ডুবোজ্বর
০১.
স্বাতী, কল্যাণীয়াসু,
তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলাম। আমার আনন্দ এই যে তুমিই প্রথম আমাকে চিনতে পেরেছিলে। অন্যরা পারে নি। তোমার মনে হয়েছিলো আমি এলোমেলো এবং আনমন। ইনফ্যাক্ট, এলোমেলো হওয়া ছাড়া কোনো যোগ্যতাই আমার নেই।
সূর্যখোলার মাঠে তোমার সাথে দেখা হয়েছিলো। আমাদের গ্রামে তোমার ব্যক্তিত্ব আমাকে অবাক করে দিয়েছে। অসামান্য।
ভিড়ের মধ্যে আমার ভয়ানক একা লাগছিলো। আর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো।
আমি হারিয়ে গেলাম, আমি হারিয়ে গেলাম...
তারপর তোমাকে দেখেছি দিঘির পাড়ে বসে আছো। চুল খোলা। মুখের একপাশে যেনো বা সবুজ মাঠ, আর মাঠের বুকে সূর্যোদয়, আমাদের পতাকার মতো।
তারপর তুমি হারিয়ে গেলে, তুমি হারিয়ে গেলে...
আমি তোমার নাম জানি না। মনে মনে তোমাকে স্বাতী অথবা অরুন্ধতী নামে ডাকি।
সমুদ্র আর পাহাড় তোমার বড় বেশি প্রিয় বলে আমি দ্বিখণ্ডিত হয়ে একদিন খুব ভোরবেলা সমুদ্র আর পাহাড় হয়ে গেলাম। আর অমর প্রতীক্ষায় দুইরকম হয়ে আছি চিরদিন। তুমি আসো নি একদিনও।
একদিন ভাবলাম তোমার কাছে একটা গান পাঠাই, হিমাংশু দত্তের গান, রাতের দেওলে জাগে বিরহী তারা, ওগো তন্দ্রাহারা...
চিঠিটা কি আমি লিখেছি? হতে পারে। আবার নাও হতে পারে।
আমাদের জলপাইবনে কয়েকটা পাতা লাল হয়েছে। ওরা কীসের সাক্ষী ভুলে গেছি বহুদিন। ওরা একটুখানি বাতাস ধরে রেখেছিলো মনে আছে? বাতাসের নাম নিঃশ্বাস। আমি বিকেলবেলা স্বপ্নকে হত্যা করে একটি কবিতা লিখেছি। কবিতার নাম দিই নি এখনো; কেউ এসে দিয়ে যাবে-- বসে আছি, বসে আছি, বসে আছি...
--একজন নির্ঝর।
০২.
পরস্বরে জেগে জেগে ঘুমঘরে ঝড়
রাতদিন ভুলে আমি খুঁজেছি অপর
আবেগ চিঠিকে উন্নত করে কিন্তু অন্যযেকোনো কিছুকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
দাদা, সময় মানুষের বিরুদ্ধে ছিলো। কিন্তু আরো সময় আছে লাঞ্চ এবং ডিনারের। মানুষ আমাকে হাওয়াই মিঠাই কিনে দিয়েছে। এই আমার শৈশব।
শৈশব কজন ফিরিয়ে দিতে পারে? হোক তা মুহূর্তের জন্যে।
সে আগে মধ্যে মধ্যে আসতো, গুটি গুটি পায়ে ভেঙে আসতো দরোজা। আমাদের কাঠের বাড়ি ছিলো; জানলার শাদা পর্দায় নকশা এঁকে চলে যেতো।
পরি নি। নি একসঙ্গেও লেখা যায়, আবার আলাদাও লেখা যায়।
আমার আলাদা করে লিখতে বেশ লাগে। সুতরাং দুঃখিত।
০৩.
রাখাল আর আমি তো ছিলাম ছিন্নদুপুর
আমার সীমাহীন শূন্যতা আকুল শ্রাবণ
চায়ের কাঁপে ভাসে আকাশেরা বহুদূর
রাখালের বাঁশি ছিলো সুরপোড়া কম্পন
প্রতিদিন লিখলে প্রেসরিলিজ হবে এইকথাটা পুরোপুরি ঠিক নয় এবং সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। রত্নাকর বাল্মিকী মুনি যদি রামায়ণ না লিখতেন। তবে নপুংসকের আখ্যানই লেখা হতো।
কেননা রাবণ শ্রেষ্ঠ।
কোমল অহঙ্কার? যে আগুন আলো দেয় কেবল তারও অহঙ্কার আছে
তা কোমল। যে আগুল সর্বভুক, তার অহঙ্কার কোমল নয়। কোমল অহঙ্কার মোমবাতির আগুনের ক্ষেত্রে।
উদ্ভিন্নসংবাহন কোনো শব্দ নয়, এটা একটা শব্দবন্ধ।
উদ্ভিন্ন-সংবাহন
এইভাবেও লেখা যাবে। কিন্তু উদ্ভিন্ন সংবাহন; এইভাবে লিখলে ভুল হবে। যেহেতু আমি কোনো চিহ্ন ব্যবহার করি নি, সেহেতু হাইফেন না দিয়ে একসাথে লিখেছি। উদ্ভিন্ন মানে অঙ্কুরিত আর সংবাহন মানে মৈথুন, উদ্ভিন্নসংবাহন। টুকরোপাথর জোড়া নালাগলে হাইফেন দিতে হয় তাই।
আমি পদ্যে মূলত অক্ষরভিন্ন কোনো চিহ্ন ব্যবহার করি না।
০৪.
ক্ষেতের ভিতর আলগা মাটি আর মাটির ভিতর বাতাস গতায়ত
ইঁদুরটি জমিয়ে রাখে মাসকলাই ফল দানাদার হাওয়াই মিঠাই
আমাদের বেড়ার ওধারেও ভাঙে মহিষের শিং শাদাদেহ ভোরে
শিংগার ওঙ্কারে প্রমাদ অসুখ নিধুয়া মোহের রূপে বেহাল ভাসি
জি দাদা, কেরু-- গরিবের আবে জমজম... ঝমঝম... জুমজুম ঝুমঝুম আহা ভৈরবী। দর্শনা চিনিকলে চুরি। কেরু এন্ড কোং। মল্টেড হুইস্কি।
দাদা বললেন, খাইছে! সুনীল যদি দেখে...
দাদা, সুনীলের বউ স্বাতী। তার বউয়ের নামটারে ভালোবাসি...
দীপঙ্করদা পায়ের সেলাই খুলতে থাকে। আর মাথা চুলকায়।
০৫.
পুনশ্চ: আমি অনেকদিন তোমাকে ভেবে যন্ত্রণায় লাল হয়ে গেছি। তারপর কালো।
এখন কালোরাত্রি হয়ে বিস্তারিত শূন্যতা। যুদ্ধ নেই আকাশে; তারপরও ব্ল্যাক আঊট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।