মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
পলাশী। একটা মাঠের নাম। মস্ত বড় সে মাঠ। আঁকাবাঁকা গঙ্গার তীরে অবস্থিত।
এই মাঠের তিন দিক জ়ুড়ে দেড় হাজার বিঘার জমির ঊপর রয়েছে এক আমবাগান। এর পূর্ব নাম ছিল লক্ষবাগ। ওই খানে লক্ষ লক্ষ আমগাছ ছিল বলে কালক্রমে তার নাম হয়ে দাঁড়ায় আম্রকানন। অর্থাৎ পলাশীর আম্রকানন। যেখানে বসে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আবাহমান বাংলার স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়া হয়ে ছিল।
শুরু হল ইংরেজ শাসন। শাসন না বলে, বলা উচিত_শোষণ, ত্রাস, নিপিড়ন ও নির্যাতন। চলতে থাকে বছরের পর বছর। যুগের পর যুগ। এভাবে পুরো এক শতাব্দী।
বাংলার মানুষকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে শোষণ করার জন্য ইংরেজরা নানাধরনের পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে থাকে। এজন্য ইংরেজ প্রথমে তার দালাল গোষ্ঠী তৈরী করে নেয়। এরা ছিল বেশির ভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের। দালালদের নানাবিদ সুযোগ সুবিধা দিয়ে গোটা ভারতবাসীকে শাসন-শোষণ করার ভিত্তি পাকাপোক্ত করে নেয়।
তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বীজ বপন করে হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতি ভেঙ্গে দেয়।
ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে কেরানী বানানোর জন্য, পা চাটা কুকুর বানানোর জন্য শিক্ষানীতিসহ বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়ন করতে থাকে। যার করালগ্রাস থেকে আজও আমরা মুক্ত নই। বাংলার স্বাভাবিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলার জন্য ইংরেজ তার স্বার্থের অর্থনৈতিক ও উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করে। এক পর্যায়ে কৃষক ধান, পাট ও সব্জির পরিবর্তে নীলচাষ করতে বাধ্য হয়। কোনো কৃষক নীলচাষ করতে অবাধ্য হলে তার স্ত্রী-কন্যাকে ধরে নিয়ে ওরা গণধর্ষণ করে মৃত্যুমুখে ছেড়ে দিত।
আর যার স্ত্রী-কন্যা থাকতো না, তাকে অথবা তার ছেলেকে ধরে হাতের আঙ্গুল কেঁটে দিত। এ রকম শত শত পাশবিক, লোমহর্ষক, নৃশংস, জঘন্য কর্মকাণ্ড ওরা নিরীহ বাংলীর উপর চালিয়েছে। বাঙ্গালীরা যে একশ বছরে কোনো প্রতিবাদ করেনি, বিষয়টি এমন নয়। অসংখ্য করেছে। তার মধ্যে সন্নাস বিদ্রোহ, পিন্ডারী বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, ওহাবী আন্দোলন, শাওতাল বিদ্রোহ ইত্যদি।
তবে এ সমস্ত বিদ্রোহের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ছিল অসংগঠিত। গণভিত্তি সম্পন্ন নয়। । কিন্তু তাই বলে এর প্রভাব ও গুরুত্ব কম তা নয়, বরং এর ধারাবাহিকতায় সিপাহী বিদ্রোহ।
১৮৫৭ সাল।
ইংরেজকে সরাসরি প্রতিরোধের বছর। যাকে আমরা বলি সিপাহী বিদ্রোহ বা যুদ্ধ। বামপন্থীরা একে সিপাহী বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেন। কেউ কেউ মহাবিদ্রোহ বলে থাকেন। মহাবিদ্রোহ ১৮৫৭ কে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন রূপে গণ্য করা হয়।
ইংরাজ ঐতিহাসিকরা একে সিপাহি বিদ্রোহ বলেছেন। ইংরেজ সেনাবাহিনীর অন্তর্গত ভারতীয় সিপাহীরা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহে মূল ভূমিকা পালন করেন। ইংরেজ সরকার এই বিদ্রোহকে কঠোর হস্তে দমন করলেও এর মাধ্যমে ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়। (প্রথমাংশ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।