আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শোনা কথা-৩



শোনা কথা-১ শোনা কথা-২ সৌদি আরবের আবহাওয়া খুব শুষ্ক। তাই বারবার গলা শুকিয়ে আসে। একেবারে গেদাকাল থেকেই আমি পানি খেতাম খুব বেশী। পানির ফিডার কিছুতেই মুখ থেকে বের করতে চাইতাম না। একটু বড় হওয়ার পর শিখলাম সফট ড্রিংকস আর জুস খাওয়া।

বড় বড় গাড়িতে করে জুস আর ড্রিংকস নিয়ে আসত। কয়েক ক্রেট দিয়ে যেত। সারাক্ষণই তিন বোন সেগুলো খেতে থাকতাম। আর পানি মানেই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, নইলে পিপাসা মিটত না। হাঁটতে শেখার পর নিজেই ফ্রিজ থেকে পানি নিয়ে খেতাম।

এমন কি রাতের বেলা পিপাসা লাগলেও কাউকে না ডেকে অন্ধকারেই নিজে নিজে খাট থেকে নেমে ফ্রিজের পানি বের করে খেয়ে নিতাম। বাংলায় প্রথম শব্দ কী বলেছি জানি না, প্রথম আরবী শব্দটা শিখেছিলাম "মিন", অর্থাৎ "কে"। অবশ্য আমি মিন বলতাম না। কলিং বেল বাজলে চিৎকার করে বলতাম, "মিইইইইইম"। প্রথম শব্দ বলছি, আসলে ওখানে এই একটাই আরবী শব্দ বলতাম।

বাংলাতেই সব কথা বলতাম, আমারতো বাড়ির মানুষ ছাড়া আর কারও সাথে কথা বলার দরকার হত না। ও আচ্ছা মনে পড়েছে (মানে কী শুনেছি সেটা মনে পড়েছে) বাংলা শব্দ কোনটা প্রথমে শিখেছিলাম। দুইটা শব্দ শিখেছিলাম একসাথে, এই দুটো দিয়েই মনের সমস্ত ভাব প্রকাশ করে দিতাম। শব্দ দুইটা হল, "দে" আর "নে"। ঠিক এভাবে বলতাম না।

বলতাম "দ্যা" আর "ন্যা"। কিছুদিন পর দেখলাম দুইটা শব্দের আসলে দরকার নেই, শুধু "দ্যা" বলেই সব কথা বোঝানো যায়। তাই "ন্যা" শব্দটা বলা বাদ দিলাম। পরে আস্তে আস্তে কথা শেখার পর কিভাবে জিকির তুলতাম সেটা আগের পর্বেই বলেছি। একবার বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম।

সেটা অবশ্য অনেক আগের একটা পোস্টে বলেছি। এখন আর লিখলাম না। আমাদের নিয়ে আব্বা-আম্মা একবার ওমরাহ করতে গেলেন। (এর আগে-পরেও গিয়েছেন)। কাবা শরীফে গিয়ে এত বড় জায়গা পেয়ে আমি মহানন্দে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকলাম।

সৌদিরা এক ধরণের সীমের বিচির মত খাবার খায়, যেটার নাম, 'ফুশফুশ' (জানিনা ঠিক মত বললাম কিনা)। তো কাবা শরীফের ভিতরেও সেটা অনেকে নিয়ে আসে, আর বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকে এগুলো। আমি দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে ব্যাপারটা দেখে মজা পেলাম, আর কুড়িয়ে কুড়িয়ে ফুশফুশ খেতে থাকলাম। এক সময় আব্বা আমাকে ধরে এনে বললেন, আসো আমার সাথে নামাজ পড়। আমি আব্বার পাশে দাঁড়িয়ে আব্বার দেখাদেখি নামাজ পড়ছি।

সেজদায় গিয়ে আর উঠি না, ওভাবেই লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছি। আব্বা নামাজ শেষ করে দেখেন আমি উপুর হয়ে শুয়ে শুয়ে ফুশফুশ খাচ্ছি, সেজদা দিতে গিয়ে ওটা চোখে পড়েছে, আর কি ছাড়ি? আমার যখন দুই বছর এক মাস বয়স, তখন আমার ছোট বোনের জন্ম। তখনও আমি মায়ের দুধ খাই। তবে ছোট বোনের জন্য কিছু অধিকার ছাড়তেই হল, খুশী মনেই ছাড়লাম। ছোট বোনকে যখন আম্মা খাওয়াতে থাকেন, তখন আমি গিয়ে বলি, বাবু তুমি খাও, আমি পিষণ (পিছন)।

বলে আম্মার পিছনে গিয়ে হাতের নিচ দিয়ে ঢুকে অন্যদিকে খেতে থাকি। এটা অবশ্য খুব বেশীদিন করতে হয়নি। কয়েক মাস পরই আম্মা আমাকে আর বড় বোনকে নানাবাড়ি রেখে গেছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।