আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিজিটাল ছেলেদের কিছু কান্ড জানি আসুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজিতে সক্রিয় ছাত্রলীগ

বুদ্ধদেব গুহের "মাধুকরি" উপন্যাসের পৃথু ঘোষ আমি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে সামনে চলে এসেছেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার বর্তমান নেতারা। আগে এটা ছিল সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের দখলে। এ নিয়ে ছাত্রলীগের নতুন ও পুরোনো অংশের নেতাদের মধ্যে হুমকি-ধমকি, বাগবিতণ্ডা চলছে। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের সংযোগপ্রাচীর নির্মাণকাজের জন্য ঘোষিত ১০ লাখ ৬৯৮ টাকার দরপত্রের শিডিউল জমা দিতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম বিল্ডার্স। এ প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে চেয়েছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা।

কিন্তু ছাত্রলীগের হল পর্যায়ের কয়েকজন নেতার বাধার মুখে তঁারা সেটি করতে পারেননি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নেন ছাত্রলীগ থেকে বাদ পড়া নেতা মিজানুর রহমান, মাইনুদ্দিন, মেহেরুল হাসান, শফিকুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন সাবেক নেতা। কিন্তু সম্প্রতি ছাত্রলীগ হল শাখার নতুন কমিটি ঘোষিত হলে নতুন নেতারা এটা মেনে নিতে পারেননি। সূর্য সেন হলের সভাপতি সাঈদ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক, জিয়াউর রহমান হলের সভাপতি রিফাত হোসেন, মুহসীন হলের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, এফ রহমান হলের সভাপতি ফারুখ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অবস্থান নেন এবং এম বিল্ডার্সকে দরপত্র জমা দিতে দেননি। জানা গেছে, তঁারা এ কাজে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

ছাত্রলীগ সূর্য সেন হল শাখার সভাপতি সাঈদ মজুমদার এ ব্যাপারে বলেন, কিছু অসাধু ছাত্রনেতার প্রভাবের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারেরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মুহসীন হলের সভাপতি মুহাম্মদ আলী বলেন, বিভিন্ন নির্মাণকাজের দরপত্রে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত ঠিকাদারেরা ছাড়া অন্য ব্যক্তিদের দেৌরাত্ম্য বন্ধে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতেই তঁারা প্রশাসনিক ভবনে গিয়েছিলেন, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। তঁারা টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। এম বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী মমিন উল্লাহর ছোট ভাই ইলিয়াস হোসেন ভুঁইয়া বলেন, বাধার মুখে তিনি দরপত্র জমা দিতে পারেননি। তিনি স্বীকার করেন, এম বিল্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত না থাকলেও এ দরপত্র ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত।

যে কেউই এখানে অংশ নিতে পারবেন। গত শনিবার তিনি প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মীজানুর রহমান এ বিষয়টি স্বীকার করেন। টেন্ডারবাজ ছাত্রলীগ: চারুকলা অনুষদের ছাত্রলীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা পদ পাওয়ার দুই দিন পরই নিউমার্কেটের উল্টো দিকে রাজউকের তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্সের কাজ বন্ধ করে দেন। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে এক কোটি টাকা চঁাদা দাবি করেন।

পরে এ বিষয়ে আপস হয়। এ এফ রহমান হলের একজন সাবেক নেতা ও বর্তমান কেন্দ্রীয় এক নেতা মুহসীন হলের বসুনিয়া গেটের পাশের দোকান থেকে নিয়মিত চঁাদা নেন বলে জানা গেছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চঁাদা না পেয়ে বেশ কয়েকবার ওই দোকান ভাঙচুর করেন তঁার সমর্থিত ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ ছাড়া গত মাসে ৪ সেপ্টেম্বর নীলক্ষেত মোড়ে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির স্থাপন করা বিলবোর্ড ও যাত্রীছাউনি ভেঙে দেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা। তঁারা ৫০ হাজার টাকা চঁাদা দাবি করেন।

