বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর নাতি এবং সুকুমার রায়ের ছেলে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ১৯২১ সালের ২ মে। মায়ের নাম সুপ্রভা রায়। সত্যজিৎ রায়ের পূর্ব পুরুষের ভিটা কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া গ্রামে। সে হিসেবে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় কিশোরগঞ্জবাসী সত্যজিৎ রায়কে শ্রদ্ধা ও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে। তবে তিনি কোনো দিনই পিতা, পিতামহের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কিশোরগঞ্জে পৈতৃক ভিটায় আসেননি।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম একুশে উদযাপন উপলক্ষে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তৎকালীন ছাত্রলীগ। ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সত্যজিৎ রায় তার বক্তব্যে বলেছিলেন, 'ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি যে, পূর্ববঙ্গ নাকি আমার দেশ। আমার ঠাকুরদা উপেন্দ্র কিশোর রায়ের নাম হয়তো আপনারা কেউ কেউ শুনেছেন। আমার তাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু শিশুকাল থেকে তার রচিত ছেলেভুলানো পূর্ববঙ্গের কাহিনী টুনটুনির বই পড়ে এসেছি।
ভালোবেসে এসেছি। তার রচিত গানে আমি পূর্ববঙ্গের লোকসংগীতের আমেজ পেয়েছি। যদিও এ দেশে আমি আসিনি, আমার দেশে আমি কখনো আসিনি বা স্থায়ীভাবে আসিনি, এসব গান, এসব রূপকথা শুনলে আমার মনে হতো, এ দেশের সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ রয়েছে। যখন আমার পাঁচ কি ছয় বছর বয়স, তখন আমি একবার ঢাকা শহরে এসেছিলাম। দুই তিন দিন মাত্র ছিলাম।
' এরপর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এই কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ও লেখক আর বাংলাদেশে আসতে পারেননি। বর্তমানে মসুয়ার রায় বাড়িটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। কটিয়াদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাড়িটির অবস্থান। স্থানীয়রা বাড়িটিকে জমিদারবাড়ি বলেই চেনেন। বাড়ির ছাদ ধসে পড়েছে অনেক আগেই।
এখন দেয়ালের ইটগুলোও খসে পড়ছে। দেয়াল ভেদ করে জন্মেছে বটবৃক্ষ। পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এখানে একটি পর্যটন স্পট হিসেবে রেস্ট হাউস নির্মাণ করেছে। কিন্তু মূল বাড়িটির কোনো সংস্কার করা হয়নি। বাড়িটি দেখার জন্য অনেকেই ছুটে যান।
কিন্তু বাড়ির ভগ্নদশা দেখে তারা আশাহত হন। বাড়িটির পাশেই রয়েছে ভূমি অফিস। সামনে পুকুর। বাউন্ডারির ভেতরে তখনকার সময়ের কয়েকটি দেবদারু গাছ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। সত্যজিতের বয়স যখন দুই, তখন তার বাবার মৃত্যু হয় (১৯২৩)।
১৯৩৬ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন তিনি। ১৯৩৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৪০ সালে অর্থনীতিতে সম্মান নিয়ে বিএ. পাস করেন। ১৯৪৩ সালে ডি.জে. কিমার বিজ্ঞাপন সংস্থার কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে মাসিক ৮৫ টাকা বেতনে চাকরি নেন। ১৯৫৫ সালে 'পথের পাঁচালী' মুক্তির পর ওই চাকরি ছেড়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে সার্বক্ষণিক আত্দনিয়োগ করেন। তার অন্যান্য ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মহানগর, অশনিসংকেত, অপুর সংসার, হীরক রাজার দেশে, গণশত্রু, শাখা-প্রশাখা, আগন্তুক ইত্যাদি।
১৯৪৯ সালে বিজয়াকে বিয়ে করেন। প্রথম ছবি 'পথের পাঁচালী'র জন্যই রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৯২ সালে অস্কার এবং ভারত সরকার কর্তৃক জাতীয় অধ্যাপক ও ভারতরত্ন উপাধি লাভ করেন। বই লিখেছেন অনেক। এর মধ্যে স্বয়ং প্রফেসর শঙ্কু, এক ডজন গপ্পো, রয়েল বেঙ্গল, সাবাস প্রফেসর শঙ্কু, জয় বাবা ফেলুনাথ, মহাসংকটে শঙ্কু, যত কাণ্ড কাঠমুন্ডুতে, নয়ন রহস্য ইত্যাদি।
*সাইফউদ্দীন আহমেদ, কিশোরগঞ্জ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।