হিন্দু নির্যাতন বাংলাদেশে নতুন কিছু না। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা যেমন বহমান, হিন্দু নির্যাতনের জাঁতাকলও একইভাবে চলমান। প্রত্যেকটা ঘটনার পরে এই নিয়ে আমার মত কিছু পাব্লিক খামাখা হাউ-কাউ করে, বাকিরা তামাশা দেখে, কেউ মজা নেয়, কেউ আহা-উঁহু করে, তারপরে সব আগের মত। দেশে গণতন্ত্র আছে কিনা এই প্রশ্নে দ্বিমত, ত্রিমত, বহুমত থাকতে পারে তবে মালাউন কোপানো হবে কি হবেনা এই প্রশ্নে কোন দ্বিমত নাই, একটাই উত্তর, হবেনা মানে? হতেই হবে
।
মালাউন কোপানোর কথা উঠলে কিছু উচ্চ পর্যায়ের সুশীল নানা যুক্তি তুলে ধরে তার মাঝে একটা অবশ্যই, "আরে মিয়াঁ, ভারতে কি মুসলমানদের দুরবস্থা নাই?" যেন ভারতে মুসলমানদের দুরবস্থা জায়েজ করতে বাংলাদেশে মালাউন কোপানো অবশ্য কর্তব্য।
সেইসব সুশীলদের জন্য আমার ঘৃণা নাই, দয়া আছে। তাদের বলতে ইচ্ছা হয়না, সিরিয়াতে কিভাবে মুসলমানরা মুসলমান ভাইদের পুটু মারছে, কিভাবে ইরানে-ইরাকে মারছে, কিভাবে পাকিস্তান-আফগানিস্তানে মারছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাইয়ে ভাইয়ে মারলে কোন দোষ নাই, যেভাবে ৭১ এ মারলে দোষ হয়না।
দেশে ফি-বছরে কত হাজার হিন্দু মালাউন দেশ ছাড়ে তার কোন পরিসংখ্যান নাই। দরকার নাই, অনুমান করতে কারও সমস্যা হবার কথা না।
কিছুদিন আগে প্রথম আলোর এক খবরের পরিসংখ্যানের সুবাদে সবাই জানে মালাউন সংখ্যা দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ্। খুশির খবর। পুরা সাফা হলে আবার একটা আওয়াজ দিয়েন।
পুরান ঢাকার যেই বাসায় ভাড়া থাকতাম তাতে ১০টা ফ্ল্যাটে ৮টা হিন্দু পরিবার।
বাড়ির মালিক হিন্দু ভাড়া দেয় কারন তারা ঝামেলা কম করে। আশেপাশের প্রত্যেকটা বাড়ির বাসিন্দাদের টার্গেট ছিল এই বাড়ি। একটু আধটু ঘণ্টা-কাসির শব্দ বেশি হলেই অজস্র অশ্রাব্য সুকথা দিক দিক হতে ভেসে আসত। পেছনের গলির সোনার ছেলেরা উঠতে বসতে হিন্দুদের ইয়ে মারত। তবে হ্যাঁ, নির্বাচনের আগে নেতা এসে প্রত্যেকের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া পাক্কা করত, নাহলে গণতন্ত্র সমুন্নত থাকেনা।
এই ঘটনা শুনে যারা অবাক হওয়ার ভান করবে তারা ভাল মানুষ।
দেশে একটা মজার মিডিয়া সংস্কৃতি আছে। কোন জায়গায় পাব্লিকের লাইন দেখলেই তাদের ক্যামেরা হিন্দুর শাঁখা-সিঁদুর খোঁজে। সেইটা যে কোন জমায়েতই হোক। এই কারনে নির্বাচনের সব ছবির মাঝে হিন্দু মালাউনদের লাইনের থাকে আলাদা মর্যাদা।
তাই সব পত্রিকা-টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাতে মালাউন নারীদের শাঁখা-সিঁদুরের একটা না একটা ক্লোজ শট অবধারিত। দেখতে ভাল লাগে, গনরিয়ার মত গণতন্ত্র আর গনিমতের মাল এক জায়গায় দেখলে কার না ভাল লাগে। আমি একমাত্র জামায়েত-এ-ইসলামির সমাবেশে হিন্দু মালাউন দেখলাম না এই দুঃখ এখনও আছে।
এইদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকুক এটা কেউ সরাসরি মুখে বলে, কেউ গোপনে। আমি নিজেও এই ভাবনার সমর্থক।
দেশের ৯০ ভাগ মানুষ এক কাতারে দাঁড়ালে বাকি ১০ ভাগ বঙ্গোপসাগরে ডুবলেও কোন সমস্যা থাকার কথা না। গনতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের জোর চলে। এখানেও চলবে, অস্বাভাবিক কিছুনা। যেই জোরের কারনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় এক রিকশাচালক আমাকে শুনিয়েছিল, দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না হলে চলবে না, ওটা থাকতেই হবে। অবাক হওয়ার এখানে কিছু নেই, দেশের অশিক্ষিত-শিক্ষিত অধিকাংশ মানুষের ধারনাও একই।
এটার কোন পরিসংখ্যান নাই তবে আগে পরে সবাই একই লাইনে।
দেশে নির্বাচন হলে মালাউন কোপানো আর মিষ্টি বিতরন একই কথা। একইভাবে দেশে কোন ঘটনা ঘটলেই মালাউন কুপিয়ে সেটা শুদ্ধ করা জায়েজ। কেউ পাদ দিলেও নাকি আজকাল মালাউনরা ভয়ে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদে সরে যায় যাতে গণতন্ত্র রক্ষাকারীরা আরামসে তাদের শুদ্ধিকরণ করে যেতে পারে। মালাউনদের একমাত্র কর্তব্য বাকি থাকে, সক্কাল সক্কাল ঘর পোড়া ছাইয়ে দাঁত মেজে টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁত কেলিয়ে পোজ দেয়ার।
হুমায়ূন আজাদের "পাক সার জামিন সাদ বাদ" বইয়ে অপ্রাপ্তবয়স্কা মালাউন ধর্ষণের বর্ণনায় অনেক সুশিলের সুশিলতা হানি হলেও, কদিন আগে মালাউন নারীর প্রতিবন্ধী শিশুকে আগুনে ছুড়ে মারতে যাওয়ার ঘটনায় কারও কোন প্রতিক্রিয়া থাকেনা। এদেশে মালাউন মরবে এটা ধ্রুব সত্য, মেনে নিতে না পারলে আর ট্যাঁ -ফো করলে আপনার সমস্যা। আপনি দেশের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ফকফকা নিশানে আন্তর্জাতিক চক্রান্তে কালিমা লেপনে ব্যাস্ত।
যাই হোক, ব্লগ লিখে বিপ্লব হবেনা বুঝে গেছি অনেক আগে, তারপরেও অক্ষম ক্রোধে এইসব লেখা। দেশ খুব শীঘ্রই মালাউন মুক্ত হোক এই আশা পোষণ করি।
দেশে শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক। গণতন্ত্র আর ঈমান সমুন্নত থাকুক। যেভাবে লীগ-বিম্পি-জামাত-বাম-ডান এক হয়ে মালাউনের ঘরে আগুন দেয় সেভাবেই দেশকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাক।
তবে যাওয়ার আগে একটা কথা, বাংলাদেশ কখনই অসাম্প্রদায়িক একটি সমাজ গড়ে তুলতে পারবেনা, এইদেশ কখনই রাজাকারমুক্ত হবেনা, বলে গেলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।