আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিব্বত, চীন, অরুণাচল, দালাইলামা, দৃক ও অদৃশ্য তিব্বতী ছাত্রবৃন্দ

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

দুইদিন আগ থেকে এক বন্ধু ফেসবুকে মেসেজ দিচ্ছিলেন যে, চীনা দূতাবাস থেকে দৃকের একটা প্রদর্শনী বন্ধ কইরা দেওনের চাপ আসতেছে। অতএব আমরা যেন যাই প্রদর্শনীতে। আমি তারে পাল্টা জিগাইলাম, তিব্বত নিয়া আপনেরা প্রদর্শনী করতেছেন কী মনে কইরা? বিস্তারিত জানতে চাই। উনি দাওয়াত দিয়া খালাস।

বিস্তারিত জানানোর আর দরকার মনে করেন নাই। তিব্বত নিয়া একটা প্রদর্শনী হবে, ঢাকার একটা ‌'আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন' প্রদর্শনী কেন্দ্রে এতে বাধা দিতেছে চীনা দূতাবাস। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে, চীনারা পুলিশের কাছে না গিয়া শহীদুলের কাছে গেল কেন। বলাবাহুল্য শহীদুল আলম দৃকের কর্ণধার। প্রথমে আমি এইটারে একটা স্টান্ট হিসাবেই গণ্য করছি।

ভাবছি, গিমিক তৈরি কইরা প্রচারে আসার কৌশল। ফলে রস কইরা ফেসবুকে একটা স্টেটাসও ঝুলাইছি। স্টেটাসটি নিম্নরূপ: 'আমি তিব্বতে (নাবিস্কো মোড়ের কাছে)। দালাইলামা ভারতে (অরুণাচল যাবেন)। দৃকে প্রদর্শনী হবে।

সবাই যাচ্ছে, আমি যাবো না। কারণ তিব্বতের মোড় থিকা ধানমণ্ডী মেলা দূর। ' ঘটনাটা ইন্টারেস্টিং বিধায়, খবর নিতেছিলাম দৃকে কী হইতেছে। সন্ধ্যা নাগাদ ঘটনা ক্লিয়ার হইলো। পুলিশি রাষ্ট্রে যে কোনো কাজে বাধা দেওনের কামে পুলিশের জুড়ি নাই।

ছলেরও অভাব নাই। পুলিশ আসছে। বাধা দিছে। প্রদর্শনী উদ্বোধন ভালমতো হইতে পারে নাই। কিন্তু খবর তৈরি হইছে।

এইখানে পুলিশের তীব্র নিন্দা করা দরকার। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। এইখানে নাগরিকদের অধিকার শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমবেত হওয়ার প্রদর্শনী করার নাটক করার, নৃত্য করার। এইখানে পুলিশের কিছু করার নাই। পুলিশের অনুমতি নিয়া আমরা নৃত্য নাট্য গীত প্রদর্শনী করতে পারবো না।

যদি পুলিশ ভাইবা থাকে এইসব আমরা তাদের অনুমতি নিয়া করতে বাধ্য তাইলে পুলিশের এক্তিয়ার নিয়া ভাবতে হবে। এই নিয়া কথা তুলতে হবে। বলতে হবে। চীনা দূতাবাসকে এই প্রসঙ্গে নিন্দা জানানো দরকার। প্রথম প্রশ্ন, বাংলাদেশ এক চীন নীতি সমর্থন করে।

তিব্বতের স্বাধীনতার পক্ষে বাংলাদেশ নাই। চীনারা সরকারের কাছে আর্জি না নিয়া গিয়া শহীদুলের কাছে গেল কেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন, শহীদুলের সঙ্গে সুরাহা করতে না পাইরা তারা সরকারের কাছে গেল কেন? বাংলাদেশে আমাদের অধিকার আছে, তিব্বত, বার্মা, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, সিকিম, অরুণাচল নিয়ে কথা বলার। এইটা ঠেকাইতে তারা সরকারের সাহায্যে পুলিশ নামাইলো কেন? স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপের আলামত পাওয়া গেছে। বিদেশী বহু রাষ্ট্রই হস্তক্ষেপ করে, কথা বলে। এ বিষয়ে চীন ভদ্রস্থ কূটনীতিতে অভ্যস্ত ছিল।

