আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা এবং এ বিপুল বিজয়ের পেছনে একটি আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছেঃ ট্রাম্প কার্ড জলিলের বাঙ্গি ফাটানো সাক্ষাৎকার

ফেসবুক আইডি:নাই

লন্ডনে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জলিল অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরেছেনঃ ১. তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশে ফিরে দলীয় পদ ধরে রাখার জন্য সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিরোধে যাওয়া উচিত ছিল। না যাওয়াটা আমার ভুল ছিল। তার প্রতি বেশি আনুগত্যই আমার অপরাধ। ২. আমি যে মুহূর্তে দেশে পদার্পণ করি (২০০৮ সালে) সে মুহূর্তেই নিয়ম অনুযায়ী দলের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব ফিরে পেলাম। জিল্লুর রহমান (তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) আমাকে স্বাগত জানিয়ে বললেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে।

কিন্তু এরপরই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা হুকুম দিলেন জিল্লুর রহমানকে। আমাকে বলা হলো, আপনি রেস্টে যান। ৩. আমি গ্রেপ্তার হওয়ার কারণ ছিল, ডিজিএফআই আমাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না। কারণ, আমি তখন শেখ হাসিনার পক্ষে অহরহ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। আর তখন আমার কিছু বন্ধু-বান্ধব সংস্কারের জন্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা চালাচ্ছিলেন।

৪. ডিজিএফআইও চাচ্ছিল, আমি ওই লাইনেই কথা বলি। আমি বললাম, 'না'। শেখ হাসিনা আমার নেত্রী। যদি কোনও পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে তা করবে পার্টি; বাইরে থেকে নয়। ডিজিএফআইর নির্দেশে নয়।

আমার অপরাধটি সেখানে। তারা আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলো। আমি তাদের কথা শুনিনি, সেটাই হলো আমার অপরাধ এবং তার জন্য আমি পুরস্কারের বদলে দল থেকে পেলাম শাস্তি। ৫. উপদেষ্টা পরিষদে থেকে আমাদের কাজ করার কোনও অবকাশ নেই। শেখ হাসিনা তল্পীবাহকদের প্রেসিডিয়ামের সদস্য করে আমাদের প্রতি অন্যায় করেছেন।

৬. আমরা পাঁচটা মানুষ, যাদের ৫০-৫৫ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, যারা এক্টিভিস্ট ছিলাম, যারা আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলতে শ্রম দিয়েছি, তাদের হঠাৎ করে আমলা-ব্যুরোক্র্যাটদের সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদে রাখা একটি আই ওয়াশ। ৭. শেখ হাসিনা তার লক্ষ্য থেকে সরে গেছেন। এ দলটাকে ক্ষমতায় আনতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এখন দলের ইশতেহার বাস্তবায়ন হবে কার দ্বারা? ছেলে-ছোকরাদের দ্বারা? অনভিজ্ঞ মন্ত্রীদের দ্বারা?....সবই তো নতুন। এরা কী বোঝে? ৮. সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়ে জলিল বলেন, "যদি তাই না হয়, তাহলে আমাকে সেক্রেটারির পদে দায়িত্ব পালন থেকে দুই বছর নিবৃত্ত রাখা হলো কেন? কেন এ দায়িত্ব সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দেওয়া হলে? এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিং না হলে হতেই পারে না।

" ৯. আশরাফ ডিজিএফআই'র সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতেন অভিযোগ করে জলিল বলেন, "তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান। কিন্তু তিনদিনের মাথায় তিনি আবার ফিরে এলেন কী সমঝোতায়? ডিজিএফআইর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে শেখ রেহানাই তাকে দেশে পাঠিয়েছিলেন। "যে লোকটা সকাল-বিকাল ডিজিএফআই'র ভয়ে ধড়ফড় করত, তিনিই আবার দেশে ফিরে গেলেন! সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে ডিজিএফআই'র বোঝাপড়া করে দিয়েছেন শেখ রেহানা। তিনি প্রচ্ছন্নভাবে আওয়ামী লীগের কলকাঠি নাড়ছেন। " ১০. সাবেক সাধারণ সম্পাদক জলিলের অভিযোগ, আত্মীয়তার সূত্রে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন আশরাফ।

তিনি বলেন, "সৈয়দ আশরাফকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আত্মীয়তার সূত্রে। এ ছাড়া এর আর কোনও কারণ আমরা দেখি না। কাজ করার ব্যাপারে তার সীমাবদ্ধতা আছে। তিনি সারা বাংলাদেশকে জানেন না। দেশকে চেনার অভিজ্ঞতাও তার নেই।

" ১১. বর্তমান সরকারের ৯০ শতাংশ মন্ত্রীই সংস্কারপন্থী। সংস্কারপন্থীদের নিয়েই তিনি (হাসিনা) দল চালাচ্ছেন। ১২. ট্রাম্পকার্ডের বিষয়টি আমার একার নয়। আমার নেত্রীর এ বিষয়ে অনুমতি ছিল। তার অনুমতি ছাড়া আমি কিছু করিনি।

এর প্রমাণ রয়েছে। ৩০ এপ্রিলের ঘটনা এবং উনার (হাসিনা) বক্তব্য নিয়ে যে সব নিউজ বেরিয়েছে, সেগুলো সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে আমি রিপোর্ট হাজির করব। ১৩. পাঁচ দফা চুক্তির বিষয়ও বের করব। সেখানে আমি একা ছিলাম না। আমাকে ভিকটিম করা হয়েছে।

ওই চুক্তির পেছনে শেখ হাসিনার অবদান ছিল। আমার দোষ হলো, আমি তার প্রতি খুব অনুগত ছিলাম। আনুগত্যই আমার অপরাধ। ১৪. বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, "উনি কাজের চেয়ে কথা বেশি বলেন, এটা তার জন্য বিপজ্জনক। এ ছাড়া কার্যক্রমে যদি লোভ-লালসা পরিলক্ষিত হয়, তাহলে লক্ষ্য সফল হয় না।

ফারুক সাহেবের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ১৫. আমি মনে করি, বিরোধী দলকে যে কোনভাবেই সংসদে নিয়ে আসা উচিত। তাদের সংসদে না আনলে সংসদ পূর্ণাঙ্গ হবে না। আমি এটা স্পিকারকেও বলেছি। ১৬. কারও জন্যে কিছু আটকে থাকে না।

কিন্তু তারপরও অভিজ্ঞতা ও দল চালানোর দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের থেকে দেশবাসী বঞ্চিত হবে। দল বঞ্চিত হবে। ১৭. বাংলা টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জলিল বলেন, "আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা এবং এ বিপুল বিজয়ের পেছনে একটি আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। " বন্দি অবস্থায় শেখ হাসিনার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টিও এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। বাংলা টিভি মঙ্গলবার রাত ১০টার (লন্ডন সময়) সংবাদে ওই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ প্রচার করে।

জলিলের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে বাংলা টিভির চেয়ারম্যান ফিরোজ খান জানান, সাক্ষাৎকারটি জনতার মঞ্চ নামে একটি অনুষ্ঠানের জন্য ধারণ করা হয়েছে। জলিলের সাক্ষাৎকারটি কবে প্রচার করা হবে- জানতে চাওয়া হলে ফিরোজ সুনির্দিষ্ট করে কোনও দিন-তারিখ বলেননি। সাক্ষাৎকারটি প্রচার না করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ রয়েছে বলে বাংলা টিভির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান ফিরোজ খান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.