শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুল মাঠে নানা আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বৃহত্তর বেগমগঞ্জ যুব কল্যাণ সমিতির ১৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও বেগমগঞ্জ উৎসব-২০০৯। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত উক্ত অনুষ্ঠানের পর্বগুলোর মধ্যে ছিল- সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা শেষে দুপুরে মধ্যাহ্নভোজ, বিকাল ৫টায় আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যায় ছিল জাতীয় শিল্পীদের অংশগ্রহনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । কোন অনুষ্ঠান যতো দীর্ঘায়িত হয় স্বভাবতই দর্শক শ্রোতাদের উপস্থিতি কমতে থাকে। কিন্তু বেগমগঞ্জ উৎসবে ঘটেছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কারন একটাই, কিছুক্ষণ পরপর মঞ্চ থেকে ঘোষনা আসছে- সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সেখানে গান পরিবেশন করবেন জনপ্রিয় ব্র্যান্ড শিল্পী হাসান, শিল্পী মনিরখান, ফেরদৌস আরা, আসিফ ও আঁখি আলমগীরসহ প্রখ্যাত শিল্পীরা। আর তাই সকাল থেকে যেন ঘেমে ঘেমে জনস্রোতে পরিনত হলো সেগুনবাগিচা হাইস্কুল মাঠ। আসিফ ও আঁখি আলমগীরের উপস্থিতি না থাকলেও অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ের আকর্ষন তথা মনির খানের গানে মেতে উঠেছে পুরো স্কুল মাঠ। আর তাই রাত ১২টায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনার পর উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা যেন বাধ্য হয়েই বাসায় ফিরলো।
সমিতির সভাপতি এ এইচ এম শামছুল আজাদ তারেকের সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে ১১টায় উক্ত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি এম.এ হাশেম।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বাবু ধীরাজ কুমার নাথ, সাবেক এমপি অধ্যাপক মোঃ হানিফ, সাবেক এমপি আহমেদ নজির, সাবেক এমপি অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকাস্থ নোয়াখালী সমিতির সভাপতি মোঃ শাহাবুদ্দিন, বেগমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ভি পি মোহাম্মদ উল্ল্যাহ, সোনাইমুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আ.ফ.ম বাবুল, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান ডাঃ এ,বি, এম জাফর উল্লাহ, এফবিসিসিআই’র পরিচালক জসীম উদ্দিন, গ্লোব গ্রুপ অব কোম্পানীজ লিঃ’র পরিচালক মামুনুর রশীদ কিরণ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ’র সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) ডাঃ রেজাউল হক, দৈনিক নোয়াখালীর খবর পত্রিকার সম্পাদক আলহাজ্ব আ.ম.ম আনোয়ার বি,এস,সি প্রমুখ।
বিকেল ৫টায় ছিল আলোচনা সভার দ্বিতীয় পর্ব। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এম.পি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সাংসদ রুবি রহমান, নোয়াখালী-৩ আসনের সাংসদ বরকত উল্লা বুলু, নোয়াখালী-১ আসনের সাংসদ ব্যারিষ্টার এ.এম.মাহবুব উদ্দিন খোকন, বেঙ্গল গ্রুপ ও আরটিভি’র চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম, গ্রীণ ডেল্টা হাউজিং এন্ড ডেভেলপার’র চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বাকের, সম্রাট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ খান বেলাল, শাহজাহান ছাত্তার, সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান সমন্বয়কারী খন্দকার লুৎফর রহমান ফটিক, সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সরফুদ্দীন বাবু, এ্যাডভোকেট আমানাতুন্-নূর পান্না