আমি মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে ভালবাসি ।
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় একেবারে ছোটবেলা থেকেই। কুকুর আর বিড়াল তো আমাদের অনেকেরই ছেলেবেলার সাথী। কিন্তু আর এক রকমের স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়, যাদের দেখতে পাখীর মত, ডানাও আছে একজোড়া, যার সাহায্যে এরা স্বচ্ছন্দে উড়তে পারে। উড়তে পারলেও এরা কিন্তু পাখী বলে পরিচিত হয় না।
এই প্রাণীটির নাম বাদুড়। এই বাদুড় হল একমাত্র উড়ন্ত স্তন্যপায়ী। হাত থেকে পা পর্যন্ত পাতলা চামড়ার আস্তরণে তৈরি একজোড়া ডানার সাহায্যেই উড়ে বেড়ায় এরা।
বাদুড় তেমন বড় প্রাণী নয়। শরীরটা গড়ে দু'ইঞ্চি লম্বা।
বিস্তৃত ডানার মাপ সাত ইঞ্চি থেকে ন'ইঞ্চি। পাখীর মত এদের ঠোঁট নেই। আছে শিয়ালের মতো লম্বা ধরনের মুখ। মুখের ভেতরে ধারাল দাঁত। সামনের দিকে ওপর নিচে দু'টি করে চারটি বড় দাঁত থাকায় মুখটা কেমন হিংস্র হিংস্র।
বাদুড়ের ডানায় পাখীদের মত পালক নেই। তা না থাক। গায়ে ঘন লোম আছে। দু'টি পায়ে থাবাও রয়েছে বটে, তবে বেশ দুর্বল, শিকারের কাজে তেমন একটা লাগে না। দেয়ালের ফাটলে-ফুটলে বসার জন্যই সেগুলো ব্যবহার করে।
হাত-পা অন্য প্রাণীদের মত যথেষ্ট কর্মক্ষম না হলেও গাছে ওঠার সময়ে কাজে লাগে। অল্পস্বল্প হাঁটাচলাও করে এরা। সেও ওই হাত পায়ের সাহায্যেই। কিন্তু আশ্চর্যের কথা, বাদুড়ের নির্দিষ্ট কোন বাসা নেই। এরা নিশাচর প্রাণী।
সারাদিন ধরে গাছের ডালে ডালে ঝুলে দল বেঁধে ঘুমায়। সেই সময় এদের মাথা থাকে নিচের দিকে। পা দিয়ে গাছের ডাল শক্ত করে অাঁকড়ে থাকে। এদের শরীরের গঠনটাই এমন যে, সোজা হয়ে এরা দাঁড়াতে পারে না। নিচের দিকে মাথা করে ঝুলে থাকাটাই এদের পক্ষে সহজ।
দিনের বেলা গাছেগাছে ঝুলন্ত বাদুড়গুলোর কোন সাড়াশব্দ থাকে না। সন্ধ্যার সময় ঘুম ভাঙ্গার পর এরা মুখ খোলে। ডালে ডালে চ্যাঁ চ্যাঁ শব্দের একটানা কনসার্ট বেজে ওঠে। তারপর খাবারের খোঁজে চারদিকে বেরিয়ে পড়ে।
আগেই উল্লেখ করেছি, বাদুড় পাখী নয়, স্তন্যপায়ী প্রাণী।
মা-বাদুড় পাখীদের মত ডিম পাড়ে না। একেবারে সরাসরি একটি মাত্র বাচ্চা প্রসব করে। তারা মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয়। প্রথম প্রথম মা তার বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে শিকারে বের হয়। বাচ্চাটি বড় হতে হতে ওজনে ভারী হয়ে গেলে তখন অন্য ব্যবস্থা।
গাছের ডালে বাচ্চাকে ঝুঁলিয়ে রেখে মা শিকারের খোঁজে উড়ে যায়।
বাদুড়ের একটি প্রজাতিকে আমরা খুব চিনি। আকারে অনেকটাই ছোট। গাছপালায় নয়, গৃহস্থের ঘরের ফাটলে কিংবা চালের বাতায় এদের বাসা। এদের বলা হয় চামচিকে।
রাতচরা বাদুড়ের রাতের অন্ধকারেই যত কাজ। অন্ধকারে এদের নির্ভুলভাবে উড়ে বেড়ানোর অসাধারণ ক্ষমতা সত্যিই কৌতূহলের ব্যাপার। অন্ধকার রাতে ঘন বনের মধ্যেও কোন কিছুর সঙ্গে ধাক্কা না খেয়ে এরা খুব দ্রুত বেশ উড়তে পারে। অন্য কোন প্রাণীর এমন ক্ষমতা আছে বলে আমাদের জানা নেই। বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, উড়ার সময় বাদুড়েরা চোখের ব্যবহার করে না, করে কানের ব্যবহার।
তাঁরা বলেন যে, সেই সময় এরা মুখ থেকে উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ-তরঙ্গ সৃষ্টি করে। এই তরঙ্গকে শব্দোত্তর তরঙ্গ বা, ‘আলট্রাসনিক ওয়োভস' বলে। শব্দোত্তর তরঙ্গ কোথাও বাধা পেলে তা প্রতিফলিত হয়ে বাদুড়ের কানে ফিরে আসে। এ ব্যাপারে এদের কান বেশ সংবেদনশীল। ফলে উড়ার সময় সামনের বাধাকে সনাক্ত করতে এই শব্দোত্তর তরঙ্গ দ্রুত সাহায্য করে।
এবং তখন এরা সহজেই যাত্রাপথের সেই বাধাকে এড়িয়ে যায়। আর চোখের ব্যবহার? সে শুধু পোকামাকড় বা অন্য কোন শিকার ধরার মত কাজের জন্য।
বাদুড়ের বাস পৃথিবী জুড়ে। মেরু অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র এদের দেখতে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত দু'হাজারেরও বেশি রকমের বাদুড়ের সন্ধান পেয়েছেন।
এদের মধ্যে আমেরিকার ‘ভ্যাম্পায়ার' নামে এক প্রজাতির বাদুড় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। এদের দৈর্ঘ্য ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে দেখা গেছে। এদের দাঁতগুলো ছুঁচের মতো তীক্ষ্ণ। রাতে এরা ঘুমন্ত গৃহপালিত জীবজন্তুর শরীরে দাঁত বসিয়ে রক্ত চুষে খায়। এমনকি সুযোগ পেলে ঘুমন্ত মানুষকেও রেহাই দেয় না এই ভয়ঙ্কর বাদুড়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।