দ্রোহ আর বিদ্রোহের ফিনিক্স
রোগ ছিলো ঘর পালানো, যখনই আর পেড়ে উঠতাম না, তখনি ছুট দিতাম আউলা ঘুর্নির ধুলোর মত। এমনি করেই কিভানে যেন পেয়ে বসেছিল বাউন্ডুলেপনা। সেই রোগে আঁধার ঠেলে বেরিয়ে পড়লাম । হাঁটতে হাঁটতে রেলস্টেশন পেড়িয়ে মেঠো পথ। তারপর আরও এগিয়ে সোজা ঝিনুক নদী’র পাড়ে।
তখনো জমাট বাধা অন্ধকার, কখনো যেমন বুকের মাঝে জমাট বাঁধে দীর্ঘশ্বাসেরা; ভোরের আলোয় ফিকে হতে শুরু করেছে। প্রকৃতির অংশের প্রতিকৃতি হিসেবে আমিও সৃষ্টি করতে চাইলাম একই আবহ.....সিগারেটের ধোঁয়া, আঁধার, ধোঁয়াশা...
শীর্ন নদীর ওপাড়ে হেঁটে যাচ্ছিলো কীর্তনিয়ার দল। রাতভর কোথাও ঈশ্বরের কাছে নিবেদনের পর ক্লান্ত দেহে অজানার যাত্রী। হয়তো আবার কোথাও ডাক পড়েছে......। নদীর নাম ‘ঝিনুক’ - তার তীরে পথ বেয়ে উজানে.. আরও উজানে... বংশাই তারপর যমুনা।
সেখানে গান করছিলো এক বাউল, দেড় হাতে তার সঙ্গীতের অণুষঙ্গ। একহাতে একতারা আর অর্ধেক হাতে খঞ্জনী বাজিয়ে আপন মনে গাইছিলো ও। বাতাসে উড়ছিলো তার এলোমেলো রূক্ষ চুল। জনারণ্যে আমি বেমানান, তাই দূরে বসে গান শুনছিলাম একমনে।
তারপর একসময় এক এক করে সব মানুষ ঘরে ফেরে সাঁঝের বর্ণালীতে।
কেবল বাউল তার একতারার টুংটাং এ বিভোর। গিয়ে বসলাম ওর কাছে।
হঠাৎ আমায় জিজ্ঞেস করলো- ”গান শুনবা ?” বললাম- গাও। জানতে চাইলো কি গান, বললাম নদীর গান গাও। ও এক এক করে গেয়ে যাচ্ছিলো নদীর গান আর আমি তন্ময় হয়ে শুনছিলাম।
কখনো পাশে বসে, কখনো দুরে হাটতে হাটতে। রতন বসেছিলো ওর পাশে একঠায়। আমি নদীর গান শুনছি আর নদীর জল ছিটিয়ে দিচ্ছি নিজের মুখে।
এক সময় আবারও ওর পাশে গিয়ে বসলাম। গান থামিয়ে কি যেন ভেবে আমায় জিজ্ঞেস করলো- “গান করো?” আমি মাথা দোলালাম সায় দিয়ে, কিন্তু অবাক হচ্ছিলাম বুঝলো কি করে!! কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো- ”যদি গানই করো তয় আর কিছু আর কইরো না” জানতে চাইলাম কেন।
ও বললো- “দ্যাহো, আমি অইলাম বাউলা মানুষ, বাইরে বাইরেই থাকতাম। কেমনে কেমনে সংসারে জড়াইয়া গেলাম। এহন বাইরে থাকলে ঘর আমারে ডাকে আর ঘরে থাকলে বাইরের আকাশ, নদী আমারে টানে। আমি এহন না ঘরের না পরের। ” কথাগুলো বলতে যেয়ে কি এক বিষাদে ভরে যাচ্ছিলো তার মন....তারপর অনেকটা আনমনেই শুরু করলো তার দরাজ গলায়.....“আর কতকাল ভাসবো আমি দুঃখের সারি গাইয়া..............”
চলে আসার আগে যা কিছু ছিলো সব তুলে দিলাম ওর হাতে, অথচ মনে হলো ........বরং আমিই অনেক কিছু পেলাম।
সে অন্য এক পাওয়া। পরে জেনেছিলাম ও ওই অঞ্চলের খুবই বিখ্যাত এক গায়ক। কিন্তু অর্থের জন্য কখনো গান করেনি।
তারপর ঘরে ফিরে সোজা আমার ঘওে, হাতে তুলে নিলাম গীটার। আমার কানে তখনো বাজছিলো তার কন্ঠস্বর........ তারপর কিভাবে যেন সৃষ্টি হয়ে গেল আমার গান "বাউল"
“হতে বিবাগী বাউল
হারাতে হয় দু’ কূল
আমি কূল ছুঁয়ে কূলে ধাই যে শুধুই
উড়াই স্বপ্নের ফানুস
আমি পথের পথিক নই
নই ঘরের মানুষ......”
এরপর ....... অ.....নে.......ক.......দিন........ অতিক্রান্ত হয়েছে........কিন্তু আমার আর কোন নতুন গান করা হয়নি।
কেন ? সে অন্য গল্প, অন্য আরেক দিন শোনাবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।