"যাক! দিলাম কিছু হিন্দুদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে! শালা মালাউনরা এবার টের পাবে, কত ধানে কত চাল!"
"তাই নাকি? তা কি করেছিল সেই সব হিন্দুরা?"
"কি করেছে মানে? ঐসব নাপাক কাফিরদের জন্যইতো দেশের আজ এই অবস্থা!"
"তাই? কিন্তু এখনও বুঝতে পারলাম না ওরা কি করেছে। "
"আরে তুই কি বেকুব নাকি? সব ভেঙ্গে বুঝতে হবে? এখন দেশ চালাচ্ছে আওয়ামীলীগ। আর আওয়ামীলীগকে ভোট দেয় কারা? ঐ শালা মালাউনরা!"
"কিন্তু শুধু মাত্র হিন্দুদের ভোট পেলেতো আওয়ামীলীগ এত বিপুল বিক্রমে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারতো না। অনেক মুসলমানও ওদের ভোট দিয়েছে নিশ্চই। "
"কিসের মুসলমান? সব শালা নাস্তিক কাফির! সব শালা শুয়োরের বাচ্চা! আল্লাহ আর নবীকে নিয়ে গালাগালি করে।
ওদের কোপায় মারা উচিৎ!"
"কিন্তু আল্লাহ আর নবীকে (সঃ) অপমানের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি তুই কি দিতে পারবি? তাকে কুপিয়ে হত্যা করা? সেটা কি খুবই সহজ শাস্তি হয়ে যাবেনা? এরচেয়ে ভাল কি এই নয় যে আমরা সেটা আল্লাহর উপরই ছেড়ে দেই? আমরা সবাই আল্লাহর কাছে ন্যায় বিচার চাইবো। তিনি ন্যায় বিচারক। বিচারের দায়িত্ব তাঁর উপরই থাক। আমরা কেন আইনকে নিজের হাতে তুলে নিবো?
"তুই কি বলতে চাস স্পষ্ট করে বলতো, একটু শুনি। "
"আমি শুধু বলতে চাই, এইসব ব্যাপারে চরমপন্থী না হয়ে, শান্ত হয়ে বসে, একটু ভেবে চিনতে কাজ করা উচিৎ।
"
"হুজুরকে ফাসীতে ঝুলায় দিচ্ছে, আর তুই বলছিস বসে বসে চিন্তা ভাবনা করবো? তুইও দেখি মুশরিকদের মত কথা বলছিস!"
"তাই বলে গরীব নিরপরাধ হিন্দুদের বাড়ি পুড়িয়ে দিবি?"
"বেশ করেছি! এটা মুসলমানের দেশ! হিন্দুদের বাড়ি হিন্দুস্তানে। ওদের উচিৎ ছিল সেই সাতচল্লিশ সালেই তাদের বাপের দেশে চলে যাওয়া। যায় নাই, রয়ে গেছে, এখন বুঝুক ঠ্যালা!"
"কিন্তু বন্ধু! ইতিহাস অনুযায়ী এই দেশটাতো আসলে তাদের। আমরাই মুসলমানেরা এসে এখানে বসত গড়েছি। তোর কথা মেনে নিলে আমাদের সবার উচিৎ মক্কা মদিনায় গিয়ে বসত গড়া।
কিন্তু আরবরাও আমাদের মিসকিন ডাকে। এদেশ ছাড়া আমাদের তাহলে কোন ঠিকানা নাই! আমরাই প্রকৃত অর্থে বাস্তুহারা। "
"ইতিহাসের জ্ঞান দিতে আসিস না। আমরা কুরআন হাদিছ ছাড়া আর কোন জ্ঞানে বিশ্বাস করিনা। "
"তাহলে তুই আমাকে একটা কথা বল।
এটা কি ঠিক যে, আমাদের নবী (সঃ) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, শেষ বিচারের দিনে, তাঁর উম্মতদের (অনুসারী) মাঝে সর্বশেষ উম্মতের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তিনি বেহেস্তে প্রবেশ করবেন না। তিনি তাঁর সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবেন যাতে কোন বান্দাকেই দোযখের আগুনে পুড়তে না হয়। "
"অবশ্যই! পেয়ারা নবীজি (সঃ) দয়ার সাগর। উনার তুলনাই হয়না। চিন্তা করে দ্যাখ।
কত পাপী বান্দাদের জন্যও পেয়ারা নবী হযরত (সঃ) সুপারিশ করবেন!"
"বেশ। আবার সেই নবীই কিন্তু বলেছেন, "মনে রেখো যদি কোন মুসলমান কোন অমুসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়ন চালায় ,তাদের অধিকার খর্ব করে ,তার কোন বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরূদ্ধে অমুসলিম নাগরিকদের পক্ষ অবলম্বন করব। "
"তুই আমাকে হাদিছ শিখাতে আসিস? কুরআন হাদিসের কি জানিস তুই?"
