আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গিয়ে ৬১ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল মানবাধিকার সংস্থা অধিকার। নিহত ৬১ জনের তালিকা অধিকারের কাছে রয়েছে বলে দাবি করা হলেও তালিকাটি তারা প্রকাশ করেনি। তথ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে ওই তালিকা চাইলেও অধিকার তা দেয়নি। তবে অধিকার জানায়, দেশি-বিদেশি কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনকে তারা তালিকাটি দিয়েছে।
কিন্তু ওই সব সংগঠনও তালিকা প্রকাশ করেনি। অবশেষে অধিকার কার্যালয় থেকে জব্দ করা আলামত ঘেঁটে গোয়েন্দা পুলিশ ৬১ জনের তালিকা উদ্ঘাটন করেছে। বহুল আলোচিত সেই তালিকার কপি পেয়েছে কালের কণ্ঠ। এখন তালিকাটির যথার্থতা যাচাই করছেন তদন্তকারীরা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, নিজস্ব কোনো অনুসন্ধানে নয়, হেফাজতসহ বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি করে অধিকার।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে কালের কণ্ঠের হাতে আসা চার পাতার এই তালিকার শিরোনামে লেখা আছে 'হেফাজতের সমাবেশে গিয়ে মারা গেছেন যারা'। তালিকার ক্রমানুসারে নাম ও ঠিকানা উপস্থাপন করা হলো। ১. সিদ্দিকুর রহমান (৩০), লাশ গ্রহণকারী কাজী সেলিম সরওয়ার, চট্টগ্রাম, শ্রমিক সম্পাদক, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড; ২. এ কে এম রেহান আহসান (২৮), লাশ গ্রহণকারী ডা. শাহরিয়ার মাহমুদ, ৩৫৩/১-বি দক্ষিণ পাইকপাড়া, ঢাকা; ৩. কাজী রকিবুল হক (৪০), লাশ গ্রহণকারী কাজী শহীদুল হক, ২০৮/৩ শেখপাড়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা; ৪. মো. ইউনুস (৩৫), লাশ গ্রহণকারী মাওলানা নাজিম উদ্দিন, বাঙ্গাল হাওলা, কালীগঞ্জ, গাজীপুর; ৫. দ্বীন ইসলাম (৩৬), লাশ গ্রহণকারী আলাউদ্দিন, বালুচর, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ; ৬. নাহিদ (২১), লাশ গ্রহণকারী শাহজাহান, লালগঞ্জ ৭ নম্বর বিল্ডিং, ৭ নম্বর গলি, ঢাকা; ৭. মো. আল-আমিন (৩০), লাশ গ্রহণকারী শফিক, কাচারীচেকেরহাট, কোতোয়ালি, ফরিদপুর; ৮. মাওলানা আবদুল ওয়াহাব মোল্লা (৪৫), লাশ গ্রহণকারী আবদুল হান্নান, তালাব, ভালুকা, ময়মনসিংহ; ৯. হাফেজ আল-আমিন (১৮), পিতা-আবদুল জব্বার, দুর্গাপুর চরমাদবদিয়া, ফরিদপুর; (১০ নম্বর নেই); ১১. হাফেজ সাদ্দাম (২৭), পিতা-রফিকুল ইসলাম, গ্রাম-মহিপুর, পোস্ট-পাজমা, থানা-মধুখালী, ফরিদপুর; ১২. মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ (২২), পিতা-মাওলানা ওয়াজী উল্লাহ, ইমাম কটনমিল জামে মসজিদ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ; ১৩. লৎফর রহমান (২৫), পিতা-সিদ্দিকুর রহমান, গ্রাম-সুতিয়াপাড়া, ইউনিয়ন-বাওলা, থানা-ফুলপুর, ময়মনসিংহ; ১৪. মো. নজরুল ইসলাম (২৫), পিতা-মমতাজ উদ্দিন, গ্রাম-দাইয়ের পার, খেবুতলা, মনোহরদী, নরসিংদী; ১৫. হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নু (৩৫), গ্রাম-রায়পাড়া, খড়কি, যশোর; ১৬. হাফেজ আতাউর রহমান (৩৫), পিতা-সিদ্দিকুর রহমান, গ্রাম-সুতিয়াপাড়া ভৌলা, থানা-ফুলপুর, ময়মনসিংহ; ১৭. মুহাম্মদ আকবর ইবনে নজরুল ইসলাম, দৌলতখান, ভোলা; ১৮. মাওলানা সিহাব উদ্দিন (৩৫), প্রভাষক, গানিয়াতুল মাদ্রাসা, থানা-সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম; ১৯. মো. শামসুল আলম (২০), গ্রাম-তেলিগাংদিয়া, থানা-দৌলতপুর, জেলা-কুষ্টিয়া; ২০. মাওলানা শিহাব উদ্দিন (৩২), শিক্ষক, বগাচতর ফাজিল মাদ্রাসা, গ্রাম-ডোমখালী, ইউনিয়ন সাহেরখালী, থানা-মিরসরাই, জেলা-চট্টগ্রাম; ২১. মো. নাহিদ শিকদার (২২), পিতা-দেলোয়ার শিকদার, গ্রাম-পাতারহাট, থানা মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল, বাসা ২৭৪, জয়কালী মন্দির; ২২. মো. ইউনুস মোল্লা (২৮), ২৫ নম্বর ওয়ার্ড, বরিশাল শহর, বরিশাল (পুলিশ বলছে এ ঘটনাটি সঠিক); ২৩. মো. সাইদুল বারী (১৭), মোহাম্মদপুর বায়তুল ফজল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র, গ্রাম ইউসুফদিয়া, থানা-গালতা, জেলা-ফরিদপুর; ২৪. মো. মোক্তার হোসেন (১৫), পিতা-মহর আলী, গ্রাম ও পোস্ট-উত্তর বাঘরনগর, থানা-রায়পুরা, নরসিংদী; ২৫. মাওলানা শামসুল আলম, হরিণাহাট, শফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর; ২৬. মাওলানা মোহাম্মদ হাসান, শিক্ষক, দাগারপার ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ; ২৭. হাফেজ মো. মাহমুদুল হাসান জুবায়ের, পিতা-মো. আব্দুল