মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
‘ওরা বীর
আকাশে জাগাতো ঝড়’।
তোমাদের সেই মিলিত ফসলের মাঠে
দাঁড়িয়ে আমরা অগণন-
আজ আবার উচ্চারণ করি নিঃশঙ্কচিত্তেঃ
‘শহিদ_খুন আগুন জ্বালে, শপথ অক্ষুন্নঃ
এদেশ অতিশীগ্র হবে বিদেশী চর শূন্য।
বাঁচাবো দেশ,আমার দেশ, হানব প্রতিপক্ষ,
এ জনতার অন্ধচোখে আনব দৃঢ লক্ষ্য’।
হে বীর,
আমাদের সাহস দাও,
দাও সেই দৃপ্ত হাতিয়ার-
গর্জে উঠো মানুষকে ভাল্বেসে
ক্ষয় নেই যার।
পাবনা ছিল তৎকালীন বঙ্গ-প্রদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। অগ্নিযুগের সশস্ত্র ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামে পাবনার অবদান রয়েছে। রাজশাহীর পাবনাই ছিল বিপ্লববাদীদের প্রধান ঘাটিস্থল। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে তেভাগাসহ সকল লড়াই-সংগ্রামে ওই অঞ্চলের বিপ্লবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যার নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী কমিউনিষ্টরা।
তাঁদের মধ্যে কমরেড প্রসাদ রায় অন্যতম।
পাবনা জেলা রাজশাহী বিভাগের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি ২৩°৪৮′ হতে ২৪°৪৭′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০২′ হতে ৮৯°৫০′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এর উত্তর দিক ঘিরে আছে সিরাজগঞ্জ জেলা আর দক্ষিণে পদ্মা নদী পাবনাকে ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া জেলা হতে পৃথক করেছে। পাবনার পূর্ব প্রান্তদিয়ে যমুনা নদী বয়ে গেছে।
পশ্চিমে নাটোর জেলা। পাবনার কাজীরহাট নামক স্থানে পদ্মা ও যমুনা নদী পরস্পর মিলিত হইয়েছে। পাবনা জেলার সুজানগর থানায় ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামের বহু নেতা-কর্মী ও সংগঠকের জন্ম।
কমরেড প্রসাদ রায়ের জন্ম ১৯২৮ সালে। পাবনা জেলার সুজানগর থানার তাঁতিবন্দের রায় পরিবারের প্রতাপ ভবনে।
ওই অঞ্চলের মডারেট ও লিবারেল আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল এই প্রতাব ভবন। রাজনৈতিক কারণে নির্যাতিত, অবহেলিত ও বিতাড়িতদের শেষ ভরসা ও আশ্রয়স্থল ছিল এই বাড়ির ছোটতরফ ও শবাসনা দেবী। ঐতিহ্যবাহী এ ভবনের সুনাম আজো মানুষের মুখে মুখে। প্রসাদ রায়ের বাবা প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, মা শবাসনা দেবী। তাদের ঘরে ৭ টি সন্তানের জন্ম হয়।
পাঁচ ভাই, প্রবীর রায় (সঙ্গীত প্রেমিক), প্রদীপ রায় (কমিউনিষ্ট নেতা), প্রণব রায় (প্রখ্যাত সেতার বাদক ও সঙ্গীত শিক্ষক), প্রণতি রায় (রাজনৈতিক কর্মী ও ছাত্রনেতা) ও তিন বোন। প্রসাদ রায় সর্বকনিষ্ঠ। পাঁচ ভাই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। চার ভাই কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন।
পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে।
তারপর পাঠশালা ও প্রাইমারী স্কুলে। ১৯৪২ সালে ভর্তি হন আর এম একাডেমীতে। স্কুল জীবনে ১৯৪৫ সালে তিনি সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। স্কুলে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৪৭ সালে স্কুলে পড়াশুনাকালীন সময়ে সুজানগর থানায়ও সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্ব নেন।
পাঠ্যবই পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি প্রচুর অন্যান্য বই পড়তেন। সেই অল্প বয়সেই পড়ে ছিলেন মার্ক্সবাদী বই। সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গণে তাঁর পদচারণা ছিল সমান। খেলাধুলায়ও পারদর্শী ছিলেন। এছাড়া তিনি গান, কবিতা আবৃত্তি ও অভিনয়েও ছিলেন পটু।
মাঝে মাঝে কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ লিখতেন। সহপাঠীদের নিয়ে নানারকম গল্প, উপন্যাস ও কবিতা আবৃত্তির আড্ডা জমাতেন। স্কুলের সকল ছাত্র তাঁকে পছন্দ করতো। নানাগুণের কারণে শিক্ষকরা তাকে খুব পছন্দ করতেন।
১৯৪৮ সালে তিনি আর এম একাডেমী থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
ওই বছর তিনি এডওয়ার্ড কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। কলেজে ছাত্র ফেডারেশন গড়ে তোলার কাজে যুক্ত হন। অক্লান্ত শ্রম আর মনন দিয়ে গড়ে তোলেন শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি। ১৯৪৯ সালের আগস্ট মাসে তিনি এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশুনাকালীন সময়ে ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ‘বন্দী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তির’ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এই বন্দীমুক্তি আন্দোলন চলাকালে বন্দীদের মুক্তির দাবি সম্বলিত পোস্টার লাগানোর সময় পাকিস্তান পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
(১ পর্ব )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।