অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি
মানুষ জাগলে রাষ্ট্র তার চরিত্র বদলায়, বদলাতে বাধ্য হয়
মাহবুবুর রহমান জালাল ভাইর একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি। মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত বিশ্বকোষ নামেই তার পরিচয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক যে কোনো পোস্টে আমি তার সঙ্গে আলোচনা করি। কোথাও ঠেকে গেলে তথ্য, রেফারেন্স দিয়ে আমাকে সাহায্য করেন। আমার লেখা প্রতিটি পোস্ট পড়েন।
বুদ্ধিজীবিদের ঘাতক আশরাফুজ্জামান যখন নিউইয়র্ক গেল, ডালাস থেকে সেখানে উড়ে গেলেন জালাল ভাই। খুঁজে বের করলেন তার ঠিকানা। এরপর সেই মহল্লায় শুরু করলেন প্রচারণা। একা, সংসার বউ বাচ্চা ফেলে গোটা একটা মাস এই কাজ চালিয়ে গেলেন। মানুষ দেখে একটা লোক গরমে, ঠান্ডায় মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে।
হাতে প্ল্যাকার্ড- ডু ইউ ওয়ান্ট আ ওয়ার ক্রিমিনাল ইন ইউর নেইবারহুড? এটুকুতে আসলে বলা হয় না কিছুই, আমি শুধু তার চেতনার উত্তাপে ঋদ্ধ হই। নিজেকে জাগাই- লড়তে হবে যখন জানি, তখন লড়াইয়ে নেমে পড়াই ভালো। যা আছে তাই নিয়েই। একা হলে একাই।
আজ সকালে আমরা কজন বসেছিলাম যুদ্ধপরাধ বিষয়ে সরকার মনোনীত লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অফিসার হোসেন তৌফিক ইমামের সঙ্গে।
বিচার কাঠামো, এর ধরণ, সরকার ও আইন মন্ত্রনালয়ের সমন্বয় ইত্যাদ তার দায়িত্বের আওতায়। মাসুদা ভাট্টি, আরিফ জেবতিক, রাসেল এবং চৌদ্দই ডিসেম্বরের দলের হয়ে অরণ্য আনাম, মনির হাসান ও নায়েফ। আধ ঘণ্টার এই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে হতাশ হওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে। আমি বলবো অধৈর্য্য হওয়ার। সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কবে শুরু করছে-এই প্রশ্নটা কোনো উত্তর ক্ষমতাসীন মহলের তরফে আসেনি।
অনেকেই ইতিমধ্যে সিদ্ধান্তে এসে গেছেন এবং জনে জনে প্রচারও করছেন যে সরকার আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে মোটেও আন্তরিক নয়, এই নির্বাচনী ওয়াদা ছিলো স্রেফ ভোটে জেতার জন্য, যুদ্ধাপরাধ ইস্যু আওয়ামী লীগের রাজনীতির গুটি মাত্র। এই মতাবলম্বীদের উল্লসিত হওয়ার যথেষ্টই উপাদান আছে এইচটি ইমামের কথায়। সংক্ষেপে তার বক্তব্য হচ্ছে সরকার এই মুহূর্তে প্রায়োরিটি দিচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাকে। সেখানেই তাবৎ আইনজীবিরা সংশ্লিষ্ঠ। এবং গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটাকেই তারা নিচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের টেস্ট কেস হিসেবে।
কারণ দুই মামলাতেই দেশী ও বিদেশী চাপের উৎসমুখ একই। গত রাতে ব্যারিস্টার তাপসের ওপর বোমা হামলা এক ধরণের সতর্ক সংকেতও।
তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ নেই- সরকারী বক্তব্যটা আমাদেরও জানালেন জনাব ইমাম। পাশাপাশি পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও জামাতের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া রোহিঙ্গা জঙ্গীদের তৎপরতা নিয়ে তিনি উৎকন্ঠিত। তারপরও ট্রাইবুনাল ঘোষণা করতে দেরী হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন অবকাঠামোগত সমস্যাকে।
এর পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠনগুলোর পারস্পরিক বিভেদও একটা বিব্রতকর ব্যাপার।
আমি তুলেছিলাম ব্রিটেনে আত্মগোপনকারী ও এখন সেখানে নাগরিক বনে যাওয়া বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের অপারেশনাল চীফ চৌধুরী মঈনউদ্দিন প্রসঙ্গ। সম্প্রতি গার্ডিয়ান পত্রিকা ও দেলোয়ার হুসেনের ঘটনায় তার আস্ফালন। তাকে বললাম- এটাও হতে পারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের টেস্ট কেস। ব্রিটিশ সরকার তাদের সংবিধান মতে সেদেশে অব্স্থানকারী যে কোনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে তার বিভ্রান্তিটুকু কাটিয়েই জানালাম মঈনউদ্দিন, তাহের ও ফরিদকে নিয়ে ১৯৯৫ সালেই আন্দোলন করেছে সেখানকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বাঙালীরা। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এরপর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে দিয়ে তদন্ত করায়। কিন্তু এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের নিরাসক্তিতে ঘটনাটা ধামাচাপা পড়ে। এখন এই মুহূর্তে আবারও সেটা শুরু করা যায়। সরকার যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করতে পারে।
কিংবা সেখানকার বাঙালীরা আন্দোলন করে ব্রিটেনকে আবারও মামলাটি শুরু করতে বাধ্য করতে পারে। এই দফা বাংলাদেশ সরকারের পিছিয়ে যাওয়ার উপায় থাকবে না। মামলাটি হবে আন্তর্জাতিকভাবে হাইলাইটেড। এ ব্যাপারে কোনো অমত নেই এইচটি ইমামের। মূল সমস্যাটা জানালেন অন্যখানে।
জাতিসংঘ নাকি এখনও আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যাকে ‘গণহত্যা’ বলে স্বীকৃতি দেয়নি! তবে এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে জানালেন তিনি।
আমাদের আরেকটা পরিচয় আমরা ব্লগার। এটা জেনে এইচটি ইমাম আগ্রহী হলেন। ব্লগে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে প্রচারণায় আমাদের সাহায্য চাইলেন। এটাতো আমরা অনেকদিন ধরেই করে আসছি! সামহোয়ার আর আমার ব্লগের যৌথ উদ্যোগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছিলো তা জানানো হয়েছে তাকে।
শিগগিরই তা প্রধানমন্ত্রীকে হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি আমাদের সংগ্রহে থাকা তথ্য-উপাত্ত-দলিল নিয়ে একটি আর্কাইভ করার জন্য আইন মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে আমাদের একটি বৈঠক করিয়ে দেবেন। এসব বিষয়ে আগামী সপ্তাহে আমরা এই কজন আবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার সঙ্গে বসতে যাচ্ছি। এই ফাকে আমি কল্পনা করছি লন্ডনের বাঙালীরা আবার মিছিলে নেমেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সেখানে আন্দোলন হচ্ছে। ব্রিটিশ সরকার শুরু করলে, বাংলাদেশ সরকারও সময়ক্ষেপনটা চালিয়ে যেতে পারবে না।
জালাল ভাইর মতো কাউকে সেখানে খুব দরকার ছিলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।