ছেলেবেলায় বাবা-মা-ভাই-বোনের পর প্রথম যে মানুষটা আপন হয় তার নাম বন্ধু। হাসি-কান্না, আনন্দ-কষ্ট সব কিছুর ভাগিদার সে। একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া, পুকুরে গোসল, কার্টুন দেখা, চকলেট-আইসক্রিম ভাগ করে খাওয়া, ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে গল্পের বই পড়া, নিষিদ্ধ জিনিসের খোঁজে অভিযান। আরও কত কি! এভাবেই সকাল-গড়িয়ে সন্ধ্যা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে ওঠে মানুষ।
বাড়ে বন্ধুর সংখ্যা। কেউ ঝরে যায়, আবার নতুন কেউ যোগ দেয়। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে হাইস্কুল, কলেজ, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর হঠাৎ করেই একদিন জীবনের তাগিদেই পেশাজীবী হয়ে ওঠা। এই চড়াই-উৎরাইয়ের মাঝে সব বন্ধুই হয়তো কাছের হয় না।
তবে কেউ কেউ হয়ে ওঠে একান্ত আপন। বন্ধু শব্দটা উচ্চারণ করলেই ভেসে ওঠে তার মুখ। যে কোনো বিষয়ে পরামর্শ নিতে, শেয়ার করতে সবার আগে তার কথা মনে পড়ে। মান-অভিমান তাও তারই সঙ্গে।
আমারও এমন একজন বন্ধু ছিল।
তবে কখনও বলা হয়ে ওঠেনি আমি ওকে খুব পছন্দ করি। আমরা একসঙ্গে প্রায় চার বছর কাজ করেছি। তারপর ও ওর স্বপ্নের চাকরি নিরয়ে চলে গেলো আরেক শহরে। আমি জানতাম ওর চাকরিটা হয়েই যাবে। সে যোগ্যতা ওর আছে।
তাই মনে মনে প্রস্তুতই ছিলাম কষ্ট যাতে না পাই। কিন্তু তারপরও ও যখন চূড়ান্ত খবরটা জানালো হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম বুকটা ফাকা হয়ে যাচ্ছে। আমার গলা ধরে আসছে। চোখ ভিজে ওঠছে। কেমন যেন একটা তীব্র কষ্ট ভেতরে মোচড় দিয়ে ওঠলো।
খুব সাবধানে চলাফেরা করছি, যাতে করে ওকে নিয়ে কোনো আলাপ করতে না হয়। হয়তো চোখের পানি ধরে রাখতে পারব না।
কাজের সূত্রে ওর সঙ্গে আমার হঠাৎ করেই পরিচয়। তারপর একটু একটু করে ঘনিষ্টতা। আস্তে আস্তে ও আমার পারিবারিক বন্ধু হয়ে গেল।
বাসায় কখনও ভালো কিছু রান্না হলেই ওর কথা মনে পড়তো। কারণ বিয়ে শাদি করলেও ও তখনও মেসে থাকত। কখনও ডাকও দিতাম। বিশেস করে গরুর মাংস রান্না হলে। ও বাড়ি গেলে বলতাম আমার জন্য পিঠা নিয়ে আসবি।
এবং প্রতিবারই বাড়ি থেকে ফিরে াফিসে এসে ও আমার কানে বলত পিঠা আছে। বাসায় যাওয়ার সময় নিয়ে যাস। মাঝে ও আর আমি মিলে চাকরি পাল্টালাম। নতুন প্রতিষ্ঠানে সেভাবে কাজ শুরু হয়নি। তাই অফুরন্ত অবসর।
দিন-রাত ঘুরে বেড়ানো। মঞ্চে গিয়ে নাটক দেখা, হলে গিয়ে সিনেমা দেখা, বইয়ের খোঁজে আজিজ মার্কেটে যাওয়া, চিকেন ফ্রাইড খেতে বসুন্ধরার আট তলায় যাওয়া, বিভিন্ন কলিগের বাসায় দাওয়াত খেয়ে বেড়ানো, আর আড্ডা। বিরামহীন আড্ডা। কখন দর্শন, কখনও রাজনীতি, কখন অর্থনীতি, চলচ্চিত্র, নাটক, সাহিত্য_ বিষয়ের কোনো অভাব নেই। মাঝে আমি আর আামকার বউ একদিন হুট করে ওর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হাজির।
আমরা ছিলামও কয়েকদিন। ওদের বাড়ির লোকজনের সেকি আতিথিয়েতা। গত চারটা বছর আমরা কি দারুণই না পার করেছি। এক নিমিষে আজ সব স্মৃতি হয়ে গেছে। ওকে হারিয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো সত্যিকার অর্থে বন্ধু হারানোর কষ্টটা টের পেলাম।
একবার বিয়ের আগে আমার বউয়ের সঙ্্গে খুব ঝগড়া হয়েছিল। সম্পর্ক যায় যায় অবস্থা। তখন ঠিক এরকম কষ্ট হয়েছিল।
অনেকদিন পর সেই রকম কষ্ট হচ্ছে আজ। খুব নিসংঙ্গ লাগছে।
আচ্ছা দোস্ত তোরও কি কষ্ট হচ্ছে। তোরও কি আমার কথা মনে পড়ছে? জানি, লেখাটা তোর চোখে না পড়ার সম্ভবাবনাই বেশি। তবে যদি পড়ে আমাকে কোনো উত্তর দিস না। আমি সহ্য কতরতে পারবো না।
ভালো থাকিস।
অনেক ভালো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।