সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ রমনী কোন ভেদাভেদ নাই। বিশ্বে যা কিছু মহান, সৃষ্টি চির কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর...........। আমি রক্তে, মাংসে গড়া অতি সাধারন এক মানুষ........... তবে আমি প্রচন্ড রকমের স্বপ্নবিলাসি। সেসব স্বপ্নের কিছ * পৌরণিক ভালোবাসা---
ভালোবাসাবাসির যে চিরায়ত ঘটনা তা কিন্তু চলে আসছে সুপ্রাচীনকাল থেকেই। এমন কি মানব ইতিহাস ছেড়েও কল্পকাহিনী আর পৌরণিক জগতেও ভালোবাসার অবস্থান দীর্ঘদিন থেকেই।
গ্রিক পুরানের মত অনুযায়ী স্বর্গীয় দেবতা কিউপিডের তীরের আঘাতেই মানব হৃদয়ে জন্ম নেয় প্রেমের অনুভূতি। নিষ্পাপ মুখম্রী আর সোনালী চুলের এই দেবতা তার স্বর্গীয় ধনুক থেকে তীর বর্ষন করে দুটি হৃদয়ের দেয়াল ভেঙে দেয়। ফলে তারা চলে আসে পরষ্পরের কাছাকাছি। ভালোবাসার দেবতা হিসেবে কিউপিডের যে স্বতন্ত্র অবস্থান সেটা প্রেমের প্রতি স্বর্গের এক অনন্য স্বীকৃত বলেও মনে করেন প্রেমিক-প্রেমিকারা। যদিও ভালোবাসার দেবতা কিউপিডের নিজের জন্ম ইতিহাসটি নিয়ে ই গ্রিক ও রোমান পুরাণে রয়েছে নানা বিতর্ক।
কারো কারো মতে কিউপিডের জন্ম হলো মারকারি আর ভেনাসের ওরসে। এ ছাড়া কারো মতে মূলত মার্স ও ভেনাসের স্বর্গীয় কোলেই প্রথম হেসে ওঠে কিউপিড। মজার বিষয় হলো ভালোবাসার দেবতা হিসেবে কিউপিডের স্বীকৃতির পেছনেও রয়েছে মজার একটি ঘটনা। ভেনাসের পক্ষ থেকে কিউপিডকে একসময় মর্ত্যলোকে পাঠানো হয়েছিল রুপ নিয়ে নিয়ে গর্ব করা মেয়েদেরকে শায়েস্তা করবার জন্য। কিন্তু মর্ত্যলোকের এক নারীর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে কিউপিড নিজেই উল্টো তার প্রেমে পড়ে যান।
অন্যকে ঘায়েল করার পরিবর্তে তীর ওঠান নিজের শরীরের দিকেই। কিউপিডের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ভেনাস তাকে নানা কূট-কৌশলের মাধ্যমে শাস্তি দেবার চেষ্টা করেন। তবে এতে দমে না গিয়ে নিজের ভালোবাসা দিয়েই একসময় সবকিছু জয় করে নেয় কিউপিড। আর এই কারনেই শত প্রতিবন্ধকতার মাঝে ভালোবাসার বন্ধনে অবিচল থাকার প্রতিক হয়ে ওঠে কিউপিড।
* লাইলি-মজনু---
নানা সময়ে মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে যে ভালোবাসার গল্পগুলো তার মধ্যে লাইলি-মজনুর অমর প্রেমগাঁথা আলোচিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
যদিও কালজয়ী এই প্রেমের কাহিনীর সত্যাসত্য নিরূপণ করা এখন অনেকটাই কষ্টসাধ্য। সময়ের বিবর্তনে নানা জাতি আর নানা দেশের মানুষের মুখে মুখে লাইলি-মজনুর গল্প বিবর্তিত হয়েছে নানাভাবে। যদিও অধিকাংশ কাহিনীতেই নায়ক মজনু আবির্ভূত হয়েছেন একজন রাজপুত্র ও কবি হিসেবে। অন্যদিকে লাইলির পরিচয় হিসেবে বেদুইন সর্দারের মেয়ের পরিচয়টিই সবচেয়ে বেশি এসেছে। ইতিহাসবিদদের একটি অংশ মনে করেন মজনু নামের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক পুরুষটি প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন আরবের বিখ্যাত কবি কয়েস বিন আমর।
এদের ধারণা অনুযায়ী আরবিতে মজুনু বা মাজনুন শব্দটির অর্থ প্রেমে উন্মাদ বলেই কয়েস-এর নাম কালক্রমে মজুনু হিসেবে পরিচিতি পায়। কয়েস ওরফে মজনু ছিল আল বাহরামের সুলতান আমর-বিন-আবদুল্লাহ'র পুত্র। সুলতান রাজ্যচ্যুত হওয়ার পর কয়েসকে সাথে নিয়েই আশ্রয় নেন একটি সরাইখানায়। আর সে সময়ই কয়েস প্রেমে পড়েন হিজ্জা সর্দার আল মাহদীর কন্যা লায়লা ওরফে লাইলি'র। কয়েসের সব কবিতাই ছিল এই লায়লাকে নিয়ে।