বাসেদ, গ্রাম-বকুলতলা, মাটিরপাড়া, নরসিংদী; ২৮. মাওলানা মাহমুদুল হাসান, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা; ২৯. হাফেজ লোকমান হোসেন, বাবুরাইল, নারায়ণগঞ্জ; ৩০. মো. আল-আমিন, রামারবাগ, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ; ৩১. মাওলানা জুবায়ের, পিতা-কারি নেয়ামতুল্লা, সাপেরচর, বালুচর, মুন্সীগঞ্জ; ৩২. মো. শফিউল্লাহ বাদল, দুরবাটি, কালীগঞ্জ, গাজীপুর; ৩৩. হাবিবুল্লাহ মুন্সী, পিতা-আনু মুন্সী, গ্রাম-দায়চর, সেনবাড়ী, কচুয়া, চাঁদপুর; ৩৪. মো. সিরাজুল ইসলাম, পিতা-আমির উদ্দিন, গ্রাম-খলিফারপাড়, মাশকান্দা পলিটেকনিক মোড়, ময়মনসিংহ; ৩৫. বাবু গাজী, থানা-নড়িয়া, শরীয়তপুর; ৩৬. জাহিদুল ইসলাম সৌরভ, নিমাইকাশারী, বাগমারা, রাজশাহী; ৩৭. আনোয়ার, হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র, চট্টগ্রাম; ৩৮. শাহাদাত, মেঘল মাদ্রাসার ছাত্র, চট্টগ্রাম; ৩৯. মো. সোহেল, দাউদকান্দি, কুমিল্লা; ৪০. ফকির ইবনে মাইজুদ্দিন ফকির, কাতলা, শিববাদী, আদমদীঘি, বগুড়া; ৪১. মাহফুজ খান, পিতা-বাবুল খান, গ্রাম-শেখদী, চাঁদপুর; ৪২. হাফেজ সাইদুর রহমান, পিতা-মৃত সিরাজুল ইসলাম, গ্রাম-ইউসুফদিয়া, থানা-সালতা, জেলা ফরিদপুর; ৪৩. মাওলানা আনোয়ার হোসেন, পিতা-মো. আবুল হোসেন, নোয়াখালী; ৪৪. মো. হারুনুর রশিদ, গ্রাম-তায়েফা, থানা-মুলাদী, জেলা-বরিশাল; ৪৫. সুলতান, কোনাবাড়ী, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা; ৪৬. রাজীব, কাজলা ভাঙ্গা, ডেমরা, ঢাকা; ৪৭. মো. আব্দুল হান্নান, পিতা-আব্দুল বাতেন, গ্রাম-আদিয়াবাদ, মধ্যপাড়া, রায়পুরা, নরসিংদী; ৪৮. সোহেল, ছাত্র, চাঁদপুর উজানী মাদ্রাসা; ৪৯. মাওলানা মুতীয়র রহমান, কুমিল্লা; ৫০. পলাশ, ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী, মাদানীনগর, নারায়ণগঞ্জ; ৫১. সাদেক হোসেন, পিতা-রইস মিয়া, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা, গ্রাম-বড়াইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া; ৫২. রুবেল, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা; ৫৩. সাব্বির, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা; ৫৪. তাহের, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা; ৫৫. আবু সাইদ, বক্সনগর, ডেমরা, ঢাকা; ৫৬. জসিম উদ্দিন, কুমিল্লা; ৫৭. কামাল উদ্দিন খান, ম্যানেজার, জেনারেল ইনস্যুরেন্স কম্পানি, মতিঝিল, ঢাকা; ৫৮. মাওলানা আতাউল্লাহ, শিক্ষক, মোদাফামা মাদ্রাসা, টঙ্গী; ৫৯. ইব্রাহিম খলিল, পটুয়াখালী; ৬০. জালাল আহমেদ, শরীয়তপুর; ৬১. সিরাজুল ইসলাম, কুমিল্লা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে রাতে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে গিয়ে ৬১ জন মারা গেছে বলে তথ্য প্রকাশ করে অধিকার।
গত ১০ জুন অধিকারের এক 'অনুসন্ধানী' প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়। তবে প্রতিবেদনে নিহত বা নিখোঁজ ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ওই সমাবেশে অভিযানের পর হেফাজত দাবি করেছিল, তাদের হাজার হাজার কর্মী নিহত হয়েছে। এরপর অধিকার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত ১০ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয় অধিকারকে চিঠি দিয়ে নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিচয়সংবলিত তালিকা দেওয়ার অনুরোধ জানায়।
এরপর অধিকার কর্তৃপক্ষ তালিকা না দিয়ে দাবি করে, নিহতদের পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে তারা তালিকা প্রকাশ করছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১০ আগস্ট অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্রকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর আদালতের নির্দেশে ১১ আগস্ট রাতে গুলশানের ১২৭ নম্বর রোডের ৩৫ নম্বর বাড়িতে অধিকারের কার্যালয় থেকে তিনটি ল্যাপটপ ও দুটি কম্পিউটারের সিপিইউসহ কিছু নথিপত্র জব্দ করে ডিবি। এসব আলামত থেকে নিহতদের তালিকা উদ্ধার করার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। জব্দ করা কম্পিউটার সিআইডির প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষার জন্য ১৩ আগস্ট আদালতে আবেদন করে পুলিশ।
আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ১৪ আগস্ট সিআইডির প্রযুক্তিবিষয়ক তদন্ত সেলে পাঠানো হয় কম্পিউটারগুলো। সূত্র জানিয়েছে, সেখানে কম্পিউটার চালু করে ৬১ জনের নামের একটি তালিকা পাওয়া যায়। তালিকার কপি পাঠানো হয় ডিবি পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখাসহ (এসবি) রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দপ্তরে। এক সপ্তাহের মধ্যেই এ তালিকা নিয়ে তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ।
তালিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) ওবায়দুল হক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জিজ্ঞাসাবাদে আদিলুর রহমান খান তালিকার ব্যাপারে তথ্য না দিলেও আমরা তদন্তে জেনেছি, হেফাজতে ইসলামের সরবরাহ করা একটি তালিকা অধিকারের কাছে আছে।
এ তালিকার ব্যাপারে আমরা তদন্ত করছি। তালিকা পেয়েছি কি না বা তদন্তের ব্যাপারে এখনই বলা যাবে না। ' তিনি আরো বলেন, 'আমরা তদন্তে তথ্য পেয়েছি, হেফাজতের তালিকা ধরে অধিকার প্রতিবেদন দিলেও এ ব্যাপারে অধিকারের আস্থা নেই। এ কারণে তারা সেই তালিকা প্রকাশ করতে চাইছে না। ' সুত্র
রাতের অভিযানে নিহত ৫
হেফাজতের সমাবেশে গিয়ে মারা গেছেন যারা' শিরোনামে পাওয়া অধিকারের তালিকা ধরে তাৎক্ষণিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মতিঝিল শাপলা চত্বরে ৫ মে রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গুলিতে নিহত হয়েছে পাঁচজন।
নিখোঁজ আছে দুজন। এ ছাড়া ৫ মে দিনের বেলায় সংঘাতে নিহত হয়েছে ১৩ জন। পরদিন ৬ মে সকালে চিটাগাং রোড এবং ৭ মে চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয়েছে ছয়জন। নিখোঁজ হিসেবে দাবি করে অধিকার যাদের নাম তালিকাভুক্ত করেছে, তাদের বিষয়ে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে দিনভর অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, ১২ জনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার কেউ কিছু জানে না। ওই নামে আদৌ কেউ আছে কি না সে বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিহত বলে দাবি করার পরও জীবিত হিসেবে সন্ধান পাওয়া গেছে একজনের।
অধিকারের তালিকার ব্যাপারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, নিজেরা অনুসন্ধান না করে হেফাজতের দেওয়া তালিকা প্রতিবেদনে প্রদর্শন করেছে অধিকার। প্রাথমিক তদন্তেই এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তালিকাটি কিভাবে তৈরি হলো তার পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নিহতের একটি কাল্পনিক তালিকা তৈরি করে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্তে অধিকারের প্রতিবেদনের কোনো সত্যতা মেলেনি। এ তালিকা কিভাবে তৈরি করা হলো বা কেন করা হলো, তা আমরা খতিয়ে দেখব। '
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত রাতে অভিযানের সময় কোনো নিহতের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়নি।
সেখানে রাত ২টার পর অভিযানের সময় চারটি ডেড বডি পাওয়া যায়, যেগুলো দিনের বেলায় নিহত হয়েছে। আমরা এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। ' তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা এখনো তদন্ত করছি। আমাদের তদন্তে ১৯ জনের নামের কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। অনেক নাম দুইবার লেখা হয়।
অন্য স্থানের লাশের ছবি ফটোশপে নিয়ে ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে অধিকার। এ রিপোর্ট বিভিন্ন সংস্থা রেফারেন্স হিসেবে দেখছে। অথচ এর কোনো ভিত্তি নেই। ' এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, 'বিকৃত এসব তথ্য কোথা থেকে এলো, তারা নিজেরা সৃজন করেছেন কি না- সবই তদন্ত করে দেখা হবে। '
এ বিষয়ে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বারবার চেষ্টা করেও অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
প্রতিবারই তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা এম এ করিম ইবনে মছব্বির কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অনেক লোক সমাবেশে শহীদ হয়েছেন। এদের কয়েকজনের লাশ মাতুয়াইলে পাওয়া গেছে। অধিকারের রিপোর্ট শতভাগ ঠিক। ' এক প্রশ্নের জবাবে এম এ করিম ইবনে মছব্বির বলেন, 'পাঁচ-ছয়শজন নিখোঁজ আছে বলে আমরাই অধিকারকে একটি তালিকা দিয়েছি।
'
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আনাস মাদানী বলেন, 'শাপলা চত্বরে আমাদের কর্মী শহীদ হয়েছে। সরকার এসব লাশ গুম করেছে। অধিকারের রিপোর্ট সম্পূর্ণ সঠিক। '