প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে সন্ধ্যায় শুরু হলো দর্শকদের আকর্ষণীয় পর্ব তথা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বন্ধ হয়ে গেল সভা মঞ্চের সবগুলো লাইট। পুরো স্কুল মাঠ জুড়ে উৎসব মুখর পরিবেশ। কানায় কানায় ভর্তি হয়ে গেলে মাঠ। শুরু হলো মঞ্চে নানা রঙের আলোর প্রজ্জলন। হাতে অগ্নি শিখা নিয়ে বিটিভির নৃত্য শিল্পী জিনিয়া ও মুকুলের নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এরপর শিশু শিল্পী সাজেদুল হাসান রাহীনের ও নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের সম্রাট খ্যাত শিল্পী বেলালের পরিবেশনায় নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান সকলের হৃদয়ে যেন নাড়ির টানের ছোঁয়া অনুভূত হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে ক্লোজ আপ ওয়ানের প্রতিযোগী শিল্পী ঝিলিক, বৃষ্টি সরকার ও তার দলের পরিবেশনা বাউলগান, ক্লোজ আপ ওয়ানের প্রতিযোগী মহুয়া একাধিক গান পরিবেশন করে।
জনপ্রিয় কন্ঠ শিল্পী নোয়াখালীর কৃতি সন্তান ফেরদোস আরা ওঠেন মঞ্চে, যেন আলোকিত হলে উঠলো পুরো মঞ্চ। কোমল কন্ঠে গেয়ে ওঠেন - ‘চোপকি চোপকি ভীরু ভীরু পায়- পল্লীর বালিকা বন পথে যায়’ সহ একাধিক গান। অবশ্যই মাঝে নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান ‘ওরে টিকটিকি তুই বেয়াইন রাইতে কইল্লি কিল্লাই টিক্টিক্’ শুরু করলেও যন্ত্র শিল্পীদের সমস্যার কারনে আর শেষ করা যায়নি।
তারপর সাংসদ বরকত উল্লা বুলুর সহধর্মিনী লাকী’র পরিবেশিত একাধিক গানের পর নৃত্য।
ঘড়ির কাঁটা যখন সাড়ে ১০ টা তখন মঞ্চ থেকে ঘোষনা- “এখন মঞ্চে আসছেন আপনাদের প্রিয় হাসান”। সাথে সাথে করতালি আর উচ্ছাস হাসান প্রিয়দের। দু’দিকে ঝুলছে কালো চুল মাঝখানে দেখা যাচ্ছে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড শিল্পী হাসানের মুখ। ‘এক জনই বান্ধবী, জীবনের তুই সবি, নাই নাই তুই ছাড়া কেহ নাইরে.....’সহ একাধিক গান পরিবেশনে মাতিয়ে তোলেছেন শ্রোতাদের।
এসময় মাঠের মাঝে মাঝে কিছু ঝটলা বাঁধা হাসানভক্তদের নাচ লক্ষ্য করা গেছে। হাসানের পরে আসল তিন্নি। ‘ও...রে সাম্পান ওয়ালা, তুই আমারে করলি দিওয়ানা’ গানটির ক’টি লাইন গাইলেন মাত্র এর পর মাঠের মাঝে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শুরু হলো চেয়ার ছোড়াছুড়ি। পরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তখন সময় রাত ১১টা।
তিন্নির পরে আসে ক্লোজ আপ ওয়ানের প্রতিযোগী রাজীব। তিনি একাধিক গান পরিবেশনের পর মঞ্চ থেকে ঘোষনা এলো ‘এখন আসছেন মনির খান’। চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখা গেল মাঠের চতুর্দিক পরিপূর্ন হওয়ার পরও মানুষের ঢল যেন থামছেনা। দেয়ালের উপরেও মানুষের ভীড় লক্ষ্যনীয়।
মঞ্চে এলেন মনির খান, সময় রাত ১১টা ২২ মিনিট।
প্রথমে দর্শক শ্রোতাদের প্রতি প্রেমের সম্পর্ক ‘ছিন্ন’ না করার অনুরোধ জানালেন। “অনেকে বলেন আমি চ্যাকা খেয়েছি, চ্যাকা না খেলে জীবনটাই স্বার্থক হয় না। আমি তো প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি (গানে গানে), আপনারা.....। ” -বললেন মনির খান।
‘সে যদি পায়রে খবর কেমনে দিবি লাশের কবর’ গান দিয়ে শুরু করে একাধিক গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন এবং ‘চাল নেই চুলো নেই, আমি যে বেকার ছেলে...’ গান গেয়ে শেষ করলেন অনুষ্ঠান।
আর অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনার সাথে সাথে সেগুনবাগিচা হাই স্কুল মাঠে জনস্রোতে সৃষ্ট জোয়ারটিতে যেন ভাটা পড়তে শুরু করল।
সুত্র: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।