লায়লা আর কয়েসের এই প্রেমের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বুরিদানের বাদশা নওফেল। অসামান্য রূপসী লায়লাকে একবার দেখেই তার প্রেমে পড়ে যায় নওফেল। লায়লাকে পাওয়ার জন্য নানান কৌশলও করতে থাকে সে। তবে পশুপ্রেমিক লায়লা'র পোষা হরিণ জিন্দান শিকারি নওফেলের তীরবিদ্ধ হয়ে মারা গেলে প্রেমের পরিবর্তে লায়লার অভিশাপই জোটে নওফেলের ভাগ্যে। জিন্দানের শোকে মুহ্যমান লায়লা কামনা করে নওফেলের অপমৃত্যু।
এরই মাঝে শাহজাদা কয়েস আর রূপবতী লায়লার বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়। তবে এরই মাঝে একটি ভিন্ন ঘটনা লাইলি-মজনুর প্রেমকে ঠেলে দেয় বিরহের প্রান্তরে। বিয়ের আসরে লায়লার পোষা কুকুর ওজজা'কে দেখে ব্যাকুল কয়েস বলে ওঠে 'এই মুখে তুই লায়লার পায়ে চুমু খেয়েছিস!' আর এরপরই প্রেমের অতিশয্যে ওজজার মুখে চুমু খেয়ে বসে কয়েস। কয়েসের এই কাণ্ড দেখে উপস্থিত সবাই তাকে পাগল ভাবতে থাকে। বেঁকে বসেন স্বয়ং বাদশাহ্ও।
বিয়ের আসর থেকে অপমানিত হয়ে কয়েস নিরূদ্দেশ হয় মরুভূমির পথে। অন্যদিকে কোনো উপায়ান্তর না দেখে লায়লার পিতা সওদাগর আল মাহদি কুচক্রী নওফেলের সঙ্গেই লায়লার বিয়ের উদ্যোগ নেন। তবে ফুলশয্যার রাতে অবিশ্বাস্যভাবে ফলে যায় লায়লার দেওয়া অভিশাপ। নিজের হাতে পান করা শরবতের বিষক্রিয়ায় মারা যায় নওফেল। আর পোষা কুকুর ওজজাকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায় লায়লা।
প্রিয়তম কয়েসের খোঁজে মরুভূমির মরীচিকার মাঝে ঘুরতে থাকে লায়লা। কিন্তু সেই রাতের সাইমুম মরুঝরে রচিত হয় লাইলি-মজনুর প্রেমের সমাধি। পরদিন পথচলতি কাফেলা বালির স্তূপের নিচে আবিষ্কার করে লায়লা, কয়েস আর কুকুর ওজজার মরদেহ।
* শিরি-ফরহাদ---
লাইলি-মজনুর অমর প্রেমগাঁথার মতো শিরি-ফরহাদের প্রেমের কথাও যুগে যুগে ফিরেচে বহু মানুষের মুখে। তবে নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে প্রাচীন এই ইরানি লোকগাঁথাটিকেও।
এর মধ্যে সবচেয়ে সমর্থনযোগ্য যে সূত্রগুলো পাওয়া যায় তাতে শিরিন কে দেখানো হয়েছে রানি বা রাজকন্যা হিসেবে। তবে নায়ক ফরহাদের পরিচয় দিতে যেয়ে কেউ তাকে উল্লেখ করেছেন বাঁধ নির্মাতা হিসেবে, আবার কেউবা তাকে আখ্যায়িত করেছেন স্থপতি বা ভাস্কর হিসেবে। এক্ষেত্রে যেসব ইতিহাসবিদ ফরহাদকে বাঁধ নির্মাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তাদের যুক্তি হলো ফর্হাদ শব্দটি হলো 'বৃত্ত' বা বাঁধের কাছাকাছি। এই ধারায় বিশ্বাসীদের বর্ণিত কাহিনীতে দেখা যায় নায়িকা শিরি একসময় ফরহাদকে বলেছিল যে, 'তুমি যদি ওই নদীতে বাঁধ তৈরি করতে পারো তাহলেই আমাকে পাবে। ' ফরহাদ শিরিকে পাবার জন্য এই অসম্ভবকে সম্ভব করার আশায় কাজে নামে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বাঁধ ভেঙে জলের তোড়ে মারা যায় ফরহাদ। আর তার দুঃখে শিরিও পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে আরেকটি নির্ভরযোগ্য কাহিনীতে ফরহাদকে দেখানো হয়েছে হতভাগা এক ভাস্কর হিসেবে। ফরহাদের বিশ্বাস এবং গর্ব ছিল যে তার বানানো মূর্তির চেয়ে সুন্দর দুনিয়ার আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু হঠাত্ করে কোহে আরমান রাজ্যের রাজকন্যা শিরির হাতে আঁকা একটি ছবি দেখে সেই অহঙ্কার চূর্ণ হয়ে যায় ফরহাদের।