শাপলা চত্বরে নিহত হন ইউনুস ও শামসুল হক : তালিকার ৪ নম্বরে আছে গাজীপুরের কালীগঞ্জের বাঙ্গাল হাওলা গ্রামের মো. ইউনুসের নাম। তাঁর প্রতিবেশী আলী হোসেন জানান, কুমিল্লার দাউদকান্দির মহিষখালী গ্রামের একটি মসজিদে ইমামতি করতেন ইউনুস।
গত ৫ মে রাতে শাপলা চত্বর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এরপর ৬ মে সকালে মারা গেলে তাঁর লাশ গ্রামে নিয়ে দাফন করা হয়।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুর হরিণাহাট এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন শামসুল হক। তালিকার ২৫ নম্বরে তাঁর নাম রয়েছে। তিনি স্থানীয় ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
বাড়ির মালিক জানান, ৫ মে রাতে শাপলা চত্বর এলাকায় মারা যাওয়ার পর তাঁর লাশ কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কালিয়াকৈর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি এমদাদুল হক দাবি করেন, শাপলা চত্বরে রাতের অভিযানের সময়ই নিহত হন শামসুল।
গভীর রাতে নিহত হন নজরুল : তালিকার ১৭ নম্বরে আছে মুহাম্মদ আকবর ইবনে নজরুল ইসলামের নাম। তাঁর মা বিবি কুলসুম কালের কণ্ঠকে জানান, ৫ মে গভীর রাতে তাঁর ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আকবর বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করতেন।
তিনি ছিলেন হেফাজতের কর্মী। ঘটনার দুই দিন পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে তাঁর লাশ সংগ্রহ করে গ্রামে নিয়ে দাফন করা হয়। আকবরের বাবার নাম নূরুল ইসলাম। তাঁদের বাড়ি ভোলার দৌলতখানের গুপ্তেরবাজার এলাকায়।
শফিউল্লাহ নামে কাউকে চেনে না এলাকার কেউ : তালিকার ৩২ নম্বরে গাজীপুরের কালীগঞ্জ দুরবাটি এলাকায় মো. শফিউল্লাহ বাদলের নাম উল্লেখ করা হলেও এলাকার কেউ তাঁকে চেনে না।
কালীগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তোফাজ্জল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ নামের কেউ আছে এবং হেফাজতের সমাবেশে গিয়ে মারা গেছে এমন তথ্য নেই। '
লোকমান ও আল-আমিনের বিষয়ে কেউ কিছু জানে না : তালিকার ২৯ নম্বরে হাফেজ লোকমান হোসেন এবং ৩০ নম্বরে মো. আল-আমিনের নাম আছে। তাঁদের বিষয়ে কেউ কিছু জানাতে পারেনি।
আরো যাদের চেনে না কেউ : কুমিল্লায় অনুসন্ধান চালিয়ে তালিকার ৪৯ নম্বরে থাকা মাওলানা মুতীয়র রহমান, ৩৯ নম্বরের মো. সোহেল, ৫৬ নম্বরের জসিম উদ্দিন ও ৬১ নম্বরে থাকা সিরাজুল ইসলামের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তালিকার ৩১ নম্বরে সিরাজদিখানের মাওলানা জুবায়েরের নাম লেখা হলেও এলাকায় খোঁজ নিয়ে এ নামের কারো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
তালিকার ৭ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত মো. আল-আমিন, ২৩ নম্বরের মো. সাইদুল বারী ও ১১ নম্বরের হাফেজ সাদ্দামের ব্যাপারেও খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য মেলেনি। তালিকার ৬০ নম্বরে জালাল আহমেদের নাম থাকলেও এ নামের কাউকে চেনে না কেউ।
তালিকার ৩৬ নম্বরের জাহিদুল ইসলাম সৌরভ সম্পর্কে কোনো তথ্য মেলেনি। রাজশাহীর বাগমারা নিমাইকাশারী স্থানের সৌরভ জীবিত বলে দাবি পুলিশের। রাজশাহীর হেফাজতের সভাপতি আব্দুস সামাদ জানান, এ নামের কেউ নিখোঁজ বা নিহত বলে তাঁদের জানা নেই।
বিকেলে সংঘাতে নিহত ওয়াহাব ও আতাউর : তালিকার ৮ নম্বরে আছে ময়মনসিংহের ভালুকার তালাব এলাকার মাওলানা আবদুল ওয়াহাব মোল্লার নাম। তাঁর বাবার প্রকৃত নাম শাহ নেওয়াজ আলী বলে জানা গেছে। বড় ভাই আবদুল হান্নান জানান, ওয়াহাব ৫ মে বিকেলের সংঘাতে নিহত হন। এলাকায় তাঁর জানাজা হয়েছে।
তালিকার ১৬ নম্বরে ফুলপুরের ভৌলা গ্রামের সুকিয়াপাড়ার হাফেজ আতাউর রহমানের নাম আছে।
তাঁর বাবা সিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, '৫ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আতাউর মারা যায়। পরদিন সকালে ঢাকার ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে তার লাশ নিই আমরা। সে টঙ্গীর একটি মাদ্রাসায় ছাত্র পড়াত। '
সমাবেশে গিয়ে নিখোঁজ সিরাজুল ইসলাম : তালিকার ৩৪ নম্বরে আছে ময়মনসিংহের মাসকান্দা পলিটেকনিক মোড় এলাকার সিরাজুল ইসলামের নাম। তাঁর বড় ভাই নূরুল ইসলাম জানান, সিরাজুল মাসকান্দা মাদ্রাসায় পড়ত।
৫ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বরের সমাবেশে গিয়ে নিখোঁজ সে। ঘটনার রাত থেকে তাঁর ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেই। হাটহাজারী মাদ্রাসার এক ছাত্র পরদিন ফোন করে তাঁকে জানায়, সিরাজুলের মাথায় গুলি লেগেছে। গত ৭ মে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় ভাইয়ের সন্ধানে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন নূরুল ইসলাম।
