আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খাদ্য নিরাপত্তার ঝুকিতে বাংলাদেশ..........



বেশ কিছু দিন ধরে দেশে চালের দাম বৃদ্ধির প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং দেশে উৎপাদন সংকটের কারনে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিতে চাইছে। অন্যদিকে সরকার বাস্তব অবস্থাকে আমলে না নিয়ে সংকটকে সাময়িক বলে পার পাওয়ার চেষ্ঠা করছে। সরকার বলছে চালের যোগানের কোন ঘাটতি নেই তাদের হাতে পর্যাপ্ত চাল মজুদ আছে। কিন্তু সরকারের হাতে আছে মোট চাহিদার মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশকে প্রতি বছর খাদ্য নিরাপত্তার অংশ হিসাবে ৩০ থেকে ৫০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানী করতে হয়। বন্যা খড়া প্রভৃতি প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে এ বছর দেশে চালের উৎপাদন ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আফ্রিকা, এশিয়াসহ পৃথিবীর সব জায়গায় বন্যা খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে এবার খাদ্যশস্য উৎপাদন মারাতœক ব্যাহত হয়েছে। বিশ্ব বাজারে চালের মূল্যের উর্ধ্বমুখীতার জন্য চাল রপ্তানীকারক দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, সহ অন্যান্য দেশ গুলি চাল রপ্তানী বন্ধ করে দিয়েছে। পর্যাপ্ত মজুদ থাকা স্বত্তেও দেশ গুলি মূল্য বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবেলার জন্য অতিরিক্ত মজুদ গড়ে তুলছে।

সেেেত্র বাংলাদেশের ভুমিকা ভিন্ন। বাংলাদেশ সরকার বৈষয়িক এবং দেশের খাদ্য উৎপাদন বিষয়কে আমলে না নিয়ে সংকটকে সাময়িক হিসাবে আখায়িত করছে। বর্তমানে বিশ্ব বাজারে চালের দাম টন প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার অন্যদিকে বাংলাদেশে দাম মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ ডলার। এমতাবস্থায় যদি দেশে কোন রকম খাদ্য সংকট দেখা দেয় তাহলে সরকারকে বিশ্ব বাজার হতে চড়া দামে চাল আমদানী করতে হবে। এছাড়া দেশের ব্যবসায়ীরা যেকোন সময়ে বিশ্ব বাজারের দোহাই দিয়ে চালের দাম বৃদ্ধি করতে পারে।

সেেেত্র সরকারের হাতে যে সব অস্ত্র আছে তা প্রয়োগ করে চিনির বাজারের মত চালের বাজারও নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না। বোরো ধানের আবাদ ভাল হওয়ায় কৃষক এবং আরতদারদের কাছে কিছু পরিমান ধান রয়েছে পাশাপাশি চাল রপ্তানী বন্ধ থাকায় দেশের চালের দাম এখনও আন্তর্জাতিক বাজার হতে কম রয়েছে। এদিকে দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় আমনের আবাদকাজ সময়ের পরে শুরু হয়েছে। অন্যদিকে শীতকাল ঘনিয়ে আসছে ঠিকমত রোদ না পাওয়া গেলে আমনের উৎপাদন ল্যমাত্রা অর্জিত হবে না। আমন ধানের ফলন কম হলে দেশে ধানের চাহিদা অনুযায়ী যোগান থাকবে না সেেেত্র চালের দাম বেড়ে যাবে।

অন্যদিকে জাতিসংঘ এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ২০০৭ সালের খাদ্য সংকটের পর হতে বাংলাদেশকে সরাসরি খাদ্য সাহায্য প্রদান করে আসছিল কিন্তু এবার অর্থনৈতিক সংকটের কারনে বিনামূল্যে খাদ্য প্রদান কর্মসূচী ৬০ শতাংশ কমিয়ে এনেছে। পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় খাদ্য অপ্রতুলতা এবং দাম বৃদ্ধির কারনে সরাসরি খাদ্য না দিয়ে অর্থ দেয়ার পপাতি সংস্থা গুলি। দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন কম এবং বিশ্ব বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধির কারনে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে বিশেজ্ঞগন মনে করছেন। সম্ভাব্য খাদ্য সংকট এবং মূল্য বৃদ্ধির হাত থেকে রা পাওয়ার জন্য ব্রাক এর নির্বাহী পরিচালক ড. মাহবুব হোসেন বলেন “ বিশ্ব বাজারে এখন গমের দাম দেশের গমের দাম হতে অপোকৃত কম। চালের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে করে অদুর ভবিষ্যতে গমের দামও বৃদ্ধি পাবে।

