আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জীবনাবসান

দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জীবনাবসান উদ্বিগ্ন স্বজন, দেশে বিদেশের লাখো ভক্তকূলকে কান্নায় ভাসিয়ে বিদায় নিলেন চারণ কবি থেকে বাউল সম্রাট হয়ে ওঠা শাহ আবদুল করিম। শনিবার সকাল ৭.৫৫ মিনিটে সিলেটের নূরজাহান ক্লিনিকে চিকিৎসারত অবস্থায় এই জীবন্ত কিংবদন্তির জীবনাবসান ঘটে। শুক্রবার দুপুর থেকে তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে কৃত্রিমভাবে বাচিয়ে রাখা হয়েছিল। তার মহা প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার জন্মভিটাসহ বৃহত্তর সিলেটের সর্বত্র। মৃত্যূকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

বাউল সম্রাটের একমাত্র পুত্র শাহ নূর জালাল জানান, ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাউল সম্রাট বার্ধক্যজনিত কারণে ভোগছিলেন। ওই সিময় তিনি নিজে নিজে কিছুটা চলাফেরা করতে পারলেও ওই বছরের শেষ দিকে থেকে তিনি রোগের কাছে কাবু হয়ে বিছানায়ই দিন কাটাচ্ছেন। তারপর থেকে অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারছেন না। বেশি অসুস্থ হলেই তিনি সিলেটের নূরজাহান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হতো। হাসপাতালের ডাক্তার নাসিম জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর বাউল সম্রাটের অসুস্থতা বেশি দেখা দিলে ওই দিনই নূরজালাল বাবাকে নিয়ে সিলেটের নূরজাহান ক্লিনিকে ভর্তি করান।

প্রথম দিকে অবস্থা কিছু ভালো হলেও গতকাল শুক্রবার থেকে তার শারিরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তাই শুক্রবার দুপুর ১ ঘটিকা থেকেই তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছিল। ১৯১৬ সনের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যঞ্চা বিক্ষুব্দ সময়ে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাওরবেষ্টিত গ্রাম উজানধলে শাহ আবদুল করিম জন্মগ্রহণ করেন অতি সাধারণ এক দরিদ্র পরিবারে। তার পিতার নাম ইব্রাহিম আলী। মাতার নাম নাইওরজান বিবি।

তার স্ত্রী সরলার মৃত্যুর পর বাউল কবি মুষড়ে পরেন। ১৯৫৭সাল থেকে তিনি স্থায়ীভাবে নিজ গ্রামে বাস করছেন। তার একমাত্র পুত্রের নাম শাহ নূরজালাল। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম দেহতত্ব, নিগূরতত্ব, বাউল তত্ব, মুর্শিদী গানসহ অসংখ্য গণসঙ্গীত রচনা করেছেন। তিনি কাগমারী সম্মেলনে গান করে মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন এবং তাদের শ্রদ্ধা আদায় করে নেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীসহ অসংখ্য জাতীয় নেতা তার গানে বিমোহিত ছিলেন। তার মুরশিদ ছিলেন স্ত্রী আফতাবুন্নেসা ওরফে শরলা, মৌলাবক্স মুনসি। ওস্তাদ ছিলেন, করমুদ্দিন ও রশিদ উদ্দিন। গানে গানে তিনি জীবনের কথা বলেছেন। তিনি জারী, সারি, বারোমাসী, আঞ্চলিক গানও রচনা করেছেন।

তিনি স্বভাব কবিত্বের দ্বারা মালজোড়া গানের আসর জমিয়ে রাতভর নিরব রাখতেন হাজারো দর্শককে। তার অবয়ব, দেহ, কণ্ঠে ছিল ভাটির জল, হাওয়া, আলো আধারী আর মাটির গন্ধ। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১৩৫৫ বঙ্গাব্দে প্রথম বই আফতাব সঙ্গীত বের হয়। গণসঙ্গীত ১৯৫৭, কালনীর ঢেউ ১৯৮১, ধলমেলা ১৯৯০, ভাটির চিঠি ১৯৯৮ ও কালনীর কূলে ২০০১ সালে বের হয়। চলতি বছরের মে মাসে তার রচনা সমগ্র বের করে সিলেটের খান বাহাদুর এহিয়া ওয়াকফ এস্টেট।

২০০১ সনে তাকে তার কালজয়ী সৃষ্টির স্বীকৃতির জন্য রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদক প্রদান করা হয়। এছাড়াও ২০০৪ সনে মেরিল প্রথম আজীবন আলো সম্মাননা, ২০০৫ সনে সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক এওয়ার্ড, ২০০৬ সনে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে বাংলাদেশ জাতিসংঘ সম্মাননা, ২০০৬ সনে অভিমত সম্মাননা, ২০০৮ সনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা, ২০০৮ সনে খান বাহাদুর এহিয়া এস্টেট সম্মাননাসহ দেশ বিদেশে অসঙখ্য সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাকে। এছাড়া তিনি ১৯৪৬, ১৯৮৫ ও ২০০৭ সনে বিলাত ভ্রমণ করেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.