আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যপ্রাচ্যে সংকটের ‘মূল কারণ’

ALLAH PLS FORGIVE ME

তেহরান টাইমসের গত ২৮ শে আগস্টের সংস্করণে প্র্রথম পাতায় ‘মূল কারণ’ নামে একটি বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে৷ এই বিশেষ নিবন্ধটি লিখেছেন ইউরমা ওয়েলার৷ নিবন্ধের সূচনায় লেখক বলছেন, নতুন মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি দিন৷ ভবিষ্যত একনায়ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিল্লউ বুশ মাত্র তার গ্রীস্মকালীন ছুটি কাটিয়ে ফিরে এসেছেন৷ এরই মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য স্থান, যেমন, ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন এবং লেবাননে মানুষ প্রাণ হারাচেছ৷ মার্কিন সরকারের কারণেই তারা প্রাণ হারাচেছন৷ এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে মার্কিন কংগ্রেস এবং জনগণের একটি বড় অংশের সম্মতি রয়েছে৷ কারণ তারা এ জাতীয় হত্যা কান্ডের ব্যাপারে প্রায় কোনো প্রতিবাদই করেনি৷ লেবাননে যুদ্ধ বিরতির আগে ভাগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্ট হুমকি দিয়েছিলেন যে দক্ষিণ লেবাননে যে কোনো যানবাহনের উপর বোমা ফেলা হবে৷ হিজবুল্লাহ নয় সিরিয়া ও লেবাননের বিরুদ্ধে সত্যিকার যুদ্ধ চালানো হবে বলে হুমকি দেয়ার সময় তিনি এ কথা বলেছিলেন৷ বুশও বলেছিলেন, তার ভাষায় কথিত ‘মূল কারণের’ মোকাবেলা করা হবে৷ বুশের কথায় মনে হয়েছে, লেবাননের যুদ্ধ প্রকৃত পক্ষে ২০০৬এর ১২জুলাই শুরু হয়েছে এবং হিজবুল্লাহই এই যুদ্ধের জন্য দায়ী৷ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পুঁজিবাদী নব্য উপনিবেশবাদী রাষ্ট্র প্রধানের কাছ থেকে আর কি আশা করা যেতে পারে! এই দেশটির চালিকা শক্তি হলো, অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন৷ মুনাফা অর্জনের সময় যতো কম হয় দেশটির জন্য ততই ভালো হয়৷ আমরা কার্য-কারণের একটি বিশ্বে বসবাস করি, তাহলে মি. বুশ এবার আসুন লেবানন তথা মধ্যপ্রাচ্যের হত্যাকান্ড সহ যাবতীয় সংকটের ‘মূল কারণের’ দিকে নজর দেয়া যাক৷ ১২ই জুলাইএর আগে ধারাবাহিক ভাবে কি কি ঘটনা ঘটেছে একবার সে দিকে নজর দেয়া যাক৷ হিজবুল্লাহর হাতে দুইজন ইসরাইলি সেনা বন্দি হওয়ার ঘটনা দিয়েই শুরু করা যাক৷ তেহরান টাইমসের এই বিশেষ নিবন্ধের লেখক এরপর প্রশেড়বাত্তরের ভংগিতে বাকি আলোচনা করেছেন৷ তিনি প্রথমেই প্রশ্ন করেছেন -আচছা হিজবুল্লাহ কেনো ইসরাইলি দুই সৈন্যকে বন্দি করেছিলো? ২০০৪ সালের ২৯ শে জানুয়ারি মাসে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের সাথে বন্দি বিনিময় করেছিলো৷ সে সময় একজন বন্দি ইসরাইলি সৈন্য এবং তিন ইসরাইলি সৈন্যের দেহাবশেষের বিনিময়ে ৩০ জন লেবাননি ও আরব বন্দি ৪০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি করা হয়েছিলো, এছাড়া ৫৯জন লেবাননির দেহাবশেষ স্বদেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো৷ দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি সেনারা যে সব মাইন পেতে রেখেছে তার মাত্র ৪০ শতাংশ সর্ম্পকে তথ্য পাওয়া যায়৷ কাজেই সে সময় হিজবুল্লাহ সে সব মাইন অধ্যুষিত এলাকার মানচিত্র সরবরাহ করার জন্যও ইসরাইলের প্রতি আহবান জানিয়েছিলো৷ হিজবুল্লাহ ইসরাইলের হাতে আটক যে বাদবাকী বন্দি রয়েছে