তাই সরকারের উচিৎ অনতিবিলম্বে গম ক্রয় করে মজুদ করা। যখন দেশে চালের দাম বৃদ্ধি পাবে সেই সময়ে দারিদ্র জনগনের মাঝে চালের পাশাপাশি গম বিতরনের মাধ্যমে খাদ্য সংকটের বেশ খানিকটা সমাধান করা সম্ভব। ” তিনি আরো বলেন বর্তমানে বিশ্ব বাজারে সারের দাম দেশিয় বাজার হতে অনেক কম। অন্যদিকে কাঁচামালের সংকটের কারনে দেশে সারের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কম হচ্ছে । এমতবস্থায় সরকারের উচিৎ বেশি করে সার ক্রয় করে মজুদ করে রাখা এবং মৌসুমের সময় কৃষকেদের কাছে পর্যাপ্ত সার পৌছানোর ব্যবস্থা করা যাতে করে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

বর্তমানে বাংলাদেশে একর প্রতি ধানের উৎপাদন মাত্র দশমিক ৭ মেট্রিক টন পান্তরে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে এই হার ২ মেট্রিক টন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবকে ধরে নিয়েই আমাদেরকে আরো বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। বোরো ধানের উৎপাদন বেশি হলেও কৃষকরা ঠিকমত দাম না পাওয়ার কারনে ধান উৎপাদনে কিছুটা ভাটা পরিলতি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হচ্ছে ধানের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে রাখা। পাশাপাশি সেচ, সার, বীজ প্রভৃতি সঠিক সময়ে কৃষকের কাছে পৌছাতে হবে।

ড. মাহবুব হোসেনও ধানের দাম বেশি রাখার পে কারন ধানের উৎপাদন বাড়াতে হলে কৃষকদের ধান চাষে উৎসাহীত করতে হবে এর জন্য প্রয়োজন প্রনোদণা প্যকেজ। ধানের দাম বৃদ্ধিই হতে পারে এই প্রনোদণা প্যাকেজ। শুধু ধানের দাম বৃদ্ধি নয় দাম বৃদ্ধির সরাসরি সুফল প্রান্তিক চাষীর কাছে পৌছায় তার ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান তিনি। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় ধানের দাম বৃদ্ধির সুফল ভোগ করে আরতদার, মজুদার ও মহাজনরা। এটা রোধ করার জন্য প্রয়োজন সরকারের সুষ্ঠ হস্তপে।

একদিকে চাল রপ্তানীকারক দেশ গুলি রপ্তানী বন্ধ করে দেয়ায় যে সংকট তৈরি হয়েছে তার সাথে যদি যোগ হয় উৎপাদনহানী তাহলে পরিস্থিতি জটিল হবে। বিশেষত অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে চিনির বাজারের মত চালের বাজারকেও অস্থিতিশীল করে তুলবে। ৩৯ বছর হল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ আজও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে নাই। এর জন্য বিগত সরকার, এনজিও এবং দাতাসংস্থা গুলির চরম ব্যার্থতার প্রমান পাওয়া যায়। মঙ্গা প্রবন এলাকার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পারি মঙ্গা শুরু হলে বিভিন্ন সংস্থা ও সরকার খাদ্য সাহায্য প্রদান করে থাকে কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কোন পদপে গ্রহন কর হয় না।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা হতে দেখা যায় যে মঙ্গা কবলিত চারটি জেলা- কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারীতে তিন লাখ ৩৪ হাজার ২৬৫টি পরিবার মৌসুমী বেকার থাকে। এ এলাকার এক লাখ ৮৮ হাজার ১৮১ পরিবারের খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৫টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ এবং আট হাজার ৯৩টি পরিবার নদী ভাঙ্গনে তিগ্রস্ত। এসব পরিবারের জন্য সরকারে উপযুক্ত কোন পুনর্বাসন কর্মসূচি নাই। যার ফলে প্রতিবছরই মঙ্গা নামক ভয়াবহ পরিস্থিতির স্বীকার হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ।

তিনি আরো বলেন মঙ্গা কবলিত এলাকায় সরকার অস্থায়ী ভিত্তিতে পরিচালিত দুস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য (ভিজিএফ) কর্মসূচিতে ল্যমাত্রার চেয়ে ২৪০ শতাংশ বেশি বিনিয়োগ করছে। অথচ দুস্থ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচিতে মাত্র ৪৫ শতাংশ বিনিয়োগ করছে। এটা সরকারি কর্মসূচির একটি বৈষম্য। " এসব কর্মসূচী প্রমান করে মঙ্গা এবং দারিদ্রতা দুর করার যথেষ্ট সদ্বিচ্ছার অভাব রয়েছে সরকার গুলির। সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবেলা করতে চাইলে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা পূর্বক সরকারের উচিৎ অনতিবিলম্বে খাদ্য মজুদ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়া।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.