শিরির রূপে পাগলপ্রায় ফরহাদ তখন একের পর এক শিরির মূর্তি গড়তে শুরু করেন। একদিন উন্মাদপ্রায় ফরহাদের সাথে সামনাসামনি দেখাও হয়ে যায় শিরির। কিন্তু রাজ্য আর ক্ষমতার কথা চিন্তা করে ফরহাদকে ফিরিয়ে দেয় শিরি। তবে শিরির এই প্রত্যাখ্যান যেন ফরহাদের মনে নতুন করে জ্বালিয়ে দেয় প্রেমের আগুন। বেসাতুন পবর্তকে শিরির স্মৃতি ভাস্কর হিসেবে গড়ে তুলতে কঠোর পরিশ্রম শুরু করে সে।
ফরহাদের এই ঘটনা শুনে শিরিও স্থির থাকতে পারে না। সিংহাসন তুচ্ছ করে সে ছুটে যায় বেসাতুন পর্বতে ফরহাদের কাছে। পরবর্তীতে এক ভূমিকম্পে দু'জনই একসঙ্গে প্রাণ হারায়।
* ইউসুফ-জুলেখা ---
ভাগ্যের পথ পরিক্রমায় একসময় দাস হিসেবে আজহার নামের এক শস্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি হয়ে যান বালক ইউসুফ। আর এই আজহারের সঙ্গে ঘটনাক্রমে রাজপ্রাসাদে গিয়েই তার পরোপকারবৃত্তির গুণে চোখে পড়ে যান শস্য অধিকর্তা আজিজের।
এদিকে স্বামীর মুখেই জুলেখা প্রথম শোনেন ইউসুফের কথা। পরে ইউসুফের রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজেদের বাগানের মালি হিসেবেও নিয়োগ দেন জুলেখা। দিনে দিনে ক্রমেই ইউসুফের প্রতি আসক্তি বাড়তে থাকে সুন্দরী জুলেখার। কিন্তু ইউসুফ এই প্রেমকে অন্যায় জেনে প্রত্যাখান করেন। আর প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হবার এই অপমান সইতে না পেরে জুলেখা সম্ভ্রমহানির অভিযোগ আনেন ইউসুফের বিরুদ্ধে।
তার অভিযোগ অনুযায়ী বন্দী করা হয় ইউসুফকে। এদিকে বন্দী থাকা অবস্থাতেই স্বপ্নের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে ফারাও রাজের বিশ্বস্ততা অর্জন করেন ইউসুফ। একসময় ভুল বুঝতে পেরে জুলেখাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিতেও উদ্যত হন বাদশা। তবে ইউসুফের অনুরোধে তাকে প্রাণে না মেরে নির্বাসনে পাঠানো হয়। আর ইউসুফকে নিযুক্ত করা হয় শস্য অধিকর্তা।
এরই মাঝে কেটে যায় আরও কিছুদিন। ঘটনাক্রমে ইউসুফ আবারও দেখা পান জুলেখার। কিন্তু এবার জুলেখাই ফিরিয়ে দেন ইউসুফকে। সময় চান আরও ১৪ বছর। তবে ১৪ বছর পর আর দেখা হয়নি ইউসুফ-জুলেখার।
* রাধা-কৃষ্ণ ---
যুগে যুগে অমর প্রেম নিয়ে যতো গল্পগাঁথা রচিত হয়েছে তার মধ্যে রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে রচিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পদাবলী, কীর্তন, পালাগান আর লোকসংগীত। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে কৃষ্ণকে মূলত পাওয়া যায় পরোপকারী, ধার্মিক ও প্রেমিক এই তিন রূপে। এর মধ্যে কৃষ্ণের প্রেমিক রূপের পরিচয় পাওয়া যায় তার বৃন্দাবন লীলায়। হিন্দুশাস্ত্র মতে বিষ্ণু অবতাররূপী দ্বাপরযুগে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণ। অন্যদিকে রাধা ছিলেন বৃষভানুর কন্যা।
যৌবনে আয়ান ঘোষের সাথে বিয়ে হয় রাধার। কিন্তু রাধার জীবনের একটি বড় সময়ই কাটে কৃষ্ণের বিরহ আর প্রেমে। কৃষ্ণের প্রতি রাধার যে প্রেম সেখানে এক হয়ে মিশেছে পরমাত্মা আর জীবাত্মা। আর পরমাত্মার সাথে এই প্রেমের সম্পর্ক তথা কৃষ্ণলীলার কারণেই এক গোয়ালার কন্যা রাধা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছেন ইতিহাসে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।