কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।
জোয়ানের অধিবাসী ক্রিস্টোফার কলম্বাস। জাতে তাঁতী। তাঁত চালাতে চালাতে সব সময় ভাবতেন একদিন জাহাজ চালাবেন। জোয়ান ও ভেনাসের নাগরিকদের তখন বেশ সুনাম।
নৌ-বাণিজ্যে উভয় দেশের দক্ষতা চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছে। নৌ-বাণিজ্যের জন্য কলম্বাসকে কয়েক বার সমুদ্র ভ্রমন করতে হয়েছে। একদিন তিনি এসে থামলেন লিসবন শহরে। লিসবন পর্টুগালের রাজধানি। তিনি এই শহরের প্রেমে পরে গেলেন।
সেই সাথে প্রেমে পরলেন এক ত্বনীর। যেন গোটা পর্টুগালকেই ভালবেসে ফেললেন।
লিবসনে বিয়ে শাদি করে স্থির হয়েও ছটফট করতে থাকেন কোন এক অজ্ঞাত কারনে। মন তার অস্থীর। একদিন গেলেন রাজদরবারে দর্শনার্থী হয়ে।
দ্বিতীয় জন তখন পর্টুগালের রাজা।
অনেক তর্কাতর্কির পর কলম্বাস তাকে বুঝাতে পারলেন যে পৃথিবীটা চেপ্টা নয় গোল। কাজেই লিবসন থেকে যদি পশ্চিম দিকে জাহাজ চলে সে জাহাজ একদিন ভারতবর্ষে পৌঁছাবেই। কলম্বাসের কথা শুনে রাজা খুশি হলেন। তিনি বললেন---- যাও বাবা তৈরী হয়ে নাও।
লোক-লস্কর, জাহাজ রসদ সব আমি দিচ্ছি তুমি দিন তারিখ ঠিক কর।
আনন্দে অতিশয্যে কলম্বাসের চোখে পানি এসে গেল। রাজা তাকে আশির্বাদ করলেন--- তোমার মহান উদ্দেশ্য সফল হোক।
কি মনে করে রাজা তাকে আবার ডেকে পাঠালেন। দরবারে এলে রাজা তাকে খুব গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞাস করলেন -- তুমি তো একজন তাঁতীর ছেলে? তাঁতীতো মাকু চালায় ।
জাহাজ আর মাকু কি একই জিনিস? তুমি বলছ পৃথিবী গোলাকার? কিন্তু যদি চেপ্টা হয়, তখন কি করবে?
শেষে আমার জাহাজ, লোক-লস্কর, টাকা পয়সা সব মাঠে মারা যাবে!!???---- এই বলে রাজা দ্বিতীয় জন এমন ভাবে কলম্বাসের দিকে তাকালেন যেন তার চেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ আর পৃথিবীতে কেউ নেই।
কলম্বাস আকাশ থেকে পড়লেন। সব হারানোর বেদনা যেন তাকে গ্রাস করলো। তিনি মনে মনে ভাবলেন -- এমন মাথা মোটা লোক কিভাবে রাজসিংহাসনে বসে থাকে??
তিনি স্পেনে চলে গেলেন। শুনেছেন স্পেনের রানি ইসাবেলা গুনবতি নারী।
যদিও তিনি এই সময় মূরদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত তথাপি তার বর্হিবিশ্ব জয়ের ইচ্ছা হতেও পারে।
রানী ইসাবেলা বললেন-- এই মুহুর্তে তার পক্ষে এত বড় ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না কারন তিনি চারিদিকে যুদ্ধে লিপ্ত। যুদ্ধ শেষে দেখা যাবে চিন্তা করে।
কিন্তু রানীর ঘুম যে হারাম করে দিল যুবক কলম্বাস। তার যৌবন দিপ্ত সৌম মূর্তি, তার ঋজু ভঙ্গী তার দৃঢ়তা তার আত্মবিশ্বাস রানীকে পাগল করে দিল।
কলম্বাস ভাবছে নিজের কথা। কার কাছে যাবে সে ? কে দেবে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খুলে। তিনি ইংল্যান্ড যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন।
শেষবারের মত চেষ্টা করবার তার সুতীব্র বাসনা। যদিও নৌ-শক্তিতে ইংল্যান্ড দুর্বল, তবুও যদি রাজী হয়।
ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম হেনরী। তিনি কলম্বাসকে বললেন -- চুপি চুপি বলি শোন হে যুবক, ইংল্যান্ডের সিংহাসন আমার থাকে কিনা তার নাই ঠিক। যদি সিংহাসনই না থাকে তবে কি লাভ দেশের সীমানা বাড়িয়ে? এই মরার দেশে রাজা হয়ে না শান্তি আছে না সুখ আছে। ?
মনে একরাশ হতাশা আর দুঃখ নিয়ে ঘরে ফিরলেন কলম্বাস। ঘরে ফিরে দেখেন এক জরুরী বার্তা নিয়ে দূত এসেছে রানী ইসাবেলার দরবার থেকে।
রানী লিখেছেনঃ যেখানে থাও, যে অবস্থায় থাকো, মুহুর্ত বিলম্ব না করে চলে এসো কর্ডোভায়। অধীর প্রতিক্ষা করছি তোমার জন্য।
কলম্বাস ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটলেন সে আহবানে সাড়া দিতে। একদিন এসে পৌঁছলেন কর্ডোভা প্রাসাদে। রাণী ইসাবেলার সেদিন আনন্দের অবধি নেই।
প্রথম দর্শনের দিন-লগ্ন থেকে এই যুবকটি তার অন্তর জয় করে নিয়েছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাণী স্মরন করে আসছেন কলম্বাসকে। আর সমস্ত হূদয় দিয়ে ভাবতেন আবার কি দেখা হবে কোনদিন? আবার কি ফিরে পাওয়া যাবে তাকে?
শেষে রানী ফিরে পেলেন কলম্বাসকে।
রাণী আপ্যায়নের নেশায় মশগুল। কলম্বাসকে নিয়ে গেলেন অন্দর মহলে।
কলম্বাসের সম্মুখে রানী ইসাবেলা। তিনি সিংহাসনে উপবিষ্টা। কলম্বাসের হাতে একটি মোরক, কাপড়ের। রানীর সনদ। পালোস বন্দরে সাগরের বুকে সান্তামেরিয়া ভাসছে--বুকে একটি দুইরঙ্গা পতাকা নিয়ে।
লাল ও নীল। আরও রয়েছে অনেকগুলি পাল। একটিতে ক্রস চিহ্ন আঁকা। ইসাবেলার হুকুমে স্পেনবাসী সাজিয়েছে সান্তামেরিয়াকে।
সূত্রঃ সংগৃহীত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।