আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মদীনা সনদ প্রবর্তন- ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

একদিন তোর হইবোরে মরণ রে হাসন রাজা...

হযরত মুহম্মদ (সঃ ) হিজরত করে মদীনা যখন আগমন করেন তখন মদীনাবাসীদের মাঝে দুইটি প্রভাবশালী গোত্র ছিলো (আউয ও খাযরাজ), যারা পরস্পর কলহে লিপ্ত ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এবং মদীনায় বাসকারী ইহুদীরা এই কলহের সুযোগ ধরে নিজেরা ফায়দা লুটতো। তাদের এই কুটনৈতিক শত্রুতার ফলে এই দুই গোত্রের মাঝে যুদ্ধ সংঘটিত হয় যা ইতিহাসে বুয়াস যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধের ফলে উভয় গোত্র অনেক দূর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় হযরত তাদের মাঝে আগমন করেন।

মদীনার ইহুদীরাও প্রথমে মদীনাবাসীদের সাথে রাসূলুল্লাহ্‌কে অভ্যর্থনা করেছিলো। প্রথমে তারা ভেবেছিলো যে, তারা রাসূল (সঃ ) –কে নিজেদের দলে টেনে ব্যবহার করবে। যখন তারা দেখলো এ উদ্দেশ্য সফল হবার নয় তখন তারাও রাসূলুল্লাহ্‌র বিরুদ্ধাচারণ করতে শুরু করে। মদীনার পৌত্তলিকেরা প্রথমে নীরব থাকলেও ইসলামকে একটি স্বতন্ত্র ধর্ম হিসেবে বেড়ে উঠতে দেখে তারাও মক্কাবাসীদের মত ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। যথারীতি তারাও রাসূলুল্লাহ্‌র বিরুদ্ধতা করা শুরু করে।

কিন্তু মদীনাতে রাসূলুল্লাহ্‌র অনেক অনুসারী থাকার কারণে তারা সুবিধা করতে পারে নাই। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ্‌ (সঃ ) মদীনার গোত্র প্রথা তুলে দেন এবং মদীনার মুসলমানগণকে আনসার বা সাহায্যকারী নামে অভিহিত করেন। তিনি আনাসার ও মুহাজির (মক্কা থেকে মদীনায় যারা হিজরত করেছিলো) তাদের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের জন্য তাদের মাঝে ভ্রাতৃভাব স্থাপন করেন। তিনি মদীনার সকল ধর্মের মানুষকে শান্তিতে বসবাস করানোর লক্ষ্যে বিখ্যাত মদীনা সনদ প্রবর্তন করেন। এর মূলনীতিগুলো নিম্নরূপঃ ১।

সনদে স্বাক্ষরিত সম্প্রদায়সমূহ এওকটি সাধারণ জাতি গঠন করবে। ২। যদি এদের কেউ বাইরের শত্রু দ্বারা অক্রান্ত হয় তবে সকলে মিলিত শক্তি দ্বারা সাহায্য করবে। ৩। কেউ কুরাইশদের সাথে কোন সন্ধি করতে পারবে না এবং মদীনাবাসীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কুরাইশদেরকে সাহায্য করতে পারবে না।

৪। মুসলিম, ইহুদী ও অন্যান্য সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্ম যথা নিয়মে পালন করবে। কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ৫। স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তি অপরাধ করলে তা তার ব্যক্তিগ ত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

এর জন্য স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়কে দায়ী করা হবে না। ৬। দূর্বল ও অসহায়দেরকে সর্বোতভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে। ৭। এখন থেকে মদীনায় রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলাৎকার নিষিদ্ধ করা হলো।

৮। মদীনাবাসী হযরতের বিনা অনুমতিতে যুদ্ধ ঘোষনা করতে বা কোন সামরিক অভযানে যাইতে পারবে না। ৯। স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহের মাঝে কোন বিরোধ বা মতানৈক্য দেখা দিলে তা সরাসরি রাসূলুল্লাহ্‌র নিকট পেশ করতে হবে। ১০।

আল্লাহ্‌র রাসূল মুহম্মদ (সঃ ) এই প্রজাতন্ত্রের সভাপতি হবেন এবং পদাধিকার বলে তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের (Court of Appeal) সর্বময় কর্তা হবেন। বলা বাহুল্য এই সনদের মাধ্যমে বিশ্বে সর্বোপ্রথম ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু করা হয় এবং মদীনারবাসীর মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপিত হয়। এই যুক্তির ফলে আউয ও খাজরাজ গোত্র সহ অন্য সকল গোত্রসমূহের মধ্যকার শত্রুতা দূর হয় এবং পরস্পরের মাঝে সম্প্রীতির সূচনা হয় যা ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য অপরিহার্য ছিলো। সূত্রঃ 'ইসলামের ইতিহাস'- অধ্যাপক কে. আলী

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.