বিকেলে পল্টনে মারা যান লুৎফর : তালিকার ১৩ নম্বরে থাকা লুৎফর রহমানের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি টঙ্গীর কামারপাড়ার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন।
ময়মনসিংহের ফুলপুর সুতিয়াপাড়া এলাকায় ৬ মে তাঁর জানাজা পড়ান মাওলানা আহমেদ হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, ৫ মে বিকেলে পল্টন এলাকায় মারা যান লুৎফর। তাঁর পরিবারসহ এলাকার লোক এ খবর পেয়েছে।
সাড়ে ৮টায় গুলিবিদ্ধ হন রকিবুল : তালিকার ৩ নম্বরে আছে রকিবুল হকের নাম। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ২০৮/৩ শেখপাড়ায় তাঁর বাসা।
বাবার নাম কাজী আজিজুল হক। রকিবুলের বড় ভাই কাজী শহীদুল হক জানান, তাঁর ভাই ডেমরার ভাঙাপ্রেস এলাকায় লেপতোশকের ব্যবসা করতেন। ৫ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি খবর পান, তাঁর ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
রাত সাড়ে ৯টায় সংঘর্ষে মারা যান জুবায়ের : তালিকার ২৭ নম্বরে আছে নরসিংদীর বকুলতলা মাটিরপাড়ার হাফেজ মো. মাহমুদুল হাসান জুবায়েরের নাম। তাঁর ভগি্নপতি জানা,, ৫ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বায়তুল মোকাররমের সামনে সংঘর্ষে মারা যান জুবায়ের।
পরদিন এলাকায় তাঁর দাফন হয়।
নজরুল ও হান্নান মারা যান দিনেরবেলা : ১৪ নম্বরে থাকা নরসিংদীর মো. নজরুল ইসলামের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি নিহত হন ৫ মে বিকেলে।
এদিকে ৪৭ নম্বরে থাকা মো. আবদুল হান্নানও দিনেরবেলা মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযানে মারা যান নান্নু ও মোক্তার : তালিকার ১৫ নম্বরে আছে যশোরের খড়কি রায়পাড়া এলাকার হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নুর নাম। তাঁর বড় ভাই হাফিজুল হক বলেন, 'রায়পাড়ায় কাপড়ের ব্যবসা করত নান্নু।
৫ মে সমাবেশে গিয়ে সে আহত হয়। রাতের অভিযানের সময় তার গায়ে শটগানের গুলি লাগে। ১২ মে ঢাকা থেকে আনার সময় পথে মানিকগঞ্জে সে মারা যায়। '
২৪ নম্বরে থাকা মো. মোক্তার হোসেন ছিল রায়পুরার একটি স্কুলের ছাত্র। জেলা হেফাজতে ইসলামের সম্পাদক মাওলানা ইসমাইল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাতের অভিযানেই মোক্তার মারা যায়।
'
দুপুরে গুলিতে মারা যায় সিদ্দিকুর : ক্রমিকের ১ নম্বরের সিদ্দিকুর রহমানের বাবার নাম আমিনুল ইসলাম, আউলিয়াবড়, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বাড়ি চাউলিয়া বন এলাকায়। নিহতের বাবা আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, হানিফ পরিবহনের বাসের হেলপার ছিল সিদ্দিকুর রহমান। দুপুরে শাপলা চত্বরের কাছে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় সে। পরে এলাকায় লাশ দাফন করা হয়।
বাবু ও শামসুল নিহত হয় ৬ মে সকালে : তালিকার ৩৫ নম্বরে থাকা শরীয়তপুরের বাবু গাজীর বাবার নাম আলী হোসেন। তিনি জানান, চিটাগাং রোডের মৌচাক এলাকায় বোনের বাসায় থাকত বাবু। ৬ মে সকালে সংঘর্ষের সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়। দুই দিন পর তার লাশ এলাকায় এনে দাফন করে স্বজনরা।
তালিকার ১৯ নম্বরের মো. শামসুল আলমের ব্যাপারে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তেলিগাংদিয়া গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁর প্রকৃত নাম ইসহাক আলী হুজুর।
বাবার নাম মৃত মসলেম মণ্ডল। তাঁর বড় ভাইয়ের ছেলে রশিদুল ইসলাম বলেন, '৫ মে আসরের নামাজের পর গুলিতে আমার চাচা আহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান। লাশ এলাকায় এনে আমরা দাফন করি। '
১৮ নম্বর ও ২০ নম্বর ব্যক্তি একই নাম : কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তালিকার ১৮ ও ২০ নম্বর ব্যক্তি একই।
১৮ নম্বরে লেখা হয়েছে নিহতের নাম মাওলানা সিহাব উদ্দিন, প্রভাষক, গানিয়াতুল মাদ্রাসা, থানা সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম। ২০ নম্বরে লেখা হয়েছে মাওলানা শিহাব উদ্দিন, শিক্ষক, বগাচতর ফাজিল মাদ্রাসা, গ্রাম ডোমখালী, ইউনিয়ন সাহেরখালী, থানা মিরসরাই, জেলা চট্টগ্রাম। জানা গেছে, শিহাব উদ্দিন আসলে মিরসরাইয়ের বাসিন্দা এবং সিতাকুণ্ডের গনিউল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার আরবি শিক্ষক। তিনি ৫ মে সন্ধ্যায় আহত হন। মারা যান রাত ১১টার দিকে।
