নর্দমার রাত, হিরন্ময় তাঁত
০১.
দিল দরিয়ার মাঝে দেখলাম আজব কারখানা। ।
দেহের মাঝে বাড়ি আছে
সেই বাড়িতে চোর ঢুকেছে
ছয় জনাতে সিঁদ কাটিছে,
চুরি করে একজনা। ।
এই দেহের মাঝে নদী আছে
সেই নদীতে নৌকা চলছে
ছয় জনাতে গুণ টানিছে,
হাল ধরেছে একজনা।
।
দেহের মধ্যে বাগান আছে
নানা জাতির ফুল ফুটেছে
ফুলের সৌরভে জগত্ মেতেছে
কেবল লালনের প্রাণ মাতলো না। ।
----------------------------------------------------------------
০২.
যে জন হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতেছে,
ঘুচেছে তার মনের আঁধার, সে যে
দিন ছাড়া নিরিখ বেঁধেছে। ।
হাওয়ার দমে বেঁধে ভেলা
অধর চাঁদ মোর করছে খেলা
ঊর্ধে নালে সদা চলা
বহু সাধন-গুণে কেউ দেখেছে। ।
হাওয়া দ্বারে দম কুঠরি
মাঝখানে অটল বিহারী
শূন্য বিহার স্বর্ণ পুরী
কলকাঠি তার ব্রহ্মদ্বারে আছে। ।
মন ছুটে প্রেম-ফাঁসি করে
জান শিকারী শিকার ধরে
ফকির লালন কয়, বিনয় করে
সে ভাব ঘটল না মোর হৃদয়-মাঝে।
।
----------------------------------------------------------------
০৩.
হায় একি কলের ঘরখানি বেঁধে
সদায় বিরাজ করে সাঁই আমার। ।
দেখবি যদি সে কুদরতি
দেল-দরিয়ার খবর কর। ।
জলের জোড়া সকল সেই ঘরে
তার খুঁটির গোড়া শূনের উপরে
শূন্য ভরে সন্ধি করে
চার যুগে আছে অধর। ।
তিল পরিমাণ জায়গা বলা যার
শত শত কুঠরি কোঠা তার
ও তার নিচে-উপর নয়টা দুয়ার
নয় রূপে সাঁই দিচ্ছে বার। ।
ঘরের মালিক আছে বর্তমান একজন
তারে দেখলি নারে, দেখবি আর কখন
সিরাজ সাঁই কয়, লালন
তোমায় বলব কি সাঁইর কৃতি আর।
।
-----------------------------------------------------------
০৪.
হাওয়ার ঘরে দম আটকা পড়েছে
কি অপরূপ কারখানা।
শুদ্ধ হাওয়া-কলে অনেক দমে চলে
হাওয়া নির্বাণ হলে দম থাকে না। ।
হাওয়া দমে জেকার গণি
নিগুম তত্ত্ব শুনি
বলতে ডরাই সেসব অসম ভাব-বাণী
লীলে নিত্যকারী
হাওয়া যোগেশ্বরী
হাওয়ার ঘরে দমের হয় লেনাদেনা।
।
নির্মল হাওয়ার গুণ বলবো কি আর
এক সঙ্গে দম হলো আর
অঙ্গে হাওয়া দম খেলছে সদায়
ঘরে কলকাঠি যার হাতে বাহিরে সে জনা। ।
যেজন হাওয়া-শক্তি ধরে
যোগে জানতে পারে
নিগূঢ় করণ কারণ সেই যাবে সেরে
লালন বলে, মোরে
কোলে বিষম ঘোর
হাওয়ার ফাঁদ পাতিলে যেত সব জানা। ।
-----------------------------------------------------------
০৫.
নিরাকার ভাসছে রে এক ফুল।
বিধি বিষ্ণু হর
আদি পুরন্দর
তাদের সে ফুল হয় মাতৃফুল। ।
বলবো কি সে ফুলের গুণবিচার
পঞ্চমুখে সীমা দিতে নারে হর।
যারে বলি মূলাধার
সেও তো অধর
ফুলে আছে ধরা চোর সমুতুল।
।
লীলা নিত্য পাত্রস্থিতি সে ফুলে
সাধকের মূল বস্তু এ ভূ-মণ্ডলে।
সে যে বেদের অগোচর
সে ফুলের নাগর
সাধুজনা ভেবে করেছে উল। ।
কোথায় বৃক্ষ হারে কোথায় রে তার ডাল
তরঙ্গে পড়ে ফুল ভাসছে চিরকাল।
।
সে যে কখন এসে অলি
মধু খায় সে ফুলি
লালন বলে, চাইতে গেলে দেয় ভুল। ।
---------------------------------------------------------
০৬.
আঠারো মোকামে একটি রূপের বাতি জ্বলছে সদাই।
নাহি তেল তার নাহি তুলা আজগুবি হয়েছে উদয়।
।
মোকামের মধ্যে মোকাম
শূন্য শিখর বলি যার নাম
বাতির লুন্ঠন সেথায় সুদন
ত্রিভুবনে কিরণ দেয়। ।
দিবানিশি আট প্রহরে
এক রূপে চার রূপ ধরে
বর্ত থাকতে দেখলি নারে
ঘুরি মলি বেদের বিধায়। ।
যে জানে সে বাতির খবর
ছুটেছে তার নয়নের ঘোর
সিরাজ সাঁই কয়, লালন রে তোর
দৃষ্ট হয় না মনের দ্বিধায়। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।