কিন্তু এই ঘটনায় দেখা যাইতেছে চীন অন্যদের মতো সামনে চইলা আসতেছে। বিষয়টি ভাল নহে। এখন দৃকের কাছে প্রশ্ন : প্রথম প্রশ্ন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর মোতাবেক, এই প্রদর্শনীর আয়োজক তিব্বতি ছাত্ররা। তিব্বতিরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য যে কোনো কর্মসূচি পালন করলে আমরা তাদের প্রতি সমর্থন দিবো। তারা এখানকার নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে করে প্রদর্শনী আয়োজন করতে পারে।

কিন্তু ফেইসবুকে, সংবাদপত্রে এ পর্যন্ত প্রদর্শনী কেন্দ্রিক যত ছবি দেখলাম তাতে কোনো তিব্বতী ছাত্র-ছাত্রী তো দেখলাম না। কোনো তিব্বতীও দেখলাম না। আমার প্রথম প্রশ্ন, ওই অনুষ্ঠান কি আসলে তিব্বতীদের নাকি দৃকের? তিব্বতীদের হইলে তিব্বতী কাউরে দেখলাম না কেন? একি আমার চোখের ভুল? দ্বিতীয় প্রশ্ন, ধর্মশালায় দালাইলামার আগমনের পর্ব উপলক্ষে আয়োজন। ভাল কথা। দালাইলামাকে নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র-ভারত টানাপোড়েন এবং তার অরুণাচল সফর নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা ইত্যাদির মধ্যে দৃকের তো জানা থাকার কথা, আমাদের দুই প্রতিবেশী পরাশক্তি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে।

এরকম একটি অবস্থায়, তিব্বতী ছাত্রদের প্রদর্শনী শুধু তিব্বতী ছাত্রদের প্রদর্শনী নয়। একটি পক্ষাবলম্বন। দৃক কেন এই সময়ে একটি পক্ষালম্বন করে একটি মিডিয়া পরিস্থিতির জন্ম দিল? আমার তো জোর ধারণা, স্বাধীনতাহীনতা, পরাধীনতা তিব্বতের চেয়ে মণিপুরে কম নয়। মানবাধিকারের লংঘন বাংলাদেশের ক্রসফায়ার গার্মেন্টের চাইতে তিব্বতে বেশি নয়। আমরা গণতান্ত্রিক সমাজ।

কেউ বাইছা নেই ক্রসফায়ার, গার্মেন্ট, মণিপুর, সিকিম, আসাম। কেউ বাইছা নেই তিব্বত উইঘু তিয়েনআনমেন। কেউ বাইছা নেই ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন। বুঝতে হবে। এর মধ্যে রাজনীতি আছে।

ফলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস দৃক যে এই সময়ে তিব্বত নিয়া এই আয়োজনটা করছে তার মধ্যে ঘোরতর রাজনীতি আছে। একটা পক্ষাবলম্বন আছে। আর এর মধ্য দিয়া যে মিডিয়া পরিস্থিতি সৃষ্টি হইলো তাতে আন্তর্জাতিক খ্যাতির একটা ব্যাপার আছে। প্রদর্শনী বন্ধে দৃকের লাভ হয়েছে বটে। কিন্তু আমরা যারা আম জনতা তাদের কোনো ভাল নাই।

শুধু ক্ষতি। সবচেয়ে বড় ক্ষতি এই যে, পুলিশ আপাত অর্থে নিরপরাধ একটা চিত্র প্রদর্শনী পর্যন্ত বন্ধ কইরা দিল এই দেশে। হায়! ছবি : বিডিনিউজ থেকে মাইরা দিছি। ছবিতে দৃকের কর্ণধার শহীদুল আলমকে পুলিশ পরিবেষ্টিত অবস্থায় দেখা যাইতেছে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।