, দূর্নীতি, নৈরাজ্য বা সামাজিক স্খলন নেই। জানি আপনি পারবেন না।

পৃথিবীতে Euphoria-র কোন অস্তিত্ব নেই। খারাপ ভাল মিলেই এক একটি সমাজ বা রাষ্ট্র। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী এক ছাদের নীচে বসবাস করতে যেমন খুনসুটি বা ঝগড়া ঝাটি হয় তা কিন্তু আবার মিটেও যায়। তেমনি সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় পরিবেশে বসবাস করতে গেলে বিভিন্ন ধর্ম বা গোত্র বা শ্রেণীর মধ্যে ছোট খাটো ঝগড়া বিবাদ বা সাময়িকউত্তেজনার সৃষ্টি হলেও তার সুরাহাও কিন্তু হয়ে যায় অল্প সময়ে। এই ধরনের ধর্মীয় ও সামাজিক নৈরাজ্যের হার যদি ব্যাপক জনগোষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে তাহলে তা কিন্তু বিবেচনার জন্য কোন শক্তিশালী দৃষ্টান্তই হতে পারে না।

এই সম্পর্কে আমার একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আমার ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য আমাকে কয়েক বছর আগে খুব ঘন ঘন কলকাতায় যেতে হতো। মাঝে মাঝে সড়ক পথে বেনাপোল হয়ে হারিদাসপুর থেকে ট্যাক্সি নিয়ে কলকাতায় যেতাম। পুজার সময় যখন হরিদাসপুর থেকে কলিকাতা বা কলিকাতা থেকে হরিদাসপুরে যেতাম তখন এক অনাকাঙ্খিত ঘটনার সন্মুখীন হতে হতো। এই ঘটনাটি বেশী হতো হরিদাসপুর থেকে বনগাঁ বা বনগাঁ থেকে হরিদাসপুরের মধ্যবর্তী স্থানগুলিতে।

কিছুদূর পর পর একদল লোক আমাদের ট্যাক্সি থামাতো। থামানোর কারণ জানতে চাইলে বলতো “দাদা পুজোর জন্য চাঁদা দিতে হবে”। আমি নাসূচক ইঙ্গিত দিলে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে তারা ধমকের সুরে বলতো “ এই শালা ট্যাক্সি সাইড কর, চাঁদা না দেয়া পর্যন্ত ট্যাক্সি কোথাও যাবেনা”। আমি পুলিশে রিপোর্ট করার কথা বললে প্রত্যত্তুরে ওরা বলতো কোন লাভ হবে না ওরা জানে। তাছাড়া চাঁদা না দিলে তারা বিভিন্ন ধরনের হুমকিও ভয়ভীতি দেখাতো।

ভিনদেশের অপরিচিত জায়গা, লোকজন, যাত্রার বিলম্ব তাছাড়া অজানা বিপদের আশংকায় বাধ্য হয়েই তাদের দাবী মিটিয়ে আবার চলতে শুরু করতাম। যখন ভারতীয় ইমিগ্রেশন পার হয়ে বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করতাম মনে হতো যেন ধরে প্রাণ ফিরে এসেছে। বেশ কয়েকবারই এরকম ঘটনা ঘটেছে। এতে এতই আতংকিত হয়ে পরেছিলাম যে সড়ক পথে কলিকাতা যাওয়া বাদ দিয়েছিলাম। এর পর আর কখনোই আমি সড়ক পথে অন্তত পুজার সময় কলিকাতা যাইনি।

এখন আপনিই বলুন ভারতের মত এত বিশাল আয়তন ও জনসংখ্যার একটি দেশে আমার উল্লেখিত ঘটনাটিকে কি বিচ্ছিন্ন বলবেন নাকি ব্যাপক বলবেন? এই ঘটনাটি কি পুরো ভারতের সামাজিক অবস্থাকে প্রতিফলিত করে?? আপনার উত্তর কি হবে জানি না। তবে আমার কাছে এই ঘটনাটিকে ভারতের প্রেক্ষাপটে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনেই হয়েছিল। যদিও ঘটনাটি আমাকে মানসিকভাবে যথেষ্ট পীড়া দিয়েছিল। কিন্তু এই একটি ঘটনার জন্য সারা ভারতবাসীকে দায়ী করা কি আমার সমীচিন হবে?? আপনার পোষ্টের শেষের দিকের উদ্ধৃতি থেকেই বলি বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ত্বের পরিচয় দিতে হলে সংকীর্ণতার উর্ধ্বে নিতে হবে অবস্থান। অন্যায় অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে পরিত্যাগ করতে হবে একপেশে মানসিকতা।

আর প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার মনোবৃত্তিমূক্ত। নিজের দেশের গন্ডী ছাড়িয়ে অন্য দেশের মানুষকে ভাই বলে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ধর্ম, গোত্র, রাষ্ট্র বা শ্রেনী বিবেচ্য বিষয় নয়। এখানে সবচেয়ে বেশী দরকার মুক্তমনের ও উদারতার। পরিশেষে একটি কথাই বলবো বিশ্বায়নের এই যুগে সকল সংকীর্ণ মনোবৃত্তির উর্ধ্বে থেকে একটি সুস্থ, সুন্দর, মানবীয়, প্রগতিশীল বিশ্ব গঠনে বিভিন্ন বগ্ল বা পাবলিক ফোরামগুলি হয়ে উঠুক একটি বলিষ্ঠ হাতিয়ার বা মাধ্যম। পুনশ্চঃ কলিকাতার ঐ ব্লগে আমার এই লেখাটি আপলোড করতে চেয়েছিলাম পোষ্ট আকারে ম›তব্য আকারে নয়।

কি›ত্ত আপলোড করতে পারছিনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.