আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফকির লালন: দেহতত্ত্বের ছয়টি গান

নর্দমার রাত, হিরন্ময় তাঁত

০১. দিল দরিয়ার মাঝে দেখলাম আজব কারখানা। । দেহের মাঝে বাড়ি আছে সেই বাড়িতে চোর ঢুকেছে ছয় জনাতে সিঁদ কাটিছে, চুরি করে একজনা। । এই দেহের মাঝে নদী আছে সেই নদীতে নৌকা চলছে ছয় জনাতে গুণ টানিছে, হাল ধরেছে একজনা।

। দেহের মধ্যে বাগান আছে নানা জাতির ফুল ফুটেছে ফুলের সৌরভে জগত্‌ মেতেছে কেবল লালনের প্রাণ মাতলো না। । ---------------------------------------------------------------- ০২. যে জন হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতেছে, ঘুচেছে তার মনের আঁধার, সে যে দিন ছাড়া নিরিখ বেঁধেছে। ।

হাওয়ার দমে বেঁধে ভেলা অধর চাঁদ মোর করছে খেলা ঊর্ধে নালে সদা চলা বহু সাধন-গুণে কেউ দেখেছে। । হাওয়া দ্বারে দম কুঠরি মাঝখানে অটল বিহারী শূন্য বিহার স্বর্ণ পুরী কলকাঠি তার ব্রহ্মদ্বারে আছে। । মন ছুটে প্রেম-ফাঁসি করে জান শিকারী শিকার ধরে ফকির লালন কয়, বিনয় করে সে ভাব ঘটল না মোর হৃদয়-মাঝে।

। ---------------------------------------------------------------- ০৩. হায় একি কলের ঘরখানি বেঁধে সদায় বিরাজ করে সাঁই আমার। । দেখবি যদি সে কুদরতি দেল-দরিয়ার খবর কর। ।

জলের জোড়া সকল সেই ঘরে তার খুঁটির গোড়া শূনের উপরে শূন্য ভরে সন্ধি করে চার যুগে আছে অধর। । তিল পরিমাণ জায়গা বলা যার শত শত কুঠরি কোঠা তার ও তার নিচে-উপর নয়টা দুয়ার নয় রূপে সাঁই দিচ্ছে বার। । ঘরের মালিক আছে বর্তমান একজন তারে দেখলি নারে, দেখবি আর কখন সিরাজ সাঁই কয়, লালন তোমায় বলব কি সাঁইর কৃতি আর।

। ----------------------------------------------------------- ০৪. হাওয়ার ঘরে দম আটকা পড়েছে কি অপরূপ কারখানা। শুদ্ধ হাওয়া-কলে অনেক দমে চলে হাওয়া নির্বাণ হলে দম থাকে না। । হাওয়া দমে জেকার গণি নিগুম তত্ত্ব শুনি বলতে ডরাই সেসব অসম ভাব-বাণী লীলে নিত্যকারী হাওয়া যোগেশ্বরী হাওয়ার ঘরে দমের হয় লেনাদেনা।

। নির্মল হাওয়ার গুণ বলবো কি আর এক সঙ্গে দম হলো আর অঙ্গে হাওয়া দম খেলছে সদায় ঘরে কলকাঠি যার হাতে বাহিরে সে জনা। । যেজন হাওয়া-শক্তি ধরে যোগে জানতে পারে নিগূঢ় করণ কারণ সেই যাবে সেরে লালন বলে, মোরে কোলে বিষম ঘোর হাওয়ার ফাঁদ পাতিলে যেত সব জানা। ।

----------------------------------------------------------- ০৫. নিরাকার ভাসছে রে এক ফুল। বিধি বিষ্ণু হর আদি পুরন্দর তাদের সে ফুল হয় মাতৃফুল। । বলবো কি সে ফুলের গুণবিচার পঞ্চমুখে সীমা দিতে নারে হর। যারে বলি মূলাধার সেও তো অধর ফুলে আছে ধরা চোর সমুতুল।

। লীলা নিত্য পাত্রস্থিতি সে ফুলে সাধকের মূল বস্তু এ ভূ-মণ্ডলে। সে যে বেদের অগোচর সে ফুলের নাগর সাধুজনা ভেবে করেছে উল। । কোথায় বৃক্ষ হারে কোথায় রে তার ডাল তরঙ্গে পড়ে ফুল ভাসছে চিরকাল।

। সে যে কখন এসে অলি মধু খায় সে ফুলি লালন বলে, চাইতে গেলে দেয় ভুল। । --------------------------------------------------------- ০৬. আঠারো মোকামে একটি রূপের বাতি জ্বলছে সদাই। নাহি তেল তার নাহি তুলা আজগুবি হয়েছে উদয়।

। মোকামের মধ্যে মোকাম শূন্য শিখর বলি যার নাম বাতির লুন্ঠন সেথায় সুদন ত্রিভুবনে কিরণ দেয়। । দিবানিশি আট প্রহরে এক রূপে চার রূপ ধরে বর্ত থাকতে দেখলি নারে ঘুরি মলি বেদের বিধায়। ।

যে জানে সে বাতির খবর ছুটেছে তার নয়নের ঘোর সিরাজ সাঁই কয়, লালন রে তোর দৃষ্ট হয় না মনের দ্বিধায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।