আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্রাট আলেকজান্দার কর্তৃক টায়ার নগরী অবরোধ

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
সম্রাট আলেকজান্দার। (৩৫৬-৩২৩ খ্রিস্টপূর্ব) গ্রিসের মেসিডোন থেকে যাত্রা শুরু করে একে একে তছনছ করেছেন এশিয়া মাইনর, ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূল ও পারস্য । তবে তার অভিযান সহজ হয়নি।

প্রাচীন বিশ্বের স্বাধীনতাকামী জনগন যুদ্ধবাজ সম্রাটের পথে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তৎকালের সর্বাধুনিক সামরিক কলাকৌশল প্রয়োগ করে সম্রাট আলেকজান্দার অবরোধ করেছেন একের পর এক নগর- এর মধ্যে সবচে বিস্ময়কর ফিনিসিয় নগরী টায়ার অবরোধ। ফিনিসিয় নগর টায়ার ছিল পারস্য সাম্রাজ্যের অংশ। ৩৩২ খ্রিস্টপূর্ব। সম্রাট আলেকজান্দার পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন।

এই সময়ই তিনি টায়ার নগরী অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। টায়ার নগরীটির একটি অংশ দ্বীপে অবস্থিত হওয়ায় আর সমুদ্রপাড়ে সুউচ্চ প্রাচীর থাকায় নগরটি সহজে জয় করা যায়নি। প্রায় সাত মাস টায়ার অবরোধ করে রাখার পরই জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন সম্রাট আলেকজান্দার... ভূমধ্যসাগরের পূর্বতীরে প্রাচীন ফিনিসিয়া এখন যেটা লেবানন-প্রাচীনকালে সেখানেই ছিল ফিনিসিয়া। প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম সভ্যতা ছিল ফিনিসিয়া। টায়ার ছিল ফিনিসিয়দের বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ন নগররাষ্ট্র।

ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূল ও একটি দ্বীপে ছড়িয়ে ছিল টায়ার। সম্রাট আলেকজান্দারের সময়ে মূলভূমি থেকে প্রায় আধ মাইল দূরে ছিল দ্বীপটি । দ্বীপটির পূর্বদিকের প্রাচীরের উচ্চতা ছিল প্রায় ২০০ ফুট। দুটি বন্দর ছিল দ্বীপটিতে । গ্রিক বাহিনীর আক্রমনের সময় টায়ারের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০, ০০০ ।

কিছুসংখ্যক নারী ও শিশুদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল কার্থেজ। কার্থেজ ছিল উত্তর আফ্রিকায় ফিনিসিয় উপনিবেশ। কার্থেজ টায়ারে নৌবাহিনী পাঠাবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল। তারা প্রতিজ্ঞা পালনে ব্যর্থ হয়েছিল। ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূল ও একটি দ্বীপে ছড়িয়ে ছিল টায়ার।

সম্রাট আলেকজান্দারের সময়ে মূলভূমি থেকে প্রায় আধ মাইল দূরে ছিল দ্বীপটি । সম্রাট আলেকজান্দার উপলব্দি করেছিলেন সমুদ্রপথে আক্রমন করে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। যে কারণে তিনি অভিনব এক কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন-যা তার সমর প্রতিভারই স্বাক্ষর । টায়ারের পুরনো নগরটি আগেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সম্রাট আলেকজান্দার সমরপ্রকৌশলীদের নির্দেশ দিলেন পরিত্যক্ত নগরটির পাথরগুলি সমুদ্রে ফেলে ফেলে আধ মাইল দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করতে-যেন দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছনো যায়।

স্থলসেতু নির্মাণের কাজ শুরু হল। সেতুর গভীরতা মাত্র ২ মিটার । পাথরের তৈরি হওয়ায় আজও টিকে আছে। প্রাচীন ফিনিসিয়া; এখন লেবানন। আকাশ পথ থেকে তোলা ছবি ।

স্থলসেতুর নির্মানের কাজ চলছে। টায়ারের দিক থেকে বাধা আসছিল। রণতরী আর নির্মীয়মান বাঁধের ওপরে অবরোধ যন্ত্র বা সিজ মেশিন বসানোর নির্দেশ দিলেন সম্রাট আলেকজান্দার । লোহা নির্মিত সিজ মেশিনগুলি নয় তলা বা ১২৫ ফুট সমান উঁচু; চওড়ায় ৬০ ফুট, ওজন ১৮০ টন। সিজ মেশিনগুলি দিয়ে ভারী বস্তু ছুঁড়ে মারা হত।