তাদেরমুক্তি এবং মাইন অধ্যুষিত এলাকার মানচিত্র সংগ্রহ করার লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে৷ এখন প্রশ্ন হচেছ ইসরাইল কেনো লেবাননি ও আরবদের আটক করেছিলো এবং কেনইবা মাইন পেতে রেখেছিলো? ১৯৭৮ সালের পর থেকে ইসরাইল বহুবার লেবাননে হামলা করেছে৷ ইসলারাইল এ সময়ের মধ্যে ১৭হাজার লেবাননিকে হত্যা এবং বন্দি করেছে৷ ২০০০ সালের মে মাসের আগ পর্যন্ত দক্ষিণ লেবাননের এক খন্ড ভূমি ইসরাইল দখল করে রেখেছিলো৷ ইসরাইলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিলো, হিজবুল্লার হামলা ঠেকানোর জন্য এই ভুখন্ড দখল করে রাখা হয়েছে৷ জাতিসংঘ স্বীকৃত লেবাননের সীমান্তকে নীল রেখা বা ব্লু লাইন বলা হয়৷ হিজবুল্লাহর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আক্রমণের চাপ এবং দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি মদদপুষ্ঠ পেটোয়া বাহিনীর পতনের কারণে শেষ পর্যন্ত ইসরাইল এই নীল রেখা পর্যন্ত পিছিয়ে গিয়েছিলো৷ এরপরও শেবা কৃষিক্ষেত্র নামে পরিচিত লেবাননের একটি অংশকে ইসরাইল দখল করে রেখেছিলো৷ অর্থাৎ ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে এই এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়নি৷ ইসরাইলের আগ্রাসন, মানুষ হত্যা, এবং ব্যাপক অপরাধ যঞ্জের মোকাবেলায় হিজবুল্লাহ প্রতিরোধ যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এখন বিশ্বের অনেকের কাছেই বড় প্রশ্ন হচেছ -হিজবুল্লাহ কেনো গঠন করা হয়েছিলো? এই নিবন্ধের লেখকও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে লিখেছেন, ১৯৮২ সালে ইসরাইলি আগ্রাসন প্রতিহত করার লক্ষ্যে হিজবুল্লাহর অভ্যুদয় ঘটে৷ সে সময় দক্ষিণ লেবাননের জনগণ তাদের ভূখন্ড থেকে ইসরাইলকে হটিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সম্মিলিত ভাবে একটি প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলে৷ লেবাননের সরকার যে সব সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করতে ব্যর্থ হয় এই দলটি লেবাননে সে সব সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করতে থাকে৷ কিন্তু পিএলওর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লিতানি নদীর উত্তর থেকে হটিয়ে দিয়ে একটি নিরাপদ অঞ্চল গঠন করার লক্ষ্য নিয়েই ইসরাইল ১৯৭৮সালে লেবাননে হামলা করেছিলো৷ এই নিরাপদ অঞ্চল গঠন করা গেলে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোর উপর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলা প্রতিহত করা যাবে বলে ইসরাইল মনে করেছিলো৷ জাতিসংঘ অবশ্য ইসরাইলকে লেবানন সীমান্তে চলে যেতে বাধ্য করেছিলো৷ কিন্তু ১৯৮২ সালে ইসরাইল আবার পূর্ণ শক্তিতে লেবাননে হামলা চালায়৷ এবং পিএলওর বেশির ভাগ সদস্যকে তিউনিসিয়ায় চলে যেতে বাধ্য করে৷ ১৯৪৮ সালে আরব ভূমিতে ইসরাইলের উড়ে এসে জুড়ে বসার পরিণামে সাত লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে তাদের বাস্তুভিটা, ঘর-বাড়ি ছেড়ে শরণার্থী জীবন বেছে নিতে বাধ্য করা হয়েছিলো৷ এদের অনেকেই জর্দান বা সিরিয়ায় পালিয়ে যায় কিন্তু প্রায় তিন লক্ষ শরণার্থী দক্ষিণ লেবাননে বসবাস করতে শুরু করে৷ ফিলিস্তিনিরা নিজেদেরকে প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে সংগঠিত করে এবং দক্ষিণ লেবানন থেকে অধিকৃত ফিলিস্তিনের ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে৷ ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে দখলীকৃত ভুখন্ড উদ্ধারের লক্ষ্যে তারা এসব হামলা শুরু করেছিলো৷ এ ভাবে ফিলিস্তিন জবর দখলের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইসরাইল নামক একটি ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাতে থাকে৷ ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে উনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে৷ থেকে ইহুদিবাদীরা সংঘবন্ধ হতে শুরু করে৷ ইহুদি ধর্মের নাম ব্যবহার করা হলেও তাদের কথিত আন্দোলনের সাথে ইহুদি ধর্মমতের কোনো সর্ম্পক নেই৷ বরং সোজা কথায় ইহুদিবাদকে ইহুদিধর্মের বিকৃতি হিসেবে অভিহিত করা যায়৷ একদিকে তারা ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইহুদিদের ফিলিস্তিনের চলে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে থাকে ও নিজেরা দলে দলে ফিলিস্তিনে এসে জড়ো হতে থাকে৷ ফিলিস্তিন সে সময় ওসমানীয়া খেলাফতের একটি অংশ ছিলো৷ কিন্তু নানা ভাংগা গড়ার ফলে শেষ পর্যন্ত এখানে বৃটিশ কতৃত্ব স্থাপিত হয়৷ এরপর ১৯১৭ সালে বৃটিশ শাসকরা বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে৷ ১৯৪৮ সালের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রু ম্যান অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান করেন৷ কেনো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে সে কথা বলতে যেয়ে তিনি সে সময় স্বীকার করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‌ইহুদি ভোটার রয়েছে কিন্তু সে দেশে কোনো আরব ভোটার নেই৷ ইহুদিবাদীরা তাদের রাষ্ট্র সৃষ্টির যৌক্তিকতা প্রমাণ করার জন্য ইহুদিদের উপর কথিত নির্যাতনের উদাহরণ দিয়ে থাকে৷ অথচ এ ধরণের নির্যাতন মূলত ইউরোপে চালানো হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যে কথিত ইহুদি নির্যাতনের কোনো প্রমাণ নেই বা ছিলো না৷ এ কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য ইতিহাসের পন্ডিত হওয়ার দরকার নেই৷ মরক্কো, সিরিয়া, ইয়ামেন, ইরাক ইরান সহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে আজো প্রচুর ইহুদি দেখতে পাওয়া যাবে৷ তারা সেখানে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে৷ যদি ইহুদি নির্যাতনের কথিত দাবি সত্য হয় এ ক্ষেত্রে এ সব ইহুদি সবার আগে অধিকৃত ফিলিস্তিন অর্থাৎ ইসরাইলে পাড়ি জমাতো৷ কিন্তু তাতো হয় নি৷ মি. বুশ ছুটি কাটিয়ে নিজ দায়িত্বে ফিরে এসে এবার একুট ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন! আপনি যে ‘মূল কারণের’ কথা বলছেন সে কারণগুলোর প্রকৃতি কি! আজকের দিনে লেবানন সহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলে যে মৃত্যু, ধবংস ও অব্যাহত উত্তেজনা দেখা যাচেছ তার শেকড় কোথায়! আপনার মতো কয়েকজন পথভ্রষ্ট নেতা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি ধর্মকে অপব্যবহার করতে পিছু পা হয় নি, তারই ফলে আজকের দিনে মধ্যপ্রাচ্যে মৃত্যু ও অশান্তি দেখা যাচেছ, সেটাই হলো ‘মূল কারণ’, সে কথা কি মি. বুশ আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন! সংকলিত..................।www.http://bangla.irib.ir

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.