আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধূমপানে বিষপান



আমাদের দেশে বিড়ি সিগারেট আসার ইতিহাস আমার জানা নেই। ঠিক কবে কারা কিভাবে আমাদের দেশে তামাক খাওয়ার সূচনা ঘটিয়ে ছিলো সে সম্পর্কে ইন্টারনেটে কিছু পেলাম না। প্রথম তামাকখোর হিসেবে কোন বাঙালি নিজেকে গর্বিত করছিলো সেটাও আমার জানা নেই । তবে বিড়ি সিগারেট নিয়ে আমার নিজের জীবনের ইতিহাস আমার ভালোই মনে আছে। এই পোস্টের শিরোনামে ১৮+ লেখা উচিৎ ছিলো হয়তো।

কিন্তু লিখলাম না। কারণ হলো, আমার অভিজ্ঞতা বলে যে, আমাদের দেশে যারা সিগারেট টানে তারা আঠারো বছর বয়স হবার আগে থেকেই টানে । স্কুল পালিয়ে সিগারেট খাওয়ার বিষয়টা আমাদের দেশের অনেক সাহিত্যিক তাদের সাহিত্যে দামাল ছেলের বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরোক্ষ ভাবে উল্লেখ করে থাকেন । উদাহরণ দিলাম না। তাতে বিষয়বস্তু অন্য দিকে মোড় নিতে পারে।

সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা আমি জানি। সম্ভবত অনেকের থেকে বেশিই জানি। কারণ, আমি নিজেই ধুমপান করি। না, আমি এখনও কোন জটিল রোগে আক্রান্ত হইনি। তাহলে কিভাবে জানলাম? আসলে আমি ধুমপান করি জন্য লোকে আমাকে এত উপদেশ দিয়েছে ধূমপান না করার ব্যাপারে যে, ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আমি যা কিছু শিখে ফেলেছি তা মনে হয় অনেকেই জানেন না ।

আমি জানি আমার এই পোস্ট হয়তো অনেকেরই ভালো লাগবে না। বিশেষ করে যারা ধূমপান করেন না তাদের কাছেতো নয়ই। তারপরও লিখতে ইচ্ছা হলো জন্য লিখছি। আমি আমার জীবনের প্রথম সিগারেটে টান দেই যখন তখনও আমার দুধ দাঁত সবগুলো পড়েনি। খুব সম্ভবত আমার বয়স তখন সাত বা আট বছর হবে।

আমার চাচা তখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। জনতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য বাড়িতে তখন কার্টন কার্টন সিগারেট রাখা হতো। ‘বেনসন’ থেকে শুরু করে ‘কেসমত বিড়ি’ পর্যন্ত সর্বপ্রকার ধূমপানের উপকরণ তখন আমাদের বাড়িতে গুদামজাত অবস্থায় বিদ্যমান । লোকে বিনে পয়সায় ধূমপান করার লোভে আমাদের বাড়িতে ভোর থেকে শুরু করে গভির রাত পর্যন্ত আনাগোনা করতো। তারা অবশ্য চাচাকে নিরাশ করেনি।

যাই হোক, সেই অবস্থায় একদিন আমার থেকে চার পাঁচ বছরের বড় কিছু ইঁচড়ে পাকা ছেলে আমারে দুই টাকা দিয়ে এক প্যাকেট গোল্ডলিফ চুরি করার ব্যাপারে প্ররোচিত করে। আমিও দুইটা টাকা পেয়ে চরম আনন্দিত চিত্তে গুদামজাত সিগারেট থেকে এক প্যাকেট গোল্ডলিফ এবং আমার যোগ্যতার প্রমাণ স্বরূপ আরও এক প্যাকেট বেনসন মেরে দিলাম । তারপর জঙ্গলে গিয়ে জীবনের প্রথম সিগারেট টানার অভিজ্ঞতা অর্জন করে স্বল্প জীবনের অভিজ্ঞতার পুঁজি আরেকটু ভারী করে নিলাম। এর পরে দীর্ঘদিন চলে গেল। ক্লাস এইট পর্যন্ত আর ধূমপান করিনি।

ক্লাস এইটে আমার আশাবাদী মা আমার পড়াশোনার উন্নতির লক্ষ্যে আমাকে একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে দিলেন। কিন্তু হায়, সেখানে গিয়ে বন্ধুদের তালিকায় আরও কিছু আরও কিছু পাকনা ছেলের নাম যোগ করে ফেললাম। কোচিং সেন্টারের নিকটেই চামড়ার গুদাম ছিলো। ফাঁকা জায়গা। সিগারেট থেকে শুরু করে মদ গাঁজা খাওয়ার জন্য উপযুক্ত স্থান।

একদিন বন্ধুদের সাথে সেখানে গিয়ে একখানি গুদামঘরের আড়ালে বসে দ্বিতীয়বারের মত ধুমপান করার অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেললাম। এবারের সিগারেটের নাম ছিলো, ‘মোর’। টান দিয়ে দেখি মাথা ঘোরে। বন্ধুদের বলতেই ওরা বলল যে মাথা ঘোরাতেই নাকি ‘আসল’ মজা। মাথা ঘোরাটা কি করে মজা হতে পারে আমি তা এখনও বুঝতে পারিনি ।

তবে সেবার মাথাটা এই পরিমাণ ঘুরেছিলো যে, আমার ধূমপানের অভ্যাস আরও দুই বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এসএসসি পাশ করার পরে কলেজে ভর্তি হয়ে আবার শুরু করি। গোল্ডলিফ ধরলাম। সেই যে ধরেছি দশ বছর হতে চলল। এখনও ছাড়া হয়নি।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.