পরদিন সকালে চট্টগ্রামে তাঁর লাশ দাফন হয়।
আনোয়ার ও শাহাদাত মারা যায় ৭ মে চট্টগ্রামে : ৩৭ নম্বরে থাকা হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র আনোয়ার এবং ৩৮ নম্বরে থাকা মেঘল মাদ্রাসার ছাত্র শাহাদাত মারা যায় ৭ মে টট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায়। ওই সময় কালের কণ্ঠসহ জাতীয় দৈনিকগুলোতে এ ব্যাপারে খবর প্রকাশ পায়।
সকালে যাত্রাবাড়ীতে নিহত হন হাবিবুল্লাহ : তালিকার ৩৩ নম্বরে উল্লিখিত হাবিবুল্লাহ মুন্সীর বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ার সেনবাড়ী এলাকার দায়চর। রাকিব উদ্দিন নামে তাঁর এক প্রতিবেশী জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকায় থেকে হাবিবুল্লাহ রিকশা চালাতেন।
৬ মে সকালে সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
৬ মে চিটাগাং রোডে মারা যান মাহফুজ সাদেক : তালিকার ৪১ নম্বরে আছেন মাহফুজ খান, পিতা বাবুল খান, গ্রাম শেখদী, চাঁদপুর। মাহফুজের বাবা বাবুল খান বলেন, '৬ মে চিটাগাং রোডে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় মাহফুজ। মাহফুজ সিটি ফ্যান কম্পানিতে চাকরি করত। '
ক্রমিকের ৫১ নম্বরের সাদেক হোসেনের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
থাকতেন পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর ডেমরায়। তাঁর বাবা রইস মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পানির ফিল্টার সরবরাহের কাজ করত সাদেক। ৬ মে সকালে চিটাগাং রোডে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে সে নিহত হয়। '
সোহেল এখনো জীবিত : ৪৮ নম্বরে আছে চাঁদপুর উজানী মাদ্রাসার ছাত্র সোহেল। সোহেল এখনো জীবিত।
যোগাযোগ করা হলে মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা মাহবুব এলাহী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঈদের ছুটিতে সোহেল কুমিল্লার গৌরীপুরের বাড়িতে গেছে। '
সমাবেশে গিয়ে নিখোঁজ মাইজুদ্দিন : বগুড়ার আদমদীঘির কাতলা শিববাদী এলাকার কুণ্ড গ্রামের ফকির ইবনে মাইজুদ্দিন ফকিরের নাম রয়েছে ৪০ নম্বরে। এ গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাইজুদ্দিন এখনো নিখোঁজ আছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, '৫ মের সমাবেশে গিয়ে মাইজুদ্দিন নিখোঁজ হন বলে আমরা শুনেছি। '
বিকেলে গুলিতে নিহত হন ইব্রাহিম : তালিকার ৫৯ নম্বরে আছে পটুয়াখালীর ইব্রাহিম খলিলের নাম।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ মে বিকেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ইব্রাহিম। পরদিন এলাকায় তাঁর লাশ দাফন হয়।
তিনজনের লাশ গেছে বরিশালে : তালিকার ২১, ২২ ও ৪৪ নম্বরে উল্লিখিত তিনজনের বাড়ি বরিশালে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া গেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বটতলা এলাকার মো. ইউনুস মোল্লা পেশায় একজন রিকশাচালক।
তাঁর বাবা মৃত শাহাজান মোল্লা। অন্যজন মুলাদী উপজেলার মো. হারুন অর রশিদ পেশায় ফেরিওয়ালা। তিনি মৃত গনি খানের ছেলে। নিহত অন্যজন মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেন সিকদারের ছেলে মো. নাহিদ।
ইউনুস মোল্লার স্ত্রী ফরিদা বেগম জানান, ঢাকার সুদপুর লালমিয়ার সাঁকো এলাকায় থাকতেন ইউনুস।
রাজধানীতে রিকশা চালাতেন তিনি। ফরিদাকে ৫ মে রাত ৮টায় মোবাইল ফোনে জানানো হয়, ইউনুস গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সন্ধ্যা ৭টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের কাছে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশ নাকি গুলি করে। পরদিন ৬ মে সকাল ১১টার দিকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সযোগে তাঁর লাশ বাড়িতে নেওয়া হয়।
হারুনের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'হারুন লঞ্চ ও বাসে ফেরি করে সুই-সুতা, চিরুনি, ম্যাচ, লাইটসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করতেন। ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশের আগে ৩ মে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। ৫ মে রাত ১০টার সময় আমার মুঠোফোনে কেউ একজন ফোন করে তাঁর মৃত্যুর খবর জানায়। হারুন রাতে নাকি দিনে গুলিবিদ্ধ হন, তা সঠিক করে জানা যায়নি। পরের দিন বিকেলে অ্যাম্বুল্যান্সযোগে তাঁর লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