"এটা বলতে পারবো যে আমি তোর চেয়ে কম জানিনা। তুই আমাকে একটা হাদিছ বা কুরআনের একটা আয়াত এনে দেখা যেখানে অসহায়ের উপর জুলুমে আল্লাহ কিংবা তাঁর রাসূলের অনুমোদন আছে। "
"তোর সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না।
আমি গেলাম। "
"শুনে যা, একটা কথা মনে রাখিস। ইসলাম শান্তির ধর্ম। আল্লাহ এবং রাসূল বলেছেন, ভালবাসা দিয়ে, ভাল ব্যবহার দিয়ে কাফিরদের মন জয় করার চেষ্টা করতে। যাতে তারা ইসলামের মহিমায় মুগ্ধ হয়ে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে।
তোরা যে কাজটা করছিস, তাতে কাফিরদের মনেতো বটেই, এমনকি ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ কিছু মুসলমানদের মনেও তোরা ইসলাম সম্পর্কে ক্ষোভের সৃষ্টি করছিস। আল্লাহ বলেছেন ইসলাম প্রচার করতে। কিন্তু তোদের অপকর্মে দলে দলে মানুষ ইসলাম বিমুখ হচ্ছে। এই যে দেশে এখন লাখে লাখে মুসলিম নাস্তিক, তোর কি ধারণা, এর জন্য তোরাও দায়ী নস?"
"দোস্ত। তুই চুপ থাক।
তুই আমার বন্ধু। আমি তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাইনা। "
"কেন করবি না? তুই বাড়ি বাড়ি গিয়ে হিন্দুদের মারতে পারিস। তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিতে পারিস। মন্দিরে আগুন দিতে পারিস।
আর শুধু আমার সাথে ভাল ব্যবহার করলেই বেহেস্তে চলে যাবি?"
"ওটা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। "
"না। আল্লাহ কখনও বলেননাই বিধর্মীদের উপাসনালয় পুড়িয়ে দিতে। বরং বলেছেন নিজের ভাল আচরণ দিয়ে তাদের মন জয় করতে। তোরা মানুষ হত্যার মত জঘন্য পাপ করছিস।
ইসলামে নিরপরাধ মানুষ মারার শাস্তি কি তা জানিস? প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ। "
"হিন্দু মালাউন আবার নিরপরাধ কিভাবে হয়?"
"কেউ কোন অপরাধে যুক্ত না থাকলেই সে নিরপরাধী। সাইদী সাহেবের বিচারে ওদের কোন হাত ছিলনা। অথচ তাদের ঘর বাড়ি থেকে রাস্তায় ছুড়ে দিলি তোরা। "
"তাহলে আমরা কি করবো? হাত পা গুটায়ে বসে থাকবো? ঐ নাস্তিক কাফিরদের মত 'জয় বাংলা' স্লোগান দিবো?"
"দ্যাখ।
সাইদী সাহেব খুব বড় আলেম ছিলেন এটা সত্যি। একজন আলেম হিসেবে আমি তাঁকে অনেক সম্মান করি। কিন্তু বিচারতো আল্লামা সাইদীর হয়নি। হয়েছে এক দুষ্ট রাজাকারের। যে দেশের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল।
আর যদি তিনি আসলেই নির্দোষ হয়ে থাকেন, তাহলে সে বিচারও আল্লাহই করুন। তিনি বেহেস্তে চলে যাবেন। শেখ হাসিনা জাহান্নামে। মাঝে দিয়ে এইসব অরাজকতা সৃষ্টি করে তুই কেন জাহান্নামে যাচ্ছিস?"
"তোর লেকচার শেষ হয়েছে? যা জানিস না, তা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করিস না। "
"আসলেই আমি কিছু জানিনা।
শুধু এটা জানি যে প্রতিবাদ জানানোর অনেক ভাষা আছে। অহিংসভাবে প্রতিবাদ জানালে দেখবি, অনেক অনেক মানুষ তোদের পাশে এসে দাঁড়াবে। এইভাবে মারামারি কাটাকাটি করায় এখন মুসলমানেরাই তোদের অপছন্দ করছে। "
"আল্লাহ আছেন আমাদের সাথে। আমাদের মুশরিক মুরতাদদের পাশে না পেলেও চলবে।
"
"না। আল্লাহ তোদের সাথে থাকলে তিনি তোদের এই দাঙ্গা হাঙ্গামা হতে দিতেন না। যারা জুলুম করে, আল্লাহ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তোদের আল্লাহর দোহাই, ইসলামের নামটাকে আর ডুবাস না। এইসব বন্ধ কর! এসব করলে কি সাইদী সাহেবের ফাঁসী এটকে যাবে ভাবছিস?"
"না আটকালে পুরা দেশ জ্বালায়ে দিবো!"