এদিকে নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেট থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতার সমর্থকেরা। আরও কিছু ঘটনা: প্রতারণার অভিযোগে ১০ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী এন এস ফেরদেৌসের নেতৃত্বে কয়েকজন ফকিরেরপুলে রিক্রুটিং এজেন্সি আনোয়ার ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী মোহসীন সিদ্দিকীকে তুলে নিয়ে আসেন। আনার পর তঁাকে এ এফ রহমান হলের ৫০৫ নম্বর কক্ষে সারা রাত আটকে রেখে টাকা চাওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে তঁাকে উদ্ধার করে। ২৬ মে দরপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের হামলার শিকার হয়েছেন বর্তমান কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আহসান উল্লাহ।

শাহবাগের অপরাজিতা নামের ফুলের দোকানের মালিক রিপন প্রথম আলোকে বলেন, ৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের একটি দল তঁার দোকানে এসে চঁাদা দাবি করে। তঁারা তঁাকে না পেয়ে কর্মচারীদের মারধর ও দোকান ভাঙচুর করেন। ২২ আগস্ট রাতে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাওয়া টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কবি জসীমউদ&দীন হলের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জুনের মাঝামাঝি বনানী চেয়ারম্যানবাড়ীর এক ব্যবসায়ীর ছেলে গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় রোকেয়া হলের সামনের রাস্তায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তঁার নতুন মডেলের একটি এলিয়েন প্রাইভেটকার ছিনতাই করা হয়। ওই ঘটনায় সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগ কর্মী নজরুল ইসলাম খানকে গ্রপ্তোর করে রিমান্ডে নেওয়ার পর ওই গাড়ি উদ্ধার করা হয় বলে শাহবাগ থানা সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লাভলু মোল্লা সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আটকে রেখে দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকা আদায় করেন। লাভলু মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ওই গাড়ি তঁাকেসহ আরও দুজনকে আহত করে এবং তঁার ২২ হাজার টাকা দামের রেমন্ড চশমা ভেঙে ফেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে: টেন্ডারবাজি ও চঁাদাবাজিতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগও পিছিয়ে নেই। ওই কলেজের এক নেতার সমর্থকেরা গত মাসের শেষ দিকে চঁাদাবাজি করতে গিয়ে আশুলিয়ায় টহল পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ ধরা পড়েন। এঁদের মুক্তির দাবিতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নিউমার্কেটের সামনের রাস্তা অবরোধ করা হয়।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, লালবাগ থানা ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা গত মাসে তঁার কাছে চঁাদা দাবি করেছেন। চঁাদা না দিলে তঁাকে অপহরণ করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২৩ সেপ্টেম্বর খাদ্য ভবনের দরপত্র জমা দেওয়ার সময় সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনার নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল শাখার এক নেতা। তিনি এর আগে চঁাদা না পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উল্টো দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশের বেশ কয়েকটি বিলবোর্ড ভাঙচুর করেন। উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রীও: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি, চঁাদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ ও এর সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় জানতে চেয়ে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি পত্র আসে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। নেতাদের বক্তব্য: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, সারা দেশে ছাত্রলীগের পরিচয়ে কিছু টেন্ডারবাজি, চঁাদাবাজি ঘটছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে ওই ঘটনাগুলো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা করে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চেৌধুরী বলেন, তঁারা নিজেরা এসব ঘটনার মদদ কখনোই দেন না। বিশ্ববিদ্যালয় কতর্ৃপক্ষের বক্তব্য: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্র জমাদান-প্রক্রিয়া নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ইতিহাস বহু দিনের।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় দরপত্র গ্রহণ ও জমাদান-প্রক্রিয়া কয়েক দিন পর থেকেই অনলাইনে দেওয়া হবে। এ নিয়ে একটি কমিটিও কাজ করছে। তা ছাড়া দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে জটিলতা কমাতে সচিবালয়সহ তিনটি জায়গায় কেন্দ্র বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, আসলে সমঝোতা হলে এসব ঘটনা কেউ জানতেও পারত না। '


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.