আমি মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে ভালবাসি ।
সীমান্ত সুরক্ষার কথা বলে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে মিয়ানমার সামরিক জান্তা বাংলাদেশের টেকনাফের নাফ সীমান্ত ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের দেড়শ' গজের মধ্যে কাটা তারের বেড়া নির্মাণ করার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের দলে দলে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ আগ্রহী হয়ে ওঠে। সেজন্যে তাদের উপর চালানো হচ্ছে অমানবিক সব নির্যাতন। ফলে তারা অন্তত সামরিক জান্তার নির্যাতন থেকে রেহাই পেতেই বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।
তবে যারা পালিয়ে আসাদের কাছ থেকেই কয়েকটি চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতি রোহিঙ্গা থেকে বাংলাদেশী মূল্যের ২০/৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। আবার বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে বেড়েই চলেছে চোরাচালান। প্রতিদিনই কোন না কোন সময় সীমান্ত টহলে আসেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। পিলখানা ট্র্যাজেডির পর থেকে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে বিডিআরের টহল। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪ নং সীমান্ত পিলারের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রোহিঙ্গারা।
অবশ্য বিডিআর টহল ঝিমিয়ে পড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু খাল সীমান্তের অন্তত দেড়শ' গজের মধ্যেই রয়েছে নাসাকার ঘাঁটি। আর খালের পাশ ঘেষেই একটি আম গাছের নিচে লাল চেয়ার নিয়ে বসে আছে বার্মার তুমব্রু এলাকার মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে আলিম উল্লাহ (৩০)। তুমব্রু খালের পাড়ের (সীমানা ঘেঁষে) অধিবাসী সৈয়দ নুর জানান, বার্মার আরাকান রাজ্যে বসবাসরত মুসলমান (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশী টাকা মূল্যের ২০/৫০ টাকা আদায় করেন আলিম উল্লাহ। ঘুমধুমের জলপাইতলী, বাইশ ফাঁড়ি ও তুমব্রু সীমান্ত দিয়েই রোহিঙ্গারা বেশি প্রবেশ করে থাকে।
তুমব্রু সীমান্ত ফাঁড়ির মাত্র তিনশ' গজ দূরত্বে বাংলাদেশ থেকে দুই ব্যক্তি বস্তায় করে মিয়ানমারে সার পাচার করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় বিডিআরের কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদের দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি সার পাচারের কথা শুনতেই নারাজ। তিনি বলেন, এটি অবিশ্বাস্য। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী জানান, প্রায় সময়ই এভাবে সার সহ বিভিন্ন সামগ্রী পাচার হয়ে থাকে। আর সীমান্তের ওপার থেকে আসে আফিম হিরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য এবং প্রবেশ করে থাকে রোহিঙ্গারা।
তবে মাঝে মধ্যে প্রবেশের সময় হাতে নাতে আটক হলে রোহিঙ্গাদের প্যুশব্যাক করে থাকেন বিডিআর।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাইক্ষংছড়ি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও ঘুমধুম এলাকার বাসিন্দা মাওলানা নুরুল আফসার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করে এ প্রতিবেককে বলেন, নাসাকা আরাকান রোজ্যের মুসলমানদের মাঝে আতংক সৃষ্টি করার মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করছে। ফলে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা দলে দলে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। আগামীতে আরো ব্যাপক হারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করে বলেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধের জন্য বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। আরো অনেক বিওপি স্থাপন করা দরকার।
এদিকে মিয়ানমারের কাঁটা তারের বেড়া নির্মাণকে করে কেন্দ্র সীমান্ত পরিস্থিতি ক্রমশঃ উত্তপ্ত হচ্ছে। মিয়ানমার সামরিক জান্তা সে দেশের সেনাবাহিনীর বিশাল দল সীমান্তের কাছাকাছি এনে জড়ো করেছে। সীমান্তের একটি সূত্র জানায়, মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতিসংঘে আপত্তি জানানোর ঘোষণা দেয়ায় আপত্তি জানানোর আগেই তারা কাঁটা তারের বেড়া দেয়ার কাজ সমাপ্ত করতে শ্রমিক সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। আর কাজের তদারকি বাড়িয়েছে নাসাকা। জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর আরাকানের মংডু জেলার কোয়ানথিপিন ইউনিয়নের নেনতাডং এলাকায় অবস্থিত নাসাকা বাহিনীর ৩ নম্বর সেক্টরে ৫ হাজার সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
গত পরশু সেখানে নতুন করে আরও ২ হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই মায়ানমারের মিলিটারি কমান্ডারের নেতৃত্বে বিশাল একটি দল পুরো বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শন করেছে। প্রতিদিনই নাসাকা বাহিনীর পাশাপাশি সেদেশের সেনা সদস্যরা সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কার্যক্রম তদারকি করছে। কাঁটা তারের বেড়া দেয়ার কাজে জলপাইতলী সীমান্তে নিয়োজিত এক শ্রমিক সৈয়দ আলমের সাথে কৌশলে আলাপকালে সে জানায়, নাসাকা বাহিনী খুব কম সময়ের মধ্য কাঁটা তারের বেড়া দেয়ার কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার ও শ্রমিকদের ওপর চাপ দিচ্ছে। অপরদিকে বাংলাদেশ রাইফেল্স বিডিআরের চট্টগ্রাম সেক্টরের প্রধান কর্নেল দিদারুল আলম ঘুমধুমের ৩৪ নং সীমান্ত পিলার এলাকা পরিদর্শন করে বিডিআরকে সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে তুমব্রু বিডিআর ক্যাম্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশ অনুযায়ী বিড়িআর প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান, ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।