জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
তাকে খুব ভয় পেতাম। ভয় পাওয়ার মতোই বিশাল ছিল সে। তবে চেহারাটা ছিল খুবই মায়া মায়া।
স্বভাবে ছিল ভীষণ লোভী, আমার হাতে খাবার দেখলেই কেড়ে নিত। তাই দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে আগে খেয়াল করতাম আশেপাশে ও আছে কি না।
ও আশেপাশে নাই নিশ্চিত হয়েই দোকানে যেতাম। কত দিন এমন হয়েছে দেখে নিয়েছি ও আশেপাশে নাই, তারপর দোকানে গেছি। কিনেছি, বাবুল বিস্কুট কিংবা লাল সন্দেশ। ফেরার পথে কোত্থেকে ও এসে হাজির। তারপর যথারীতি আমার ওপর হামলা।
আমি ভয়ে বিস্কুট, সন্দেশ বা চকলেট ফেলে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে গেছি।
বাবার সঙ্গে তার ছিল খুব ভাব। দুপুর বেলা বাবা বাড়ি না ফিরলে ও খেত না। বাবা এই ব্যাপারটা খেয়াল করেছিলেন বলেই বলেই নিজ হাতে ওকে খাওয়াতেন। বাবাকে দেখলেই ও ভীষণ খুশি হত।
আনন্দে লাফালাফি করত। ছোটাছুটি করত বাড়ির এ মাথা থেকে ও মাথা।
বাবা মাঝে মাঝে ওকে ধরে গোছল করাতেন। গোছল ও পছন্দ করত না। কিন্তু বাবা গোছল করালে সামান্য গাইগুই ছাড়া তেমন বিরক্ত করত না।
আমার মনে আছে, বাবা মারা যাওয়ার পর ও খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তারপর একদিন কোথায় যেন চলে গেল। আমরা অনেক খুঁজেছিলাম ওকে। কিন্তু আর পাই নি। লোকমুখে শুনেছি, ওর মতো একটা কুকুর নাকি কোথায় মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
আমার বাবা ওর নাম রেখেছিলেন টাইগার। বাঘের মতো বড় ছিল বলেই ওর নাম বোধ হয় ছিল এটা। আর শরীরে ছিল বাঘের মতোই শক্তি। খুব দাপুটে ছিল। পাশাপাশি খুব আমুদে।
মজা করত আমাদের সাথে। কিন্তু কখনই কামড় দিত না।
আজ সকালে হাঁটতে বেরিয়ে ঠিক ওর মতো দেখতে একটা কুকুরের সাথে দেখা হয়ে গেল। এমন চমকে গিয়েছিলাম। অনেক অনেক দিন পর ওর কথা মনে পড়ে গেল।
এত দিনে নিশ্চয়ই ও মরে গেছে। কুকুররা তো ১২ বছরের বেশি নাকি বাঁচে না। আর এ ঘটনা তো প্রায় ২৫ বছর আগের। যতদিন আগেরই হোক, ওর কথা আমি ভুলি নি। মাঝে মাঝে কখনও কখনও আমুদে কোন কুকুর দেখলেই ওর কথা মনে পড়ে।
ও ছিল আমার বাল্য-সাথী। বাল্য-সাথীকে কি এত সহজে ভোলা যায় ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।