ভারী বস্তু কে বলা হত র‌্যাম। সিজ মেশিন সিজ মেশিন ও র‌্যাম। টায়ার নগরে ধ্বংসাবশেষ টায়ার সৈন্যদের প্রতিরোধে আর নিজবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতিতে সম্রাট আলেকজান্দার ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন। তিনি দ্রুতগতিতে সেতুর কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। টায়ারের প্রাচীরের দিকে দেওয়ালের কাছে পানির গভীরতা বেশি আর টায়ারের নৌবাহিনীর আক্রমনের তীব্রতায় সেতুর কাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছিল।

যা হোক। সমুদ্রসেতুটি আর্টিলারি দেওয়ালের রেঞ্জের কাছে পৌঁছল। ১৫০ ফুট উঁচু দুটি টাওয়ার নির্মান করে স্থলসেতুর শেষে সেগুলি স্থাপনের নির্দেশ দেন সম্রাট আলেকজান্দার । টাওয়ার দুটি ছিল কাঠের তৈরি। আগুনের তীর যেন আগুন না লাগতে পারে সেজন্য টাওয়ার দুটি পশুর কাঁচা চামড়া দিয়ে মুড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল।

আসলে এগুলি ছিল চলমান আর্টিলারি মঞ্চ- উদ্দেশ্য টাওয়ারের ওপরে সিজ মেশিন বসিয়ে টায়ারের প্রাচীরের ওপর সৈন্যদের ধ্বংস করা। নিচ থেকে বাললিস্টা (পাথর ছোঁড়ার যন্ত্র) দিয়ে টায়ারের প্রাচীর ও জাহাজের ওপরও পাথর ছোঁড়া হচ্ছিল। টায়ারবাসীও প্রতিআক্রমন করছিল। তারা একটি পুরনো জাহাজে শুকনো ডালাপালা, পিচ (আলকাতরা) সালফার আর অন্যান্য বিস্ফোরক দ্রব্যাদি রেখে জাহাজটির মাস্তুলে তেল ভর্তি কড়াই ঝোলায়। যাতে মাস্তুলে আগুন ধরে ভেঙে পড়লে নিচে আগুন ধরে যায়।

তারা জাহাজের পিছনে ভারী পাথরও রেখেছিল-যাতে সামনের দিকটা ভেসে থাকে। এরপর আগুন ধরিয়ে তারা জাহাজটি নবনির্মিত সেতুর দিকে ঠেলে দেয়। দ্রুত আগুন ধরে ওঠে; এমন কী টাওয়ার ও সিজ মেশিনগুলোতেও আগুন ধরে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সব অব্যবহৃত সিজ মেশিনেও আগুন ধরে যায়।

টায়ারের প্রাচীরের দিকে দেওয়ালের কাছে পানির গভীরতা বেশি আর টায়ারের নৌবাহিনীর আক্রমনের তীব্রতায় সেতুর কাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। সম্রাট আলেকজান্দার টের পেলেন নৌ আক্রমন ছাড়া টায়ার দখল করা যাবে না। ২২৩টি যুদ্ধ জাহাজ একত্রিত করে তিনি টায়ারের দিকে অগ্রসর হলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই গ্রিকবাহিনী টায়ারের দুটি বন্দর অবরোধ করে। গ্রিকদের জাহাজে সিজ মেশিনও ছিল।

ওগুলো থেকে র‌্যাম ছোঁড়া হয়। তবে প্রথম দিকে টায়ারের প্রতিরক্ষা প্রাচীরের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় না। পরে অবশ্য প্রাচীর ভেঙ্গে পড়তে থাকে। এরপর গ্রিক সৈন্যরা দ্বীপে অবতরণ করে। সৈন্যরা বলপূর্বক নগরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় এবং সহজেই সৈন্যনিবাস দখল করে নেয়।

নগরটিও অতি দ্রুত দখল করে নেয়। যে সব অধিবাসীরা দেবতা হেরাক্লেসে এর উপাসনালয়ে আশ্রয় নিয়ে ছিল সম্রাট আলেকজান্দার তাদের ক্ষমা করে দেন; রাজাকে ও রাজপরিবারকেও সম্রাট আলেকজান্দার ক্ষমা করে দেন। রোমান ঐতিহাসিক কুইনটাস সারটিয়াস রুফুস এর মতে- ৬০০০ পুরুষকে হত্যা করা হয় এবং ২০০০ টায়ারবাসীকে সৈকতে ক্রশবিদ্ধ করা হয়। যেহেতু টায়ার অবরোধের সময় ছিল এবং তারা ধৃত গ্রিক সৈন্যদের হত্যা করেছিল ... সে কারণে নারীশিশুসহ ৩০,০০০ অধিবাসীকে দাসবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। টায়ার।

গ্রিকবাহিনীর নির্মমতার সাক্ষী।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।