গত ১লা সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রচিত “ডানপন্থির বামে বামপন্থির ডানে” শীর্ষক নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। দেশের বিভিন্ন মহলে তা ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। প্রথমে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে উনার এই নিবন্ধ লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। কেননা আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিকরা জ্ঞানভিত্তিক কর্মকান্ডে নিজেদের বেশী ব্যস্ত রাখেন না। বেগম জিয়ার এই নিবন্ধ রচনার উদ্যোগ নিংসন্দেহে অন্য সবাইকে জ্ঞাননির্ভর কর্মকান্ডে উৎসাহিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
বেগম খালেদা জিয়ার এই বিশেষ নিবন্ধ সম্পর্কে দু’চারটি বিষয় উনার দৃষ্টি আকর্শন করতে চাই। প্রথমত: প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান যে গনতন্ত্র হত্যা করে, সংবাদ মাধ্যম নিষিদ্ধ করে এবং বিচার বিভাগের মতা ুন্ন করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একদলীয় স্বৈরশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন-তা আজ আর তেমন একটা উচ্চারিত হচ্ছে না। তৎকালিন পরিস্থিতিকে সামনে এনে শেখ মুজিবুর রহমানকে “স্বৈরশাসন ব্যবস্থার জনক” অভিহিত করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, সত্য প্রতিষ্ঠিত করার েেত্র অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছেন। এই দৃঢ় মনোভাবের জন্য উনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। দ্বিতীয়ত: বেগম খালেদা জিয়া ১৫ আগস্টের ঘটনাকে “অভ্যূথান” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
উনার দলের মহাসচিব হতে শুরু করে প্রায় সবাই সঠিকভাবে ১৫ই আগস্টকে অপব্যাখা করে যাচ্ছেন। প্রয়াই তারা “বিপথগামী সেনাদের অভিযান ” অথবা ’হত্যাকান্ড’ হিসেবে অভিহিত করার চেষ্টা করেন। যা সত্যিই সত্যকে ধামাচাপা দেওযার শামিল। দেশপ্রেমিক জনতা আশা করবে, বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে বেগম জিয়া যেহেতু “১৫ই আগস্ট” কে “অভ্যুথান” হিসেবে অভিহিত করেছেন। সেহেতু ভবিষ্যতে এখন থেকে উনার দলের সর্ব স্তরের নেতাকর্মীরা আর বিভ্রান্ত না হয়ে বরং “অভ্যুথান” হিসেবে অভিহিত করবেন।
বর্তমান সরকারের আমলে ইতিহাস বিকৃতির প্রতিযোগীতায় বেগম জিয়ার এই বিশেষন এবং বিশ্লেষন দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ১৫ই আগস্টের ঘটনার সত্য অনুঘাটনে অনুপ্রেরনা যোগাবে। দেরীতে হলেও বেগম জিয়ার এই উপলব্ধি দেশের জন্য কল্যান বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি।
বেগম খালেদা জিয়া একটি অংশে ১৫ই আগস্টের ঘটনা থেকে জেনারেল জিয়াকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন। ১৫ই আগস্টের অভ্যূথানের সম্পূর্ন কৃতিত্ব খন্দকার মোশতাক আহমেদকে দিতে চেয়েছেন। যা সত্যিই আমার কাছে বিবেচনা প্রসূত বলে মনে হয়নি।
যুক্তিরখাতিরে যদি মেনে নেই জিয়াউর রহমান এই পট পরিবর্তনের সাথে জড়িত ছিলেন না- তাহলে জেনারেল জিয়া কেন ১৯৭৯ সালে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে এই ঘটনার দায়িত্ব নিতে গেলেন? পাঠকদের জ্ঞ্যাতার্থে জানাচ্ছি যে, ৫ম সংশোধনীর ১ম লাইন হল “ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট হতে ১৯৭৯ সালের ৯ই এপ্রিল ( উভয়দিন সহ ) .....................................” জেনারেল জিয়া যদি জড়িত নাই থাকতেন , ১৫ই আগস্টের পর উনাকে কেন সেনা প্রধান নিয়োগ করা হয়েছিল? কেনইবা, ৭ ই নভেম্বর ১৫ই আগস্ট অভ্যূথানের অন্যতম নায়ক কর্নেল মহিউদ্দিন (বর্তমানে কারাগারে আটক) জেনারেল জিয়াকে চ্যঙ্গদোলা করে বন্দিদশা থেকে মতায় বসিয়েছিলেন? কর্নেল মুুহিউদ্দিনের এই ঘটনার জলন্ত সাী বেগম জিয়া নিজেই। তাহলে বেগম খালেদা জিয়া বা কার পরামর্শে বিভ্রান্ত হয়ে জিয়া ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ১৫ই আগস্ট থেকে বিচ্ছিন্ন করছেন?
বেগম জিয়া, আপনাকে অনুরোধ করব, দয়া করে আর বিভ্রান্ত হবেন না। এই কথা অনস্বীকার্য যে, ১৫ই আগস্টের ঘটনা থেকেই বাংলাদেশে ধর্মীয় মূলবোধের বিশ্বাসী, দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তির উম্মেষ ঘটেছে। তাই এই ঘটনালগ্ন থেকে জিয়াউর রহমানকে আড়াল করলে জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যের চিরস্থায়ী ফাটল ধরতে পারে। ফলশ্র“তিতে শত্র“রাই লাভবান হবে।
আশা করব, দেরীতে হলেও জাতীয়তাবাদী সকল শক্তির বৃহৎ ঐক্যের স্বার্থে এবং একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য, আগামী প্রজন্মকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য ১৫ই আগস্ট সম্পর্কিত সর্বশেষ বিভ্রান্তি দূরবেন। তা না হলে ভবিষ্যতে যখন বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে আরও গবেষনা হবে তখন আপনার এই নিবন্ধ আপনার অবস্থানকে আরও সকীর্ন করে তুলবে সম্ভবত: দেশনেত্রী থেকে দলীয় নেত্রীতে।
লেখক: আর.এস.চৌধুরী, নিউর্জাসি, ইউ.এস.এ
( সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক শক্তি- প্রগশ )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।