"মাতৃভূমির সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকে আল্লাহ সহ্য করেননা।
জুলুমকারীদের বিপক্ষে আল্লাহ সবসময়ে অবস্থান নেন। তুই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের উদাহরণই নে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন বিশ্বের সেরা সেনাবাহিনী। তাদের ছিল সব আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। তারউপর ওদের সাথে ছিল চায়না, অ্যামেরিকা, আর আমাদের বিশাল রাজাকার বাহিনী।
এরপরও দেশের সাধারণ কৃষক, মজদুর আর যুবকদের নিয়ে গড়া মুক্তিবাহিনীর কাছে তারা হেরে গেল। কেন জানিস? কারণ তারা জুলুম করেছিল। সাধারণ নিরপরাধ বাঙ্গালীর উপর তারা অত্যাচার করেছিল। আল্লাহ কিন্তু সেদিন সেই মুসলমান পাক সেনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। সাহায্য করেছিলেন আমাদের হিন্দু মুসলিমে গড়া মুক্তিবাহিনীকে।
"
"তুই চুপ কর। তোর ভাগ্য ভাল যে তুই আমার বন্ধু। নাহলে....."
"যদি তোর বন্ধু না হতাম, তাহলে কি কুপিয়ে মারতি? কেন? আজকে বন্ধু বলে আমাকে ছাড়বি কেন? আল্লাহর রাস্তায় কেউ বাঁধা দিতে এলে তোরা দোস্ত দুশমনও দেখিস? আমাদের না অনেক বন্ধু আছে যারা হিন্দু? পূজার সময়ে যাদের বাড়িতে গিয়ে আমরা পিঠা খেয়ে আসি? তাদের মায়েদের আমরা মাসি বলে ডাকি? ওদের ছোট বোনেরা আমাদের দাদা বলে ডাকে? তুই কি পারবি ওদেরকেও মেরে ফেলতে? ঐসব ছোটবোনদের তুলে নিয়ে যেতে?"
"তুই চুপ কর! আরেকটা কথাও না!"
"আমি থামবো না। যতক্ষন তুই তোর কাজ থামাবি না, আমিও আমার মুখ থামাবো না। "
"তুই বুঝতে পারছিস না।
জেহাদে নেমে পিছু হটা কবিরা গুনাহ। "
"কিসের জিহাদ? দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা কোন ধর্মে জিহাদ? গরীব অসহায় সংখ্যা লঘুদের উপর অত্যাচার কোন হাদীছে বলা হয়েছে জিহাদ? আসল জিহাদ হলো মনের ভিতরের ইবলিশের সাথে লড়াই। সে লড়াইতে তোরা বারবার হেরে যাচ্ছিস!"
"আমি একা ফিরে এসে কি করবো? এ আন্দোলন থামবে না। "
"তোর মত একজন একজন করে যদি সবাই থেমে যায়, তবে এ জুলুম থামতে বাধ্য হবে। "
"তুই ওদের চিনিস না।
এ কাজ করতে গেলে ওরা আমাকে খুনও করতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে না। "
"সে মৃত্যু কি অনেক বেশিই গর্বের নয়? হরতাল করতে গিয়ে পুলিশ কিংবা ছাত্রলীগের হাতে মরার চেয়ে এ মৃত্যু অনেক গৌরবের! জুলুমে বাঁধা দিতে গিয়ে প্রাণ দেয়াতে তুই আল্লাহর দরবারে শহীদের মর্যাদা পাবি। তোর মত কতজনকে তারা হত্যা করবে? একদিন না একদিন তাদের থামতে হবেই। শোন বন্ধু। আমাদের ধর্মই প্রথম পৃথিবীতে শান্তির বাণী শুনিয়েছিল।
আমাদের ধর্মেই প্রথম নারীকে স্বাধীনতা ও অধিকার দিয়েছিল। আমাদের ধর্মই শিখিয়েছে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে কিভাবে সদাচরণ করতে হয়। আমাদের ধর্মই প্রথম শিখিয়েছিল দাসদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে। আমাদের ধর্মে বলা হয়েছে জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। বিধর্মীদের সাথে মিলেমিশে থাকতে।
আজকে তোদের জন্য সেই আমাদের ধর্মটাকেই মানুষ সন্দেহের চোখে তাকায়। ঘৃণার চোখে তাকায়। আল্লাহ যখন রোজ হাসরে তোকে জিজ্ঞেস করবেন, কেন তোর কৃতকর্মের জন্য দলে দলে মানুষ ইসলাম বিমুখ হলো, তখন তুই কি জবাব দিবি তার? রাসুলের (সঃ) চোখে চোখ মিলিয়ে তাকাতে পারবি? চুপ করে আছিস কেন? জবাব দে!"
"এখন আমি কি করতে পারি?"
"ক্ষমা চা, তাদের কাছে যাদের উপর তোরা অত্যাচার করেছিস। তাদের ক্ষতিপূরণের চেষ্টা কর। আর তাদের এই আশ্বাস দে, যাতে ভবিষ্যতে তাদের উপর কোন রকম জুলুম তুই হতে দিবি না।
"
"ওরা কি আমাকে মাফ করবে?"
"করবে। আমরা মানুষ। আমাদের হৃদয় অনেক বড়। কেউ যদি তার নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করে, ক্ষমা চায়, আমরা অবশ্যই তাকে ক্ষমা করি। কিন্তু, মাফ চাওয়ার মত মহৎ হৃদয় তোদের আছেতো?"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।