সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!
মাসের প্রথম তারিখটাতে বউয়ের ভালবাসাটা অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যায়। আমার সবকিছুতেই তার অতিমাত্রায় খেয়াল। মনে হয় দেবী আফ্রোদিতি যেন স্বয়ং নেমে এসেছেন এ ছন্নছাড়ার গৃহে। তবে দিন বাড়ার সাথে সাথে তার চরিত্রে ক্রমান্বয়ে বিপরীতার্থক পরিবর্তন ঘটে। বিশেষ করে শেষ সপ্তাহে ভদ্রমহিলা একেবারে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন।
এ সময়ে 'কালি'র একবারে কঠিন রূপটাই যেন দেখতে পাই তার মাঝে। 'একটা অযোগ্যকে বিয়ে করা ভুল হয়েছে' এ কথাটা দিনের মধ্যে বহুবার শুনতে হয় তখন। অনেক ভাল প্রস্তাব (তার মতে) থাকা সত্ত্বেও আমার হাতে তাকে সপে দেওয়ার জন্য ওনার বাবা অর্থাৎ আমার স্বর্গীয় শ্বশুর মহাশয়ের ভাগেও কিছু তিরস্কার স্থানান্তরিত হয়।
একটা চাকরির জন্য কতজনের কাছেই না গিয়েছি, কত জায়গাই না ধরণা দিয়েছি। এমনই এক ধরণা দিতে গিয়েছিলাম একজন জনপ্রতিনিধির কাছে।
দূরসম্পর্কের আত্মীয়তার কিছুটা বন্ধনও ছিল তার সঙ্গে। বহুদিন চেষ্টার পর একদিন বিকেলে মহোদয়ের দেখা পেলাম। আমাকে বললেন, আজকে আমার সময় নেই, তুমি আরেক দিন আস। আমতা আমতা করে জানতে চাইলাম, স্যার কবে আসব? ওনি খানিকটা তিরস্কারের স্বরেই বললেন, প্রয়োজনটা যেহেতু তোমার সেহেতু আমাকে খুঁজে নেয়ার দায়িত্ব তোমারই। আমি তোমাকে খুঁজব না।
অথচ নির্বাচনের সময়ে এই লোকটা কতইনা অমায়িক হয়ে যান। মনে হয় তাঁর সঙ্গে আমাদের কত জনমের বন্ধন।
ব্রাজিলে সান্টোস নামের একটা ফুটবল ক্লাব আছে। পেলে, বেকেনবাওয়ারের মতো জগতশ্রেষ্ঠরা এক সময়ে এই ক্লাবে খেলতেন। সুদিন চিরস্থায়ী হয়না।
এক সময় ক্লাবটি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে। দেনায় দায়ে মহান পেলের ১০ নম্বর জার্সিটি নিলামে বিক্রি করা হয়। শর্ত থাকে যে এই ক্লাবের কোন খেলোয়ার আর কোনদিন ১০ নম্বর জার্সি গায়ে জড়াতে পারবেনা। ইতালির নেপলসেও নেপোলী নামের একটি ফুটবল ক্লাব আছে। ম্যারডোনা, ক্যারেকার মতো সর্বকালের সেরারা সে ক্লাবে খেলতেন।
সে সময়ে ইতালিয়ান ফুটবলের শিরোপাও ক্লাবটি কয়েকবার জয় করে। মহাদেশীয় ফুটবলেও এর প্রতাপ ছিল। মিডিয়া, এজেন্ট, সমর্থক পৃষ্ঠপোষকদের সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই ক্লাবটি। কিন্তু সেই স্বর্ণালী সময় আর এখন নেই। ক্লাবটি এখন ইতালির তৃতীয় বিভাগের দল।
তেমনি স্বাধীনতার আগে কিংবা স্বাধীনতার কিছুকাল পরেও ওয়ান্ডারয়ার্স, ভিক্টোরিয়ার মতো দলগুলোর ঢাকার ফুটবলে প্রবল প্রতাপশালী ছিল। আজকাল সে ক্লাবগুলোর নামও শুনা যায়না।
এক সময়ের জনপ্রিয় এ ক্লাবগুলোর অঙ্গন জমে থাকত সমর্থক, মিডিয়া, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, পৃষ্ঠপোষক, বিজ্ঞাপনদাতা আর শুভাকাংখীদের ভীড়ে। কিন্তু আজ এই পড়ন্ত সময়ে এই ক্লাবগুলোর খবরও কেউ রাখেনা। তাহলে কি এইসব ক্লাবের সমর্থক, পৃষ্ঠপোষক, শুভাকাংখী আর এজেন্টরা হারিয়ে গেছেন? না, তারা হারাননি।
সময় বিবেচনায় এখন তারা ভাল সময় অততিক্রম করছেন এমন ক্লাবের অঙ্গনে ভীড় জমান, পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
এই বাংলায় দূর্গাপুজাটা মহারম্বরে পালন করা হয়। দূর্গা দুর্গতিনাশিনী। বাংলা প্রাকৃতিক আর মানবসৃষ্ট দুর্যোগের চারণভুমি। এখানকার অধিবাসীরা সময়ে সময়ে প্রাকৃতিক আর ভিনদেশীদের অত্যাচারে জর্জরিত।
তাই তারা দেবী দূর্গার উপস্থিতি এবং তার সাহায্য কামনা করে। পক্ষান্তরে মারাঠা, গুজরাট আর মুম্বাইয়ের লোকেরা ধনী ব্যবসায়ীরা। তাই ব্যবসার উন্নতির জন্য তাঁরা দূর্গাপুত্র সিদ্ধিদাতা গণেশ-কে তুষ্ট করে। প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের উপস্থিতি সেখানে কম বিধায় দেবী দূর্গার আবেদন সেখানে তুলনামূলকভাবে কম। আসলে মানুষ তাকেই মূল্য দেয় যে তার চাহিদা পূরণ করতে পারে, যাকে দিয়ে তার মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
মানুষ নিজের প্রয়োজন মিটাতে তার রূপ পরিবর্তনে বিন্দুমাত্র সময় অপচয়ে রাজি নয়।
তবে নিজের রূপ বদলানোর এই প্রতিযোগিতায় রাজনীতিবিদ নামক প্রজাতিটির ধারেকাছেও মানুষের অন্য প্রজাতিগুলো নেই। মহোদয়রা সকালে এক আচরণ আর রাত্রে আরেক আচরণ করেন। নীতির গালভরা বুলি দিয়ে মঞ্চ কাপান, মানুষকে স্বপ্ন দেখান। আবার স্বার্থের ডাক পেলে কথিত নীতি বিসর্জন দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না।
তারা নিজেরাই বলেন, তাদের নীতিতে শেষ বলে কোন কথা নেই।
আসলে মানুষ স্বার্থের তাগিদে ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ বদলায়। যে পোষক তার চাহিদা পূরণে অক্ষম তাঁর কোন আবেদন নেই মানুষের কাছে। তাঁকে ত্যাগ করতে সে মোটেও কষ্ট পায়না, আগপাছ ভাবেনা। রূপ বদলানোর এই প্রবৃত্তিতে অন্যকোন প্রাণীর চেয়ে মানুষ অনেক বেশি দক্ষ, অনেক বেশি সক্ষম।
সময়ের সাথে, চাহিদা অনুযায়ী বিবর্তিত হতে পারে বলেই হয়তো মানুষ শ্রেষ্ঠ। কাজেই এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদাহরণের সময়ে নিজেদের আগলে রেখে ইতর প্রাণীর নাম ভাঙ্গানো কেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।