'
মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কামাল উদ্দিন বলেন, 'শুনেছি, নাহিদ শাপলা চত্বরের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। কোন সময়ে মারা গেছে, তা আমরা সঠিকভাবে বলতে পারব না। তার লাশ ৭ মে রাতে পৌঁছায়। পরের দিন ৮ মে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে। '
মাসুম বিল্লাহর লাশ পায়নি স্বজনরা : তালিকার ১২ নম্বরে আছে নারায়ণগঞ্জের ইমাম কটন মিল মসজিদের ইমাম মাওলানা ওয়াজী উল্লাহর ছেলে মো. মাসুম বিল্লাহর নাম।
তাঁর মামা মুফতি মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভোলার লালমোহনের ডাওরী এলাকায় তাদের বাড়ি। আমরা খবর পাইছি, শাপলা চত্বরে অভিযানের সময় মাসুমের মাথায় গুলি লাগে। এরপর আর তারে আমরা পাইনি। লাশও পাইনি। '
'জানতে হলে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে কথা বলুন' : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দাগারপার ফোরকানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ হাসান এবং ওই মাদ্রাসার আরেক শিক্ষক মাওলানা জাহাঙ্গীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ ব্যাপারে আমাদের কথা বলতে নিষেধ আছে।
কিছু জানতে হলে হেফাজতে ইসলামের উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে কথা বলুন। '
দ্বীন ইসলাম আহত হন ৫ মে সংঘর্ষে : ৫ নম্বরে রয়েছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বালুরচর এলাকার দ্বীন ইসলামের নাম। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বীন ইসলাম আহত হন ৫ মে সংঘর্ষে। তাঁর লাশ গ্রহণকারী আলাউদ্দিন জানান, আহত হওয়ার দুই দিন পর হাসপাতালে মারা যান দ্বীন ইসলাম। এলাকায় তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে।
দিনের সংঘাতে নিহত আনোয়ার হোসেন : তালিকার ৪৩ নম্বরের মাওলানা আনোয়ার হোসেন শাহ মওদুদ রাজধানীতে একটি মাদ্রাসায় পড়তেন। বাবা আবুল হাসনাতসহ স্বজনরা জানায়, ৫ মে দিনের সংঘাতের সময় নিহত হন। ৬ মে সকালে গ্রামের বাড়িতে তাঁর দাফন হয়। সুত্র
পক্ষান্তরে এই পাঁচ ই ওই পাঁচ নাকি? তাইলে তো আবার কথা থেকে গেল... এরা আহত হলেও ওই রাতে নিহত হয়নাই ...তারা প্রাক্টিকালি ডেড ছিল ... পুরা ডেড না। আরও গুরুত্বপূর্ন হল এরা ৫মে বিকালে হাস্পাতালে এসেছে শাপলা অপারেশানের পরে না।
সুত্র
পুলিশের তদন্তে তালিকার ৩৫ নাম ভুয়া
শাপলা চত্বরে অভিযানে নিহত হয়েছে বলে অধিকারের প্রতিবেদনে দাবি করা ৬১ জনের তালিকার মধ্যে ৩৫ জনের নামই ভুয়া দাবি করছে পুলিশ। বাকি ২৬ জনের কেউই শাপলা চত্বরে 'অপারেশন শাপলায়' নিহত হয়নি বলেও দাবি তাদের। রাজধানীতে গত ৫ মে দিনের সংঘাত, ৬ মে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডের সংঘাত এবং ঢাকার বাইরের সংঘাতে তারা নিহত হয়েছে। অধিকারের কার্যালয় থেকে উদ্ধার করা তালিকার সূত্র ধরে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে তদন্তসংশ্লিস্ট এবং ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এমন দাবি করেছেন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা তালিকা এবং তদন্তের মন্তব্যে বলা হয়েছে, ৬১ জনের তালিকার মধ্যে ১০ নম্বর ক্রমিক নেই।
বাকি ৬০ জনের মধ্যে পাঁচজনের নাম ও পরিচয় ঘুরিয়ে ১০ বার লেখা হয়েছে। ১৯ জনের নাম ও ঠিকানা ধরে তদন্ত করে কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ছয়জন অন্য স্থানে মারা গেছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে একজন। তালিকার তিনজনকে জীবিত পাওয়া গেছে।
বাকি ২৬ জনের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা তদন্তের সূত্রে দাবি করে বলছেন, ৫ মে দিনে ও সন্ধ্যায় পল্টন ও আশপাশের এলাকায় হতাহতের ঘটনা যা ঘটেছে, এর বাইরে কোনো নিহত নেই। রাতের আঁধারে বাতি নিভিয়ে অভিযানে নিহতের ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই তাঁদের কাছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, সিআইডির ল্যাবরেটরিতে কম্পিউটার পরীক্ষা করে হেফাজতের তালিকা পাওয়ার পর তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে সেটি পাঠানো হয়। দুই সপ্তাহ আগে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ তালিকার কপি দেওয়া হয়।
