এক হবু মা এসেছেন হাসপাতালে, প্রথমবারের মত মা হতে চলেছেন। আমি তার কাগজপত্র দেখলাম, যমজ বাচ্চার মা হতে চলেছেন। তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখার পর তিনি কিছু সমস্যার কথা বললেন। শুনে বুঝলাম তার ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে। কাগজপত্র আবার দেখতে গিয়ে দেখলাম ভদ্রমহিলাকে আগে যিনি দেখেছেন তিনি একটা ভালো অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছেন।
বললাম, এত ভালো ওষুধ খেয়েও আপনার সমস্যা গেল না? তখন মহিলা একটু হেসে বললেন, আপা আপনার কাছে তো লুকায়া লাভ নাই, আমি আসলে ওষুধ খাইনাই। অবাক লাগল, কেন খাননি বলেন তো? মহিলা তখন বললেন, আপা কি আর বলব দুঃখের কথা, আলট্রাসনো কইরা যখন জানাইলো যে আমার দুইটা বাচ্চাই মেয়ে, তখন আমার রাগ হইছে, ভাবছি যে আর ওষুধ খাবই না। মেজাজটা মুহূর্তে খারাপ হয়ে গেল। বললাম, তা এখন আমার কাছে কেন আসলেন তাহলে। বললেন, সমস্যা তো খালি বাড়তেছে, সহ্য করতে না পাইরা আসছি।
রাগ সামলে নিয়ে তাকে আগের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খেতে বললাম। আর বললাম, দয়া করে বাসায় ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করবেন না, কারণ আপনার একটা বাচ্চা উল্টা হয়ে আছে। মনে হয়না আমার কথায় বিশেষ একটা পাত্তা দিল।
অনেকেই মনে করেন যে প্রথম বাচ্চা ছেলে না মেয়ে সেটা জানানোটা কোন সমস্যা না, কিন্তু আমার মতে না জানানোই ভালো, অন্তত গ্রামাঞ্চলে, কারণ এখানে মেয়ে বাচ্চা হবে শুনলে মা নিজেই নিজের যত্ন নেয়া কমিয়ে দেয়, নিয়মিত চেক-আপ করানো বন্ধ করে দেয়, বাড়ীর লোকজন ডেলিভারী করানোর জন্য হাসপাতালে নেয়া জরুরী মনে করে না, যার ফলাফল প্রায় ক্ষেত্রেই খারাপ হয়, মা-বাচ্চা দুজনের জন্যই।
অনেক সময় যিনি আলট্রাসনোগ্রাম করেন তিনি জানান না বাচ্চা ছেলে না মেয়ে, শুধু একটা চিহ্ন দিয়ে রাখেন ছেলে বা মেয়ের যাতে অন্য ডাক্তাররা দেখে বুঝতে পারেন।
আমার কাছে এমন অনেক আসে শুধু তাদের আলট্রাসনোর রিপোর্ট দেখাতে, জিজ্ঞেস করে, দেখেন তো আপা ছেলে না মেয়ে। আমি চিহ্নটা দেখি, তারপর বলি, এখানে দেয়া নাই ছেলে না মেয়ে হবে। কয়েকজন আবার অতি চালাক, বলে, আপা দেয়ার তো কথা, সবার তো দেয় শুনি। আমিও কিছু জ্ঞান দিয়ে দিই, সবসময় আসলে ছেলে না মেয়ে বোঝা যায়না, বাচ্চার পজিশনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তারা হতাশ হয়, অথবা মনে করে আমি ডাক্তার হিসেবে সুবিধার না, তাই এগুলো বুঝি না।
যাই মনে করুক এই মিথ্যাটুকু বলতে আমার বাধে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।