জ্বলে উঠার অপেক্ষায় নিভু নিভু প্রদীপ।
একটা সময় ছিলো বন্ধুদের খুব খবরাখবর নেওয়া হতো, সপ্তাহখানেক উধাও হয়ে গেলে ওরা অভিমান করতো। ইদানিং মাস দুমাস উধাও হয়ে গেলেও ওরা অভিমান করে না। সবাই সবার জীবন গোছাতেই ব্যস্ত কিনা, কারো কোন অভিযোগ নেই। তারপরও হঠাৎ হঠাৎ থমকে যাওয়া সময়ে ইচ্ছা বা অনিচ্ছাতে বন্ধুদের সাথে স্কুল-কলেজের সেসব কথা মনে পড়ে যায়, ঠিক তখনি মনে হয়; না, এখনো রোবোট হয়ে যায় নি, অনুভূতির কিছুটা হলেও বাকি আছে।
রাতে পড়ার পাঠ চুকিয়ে বিছানায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়ে অনেকক্ষণ এপিঠ ওপিঠ গড়াগড়ি করলাম, ঘুম আসছিলো না। ফোন দিলাম তানিয়াকে, কলেজে থাকতে যার সাথে আমি বোধহয় হাতেগোণা দুএকবার কথা বলেছিলাম। কলেজ পেরিয়ে কেন জানি সবাই আপন হয়ে যায়, এমনকি যার নামটা পর্যন্ত কোনদিন জানা হয় নি, হঠাৎ কোথাও দেখা হয়ে গেলে মনে হয় তাকে আমি অনেকদিনধরে চিনি।
তানিয়ার সাথে শেষ কথা হয়েছিলো মাসখানেক আগে বোধহয়। ফোন দিতেই, কিরে দোস্ত তুই তো একদম উধাও হয়ে গেছিস, খবর কি তোর?
এইতো দোস্ত, ক্লাস- কাজ সব কিছু নিয়ে দৌড়ের উপর যতটুকু ভালো থাকা যায়, আছি।
তোর খবর কি? সুজন আরাফাত কারো সাথে কথা হয়?
ওর 'না' বোধক উত্তর শুনে আমি অবাক হই না, ঐ যে বললাম সবাই ব্যস্ত!
আচ্ছা, তুই সুজনকে কল দে, কনফারেন্সে কথা বলি।
দোস্ত এটা কিভাবে করতে হয় আমি তো জানি না।
আচ্ছা, তুই ওয়েট কর্, আমি সুজনকে ফোন দিয়ে দেখি!
সুজনকে ফোনে পেতে বেশ সময় লাগলো দেখে আমি জিগেস করি; ওই শালা কল রিসিভ করতেছস না ক্যান? তুই এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছিস ব্যবসা তো লাটে উঠবে! আমার আর ওর বাবা দুজনই ব্যবসায়ি, দুজনের মধ্যে দারুণ একটা মিল ও আছে। আমরা দুজন এসব নিয়ে অনেক হাসাহাসি করতাম। ইন্টার পাস করে আমি যখন বিদেশে পাড়ি দিবো, তার ও আসার কথা ছিলো, সে আমার মতো ওর বাবার সাথে অভিমান করে নি।
বন্ধুর সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিলো, বাবার ব্যবসায়ের হাল ধরে এখন পুরোপুরি ব্যবসায়ি সে, আমার মতো হিসেব মেলাতে ব্যস্ত হতে হচ্ছে না।
তো ওকে বলি; দোস্ত তানিয়া, আরাফাত, দেলোয়ার সবাইরে কল দে, কনফারেন্সে কথা বলি।
আচ্ছা, ওয়েট কর্।
একটু পরে তানিয়ার কথা শুনতে পাচ্ছি। ওদের দুজনের পরস্পরের কথা শুনে বুঝতে পেলাম দুজনের মধ্যে অনেকদিন কথা হয় না।
সুজন জিগেস করে; তানিয়া তুই কই রে?
দোস্ত, আমি তো সিলেটে।
কবে গেছিস?
বেশ কিছুদিন ধরেই তো আছি, একটা প্রাইভেট ইউনিতে মাষ্টারি করি।
আমি চান্স পেয়ে বলি; তোরা একই দেশে থাকস অথচ খবরাখবর রাখস না, আমি পরবাসি তোদের খবর নিচ্ছি। (চামে)
তানিয়া বলে; সুজন দেখছিস ইমন কতো ভালো দোস্ত। (সেটা আমি সবসময়ই ছিলাম...)
হঠাৎ দেখি সুজন উধাও, তানিয়া আর আমি চিল্লাই, ওরে সুজইন্যা তুই কই?
তানিয়া বলে; দোস্ত ওর বউ বোধহয় ক্ষেপছে!
আরে, আমি তো ভুলেই গেছি ঐ ব্যাটা আর জীবিত নাই।
হ্যালো হ্যালো বলে আরেকজন হাজির। সাকি।
তানিয়া বলে ; সাকি তুই? কি খবর তোর?
এইতো ভালো তোর খবর কি?
আচ্ছা লাইনে আরেকজন আছে, কে বলতো!
কে? আরাফাত?
আরে না, বিদেশি মানুষ।
ও ইমন?
হুমম।
তানিয়া বলে; ইমইন্যা তুই কথা কস না ক্যান?
হ্যালো, সাকি কেমন আছিস?
ভালো।
তোর খবর কি?
এদিকে সুজন আবার উধাও!
সে খবর দেয়; দেলোয়ার, আরাফাত ঘুমাচ্ছে দোস্তরা।
সে কল করেই যাচ্ছে....দেখা যাক সফল হয় কিনা!
এইতো, দেলোয়ারকে পাওয়া গেলো।
তারপর নিলা....
আমি জিগেস করি; কোন নিলারে দোস্ত?
সুজন বলে; সায়েন্সের নিলা।
ওহ...
অনেকদিন পরে একসাথে হলে যা হয় আর কি! খানিকের জন্য ক্যান্ট পাবলিক কলেজের সেসব দিনে ফিরে গেলাম। মুঠোফোনে কথা বলছি মনেই হচ্ছে না, এতো ব্যস্ততার মধ্যেও একসাথে কথা বলতে পেরে কতো লাইভলি সবাই।
ইশ! সময়টাকে যদি আটকে দিতে পারতাম। বার্গম্যানের একটা কথা আছে, 'হ্যাপিনেস ইজ গুড হেলথ এন্ড এ ব্যাড মেমোরি'।
ঠিক! আজকের কনফারেন্স বাতচিত সামনের কিছুদিন ব্যাড মেমোরি হয়েই থাকবে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।