এরপর পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে ডিবি। তাদের তদন্ত এখনো চলছে। তবে এক সপ্তাহের তদন্ত শেষে তদন্তকারীরা যেসব তথ্য পেয়েছেন তা তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ক্রমিকের ১ নম্বরের সিদ্দিকুর রহমানের ব্যাপারে পুলিশের তদন্তে বলা বলছে, একই ব্যক্তির বাবার নাম আমিনুল ইসলাম, আউলিয়াবড়, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর। সে দিনের বেলায় সংঘাতে মারা গেছে।
ক্রমিকের ২ নম্বর এ কে এম রেহান আহসনের মৃত্যুর ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা হয়েছে। ৩. কাজী রকিবুল হকের মৃত্যুর ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা আছে বলে উল্লেখ করা হয়। ৪. মো. ইউনুস ও ৫. দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে বলা হয়, মৃত্যুর ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা আছে। ৬. নাহিদের ব্যাপারে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ ও ২১ নম্বর ক্রমিক নম্বরের ব্যক্তি একই। ৭. মো. আল-আমিন ও ৮. মাওলানা আব্দুল ওয়াহব মোল্লার ব্যাপারে বলা হয়েছে, মতিঝিল থানায় মামলা আছে।
৯. হাফেজ আল-আমিনকে নিয়ে পুলিশের তদন্তে বলা হচ্ছে ক্রমিক নম্বর ৭ ও ৯ একই ব্যক্তি। ১১. হাফেজ সাদ্দামের ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্তে মৃত্যু ঘটেছে বলা হয়েছে। ১২. মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ ও ১৩. লুৎফর রহমানের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৪. মো. নজরুল ইসলামের মৃত্যুর ব্যাপারে পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা আছে। ১৫. হাফেজ মোয়াজ্জেমুল হক নান্নুর মৃত্যু ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৬. হাফেজ আতাউর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে পুলিশে বলছে, ১৬ এবং ৫৮ নম্বর ক্রমিকের ব্যক্তি একই। ১৭. মুহাম্মদ আকবর ইবনে নজরুল ইসলামের মৃত্যুর ব্যাপারে মতিঝিল থানায় মামলা আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৮. মাওলানা সিহাব উদ্দিনের ব্যাপারে পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত শেষে মন্তব্য করা হয়েছে, ১৮ নম্বর ও ২০ নম্বর ক্রমিকের ব্যক্তি একই। ১৯. মো. শামসুল আলম সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিহত এ ব্যক্তির নাম ইসহাক আলী ওরফে ইসা হুজুর, পিতার নাম-নূর মোহাম্মদ। ২০. মাওলানা শিহাব উদ্দিন সম্পর্কে পুলিশ বলছে, ১৮ ও ২০ নম্বর ব্যক্তি একই।
২১. মো. নাহিদ শিকদার সম্পর্কে পুলিশ বলছে, ৬ ও ২১ নম্বর ক্রমিকের ব্যক্তি একই। ২২. মো. ইউনুস সম্পর্কে পুলিশ বলছে, তারও মৃত্যু হয়েছে। ২৩. মো. সাইদুল বারীর ঘটনা পুলিশ মন্তব্য করেছে, ক্রমিক ২৩ ও ৪২ নম্বর একই ব্যক্তি। ২৪. মোক্তারের মৃত্যুর ঘটনা সঠিক, তবে শাপলা চত্বরে নয়। ২৫. শামসুল আলমের মৃত্যুর ঘটনাটি পুলিশ তদন্তই করতে পারেনি।
২৬. মাওলানা মোহাম্মদ হাসান সম্পর্কে পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে তারা কোনো তথ্য পায়নি। ২৭. হাফেজ মো. মাহমুদুল হাসান জুবায়েরের মৃত্যু ঘটেছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। ২৮. কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকার মাওলানা মাহমুদুল হাসান সম্পর্কে পুলিশ তথ্য পেয়েছে, মৃত্যুর পর এ ব্যক্তিকে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে দাফন করা হয়েছে। ২৯. হাফেজ লোকমান হোসেন, ৩০. মো. আল-আমিন, ৩১. মাওলানা জুবায়ের, ৩২. মো. শফিউল্লাহ বাদল সম্পর্কে পুলিশ বলছে, কোনো তথ্য মেলেনি। ৩৩. হাবিবুল্লাহ মুন্সীর ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ বলেছে, তার বাবার নাম আবু মিয়া।
৩৪. মো. সিরাজুল ইসলাম, ৩৫. বাবু গাজী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য পুলিশের। ৩৬. জাহিদুল ইসলাম সৌরভ জীবিত আছে। ৩৭. হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র আনোয়ার এবং ৩৮. মেঘল মাদ্রাসার ছাত্র শাহাদাত চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। ৩৯. মো. সোহেল ও ৪০. ফকির ইবনে মাইজুদ্দিন ফকিরের ব্যাপারেও তথ্য পায়নি পুলিশ। ৪১. মাহফুজ খান সম্পর্কে পুলিশ তদন্ত করে বলছে, নিহতের নাম মাসুদ খান, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে।
৪২. হাফেজ সাইদুর রহমান সম্পর্কে পুলিশ বলছে, ২৩ ও ৪২ নম্বর একই ব্যক্তি। ৪৩. মাওলানা আনোয়ার হোসেন সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই নিহত ব্যক্তির নাম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।