সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে চোরাচালানীদের মাধ্যমে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় সোয়ইন ফ্লু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পাশের দেশ ভারতে সোয়াইন ফ্লুর মহামারী অবস্থা চলছে। সীমান্তপথে উভয় দেশে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক লোক যাতায়াত করছে। এছাড়া চোরাচালানীরা সীমান্তপথে গোপনে প্রতিদিন অবৈধভাবে যাতায়াত করে।
এরা সোয়াইন ফ্লুর ঝুঁকি এড়াতে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। সোয়াইন ফ্লু সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই কিংবা এ নিয়ে তাদের গুরম্নত্ব দেয়ার সময়ও নেই। এদের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় সোয়াইন ফ্লু ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
অপরদিকে সীমান্তপথে বিপুলসংখ্যক লোক যাতায়াত করায় এবং তাদের শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনা চাহিদার তুলনায় সীমিত থাকায় সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ছে বলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ধারণা করছেন। চোরাচালানীরা সীমান্ত-পথে রাতের বেলা বেশি যাতায়াত করে থাকে।
তাই সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থাকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর তাগিদ দিয়েছে দেশের খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ।
এদিকে রাজধানীসহ আশপাশের সরকারি হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লুর উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন দ্বিগুণ হারে রোগী আসছে বলে জানা গেছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও বক্ষব্যাধি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, এখন আর সোয়াইন ফ্লু সনাক্ত করার জন্য মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ‘স্যাম্পল’ প্রেরণ করার প্রয়োজন নেই। লক্ষণ দেখে তারা সোয়াইন ফ্লুর চিকিৎসা দিচ্ছেন। এর ফলে আইইডিসিআরে সোয়াইন ফ্লু সন্দেহে স্যাম্পল আসা অনেক কমে গেছে।
অবশ্য সরকারিভাবে এই প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করেই সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তদের সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে। আইইডিসিআর-এর এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের নিয়োজিত সার্ভিলেন্স টীম দেশের ১৮টি হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে প্রেরণ করছে। শুধুমাত্র এই প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা জানা যাবে না বলে ওই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন। তার মতে, দেশে ব্যাপকহারে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্তদের সংখ্যা হাজার হাজার হতে পারে।
এই মুহূর্তে প্রতিরোধ সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা কার্যক্রম ব্যাপকহারে প্রচার ছাড়া বিকল্প কিছু করার নেই। এই রোগ সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে সোয়াইন ফ্লু সনাক্তকারী ওই কর্মকর্তারা জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, গতকাল শুক্রবার সোয়াইন ফ্লুতে আরো ৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮১ জন এবং মারা গেছে ১ জন। সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে সরকার সর্বাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
হিলি সীমান্তে ঝুঁকির মুখে ৫ হাজার মানুষ
হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুর জেলার হিলি-স্থলবন্দরের প্রায় ৫ হাজার বিভিন্ন পেশার মানুষ সোয়াইন ফ্লুর তীব্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বন্দরে ভারত থেকে প্রতিদিন আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর চালক ও হেলপারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় সোয়াইন ফ্লু ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। প্রতিদিন ভারতীয় প্রায় ২শ’ ট্রাকের ৪শ’ চালক ও হেলপার দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে থাকে।
হিলি ইমিগ্রেশনে শুধু ভারত থেকে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রীদের জন্য পোর্ট মেডিক্যাল টিমের ১ জন ফার্মাসিস্ট ও ১ জন মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট কাজ করলেও তাদের কাছে তথ্য সংগ্রহ ছাড়া অন্য কোন ধরনের জিনিসপত্র নেই। যার ফলে তীব্র ঝঁুকির মধ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসাবে রাজস্ব প্রদানকারী হিলিবন্দরের সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর কতর্ৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোন মাথাব্যথা নেই। স্থলবন্দরে কর্মরতদের মাঝে সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের ঝঁুকি এড়াতে এখন পর্যন্ত স্থলবন্দরে কোন প্রকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। শুক্রবার হিলি-স্থলবন্দরে সরজমিনে দেখা গেছে, ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আসা চালক ও হেলপাররা আগের মতোই অবাধে বন্দরের ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে হিলিবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে স্থলবন্দরে কোন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যা নেয়া হয়েছে তা শুধু ভারত থেকে আসা পার্সপোটধারী পাত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
ফলে আমাদের মাঝে একটি আতংক কাজ করছে। স্বাস্থ্য বিভাগের স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও স্থলবন্দরে সোয়াইন ফ্লু সম্পর্কে সচেতনতামূলক কোন আলোচনা কিংবা অন্য কোন তথ্য জানাননি। ফলে তারা সবাই সোয়াইন ফ্লুর ঝঁুকির মধ্যে রয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
রাজশাহীতে আক্রান্ত ৫, একজন হাসপাতালে
রাজাহী অফিস জানায়, ভারত পাশের দেশ হওয়ায় সোয়াইন ফ্লু ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ। রাজশাহীতে গত এক সপ্তাহে পাঁচজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
এর মধ্যে একজনকে গতকাল শুক্রবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধীন সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা: জহুরম্নল ইসলাম গতকাল এই খবর নিশ্চিত করেছেন। আক্রান্ত ঐ রোগীর নাম শামীম আরা (৫১)। রাজশাহীতে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী হিসেবে এই মহিলাই প্রথম। তার অবস্থা বর্তমানে উন্নতির দিকে বলে দাবি করা হয়েছে।
এছাড়া অপর চার জন ঢাকায় সনাক্ত হয়ে নিজ বাড়িতেই চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন রাজশাহীর পুঠিয়া এবং দুইজন পবা উপজেলার।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী গতকাল বিকেলে হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ঐ রোগীর সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন।
হাসপাতাল ছাড়ছেন আতংকিত রোগীরা
সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত সন্দেহে রোগীকে সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করার পর শুক্রবার পর্যন্ত গত ২ দিনে অন্য ২০ জন রোগী হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে।
ঢাকায় সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে কলেজ ছাত্র ইমরম্নল (১৯) নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল। গত বুধবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তির জন্য আনা হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি না করলে তাকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর নির্দেশে তাকে বিকালে সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সোয়াইন ফ্লু রোগী হাসপাতালে ভর্তি করার পর অন্য রোগীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত ২০ জন রোগী কোন ছাড়পত্র ছাড়া&ই স্ব ইচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়।
হাসপাতালে অন্যান্য রোগী, কর্তৃপক্ষ, নার্স ও চিকিৎসকদের মধ্যেও আতংক দেখা দিয়েছে।
দেশের সব হাসপাতালে বিশেষ
প্রস্ত্ততি রয়েছে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
এদিকে এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী গতকাল রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি ও পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনকালে সোয়াইন ফ্লু বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরিতে মিডিয়ার ভূমিকার প্রশংসা করেন। রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন পুরোপুরি মেনে চলছে এবং দেশের সকল হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষ প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। উপদেষ্টা সোয়াইন ফ্লুর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপারে গুরম্নত্বারোপ করেন।
উপদেষ্টার সফরকালে তাঁর সঙ্গী ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারম্নক চৌধুরী, সিভিল সার্জন ডা. জহুরম্নল ইসলাম, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কো-অর্ডিনেটর ড. আকিওরি কামা, কনসালটেন্ট প্রফেসর লায়লা পারভীন বানু প্রমুখ।
সূত্র: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।