বর্তমান সময়ে নারীর ক্ষমতায়নের ব্যাপারে সারা বিশ্বে এক ধরনের আলোড়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম অধিকার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে জোরালোভাবে। পাশ্চাত্য নারীর ক্ষমতা এবং অধিকার(!) সংরক্ষণ করে বা করেছে এটা সু-প্রতিষ্ঠিত ধারনা। একাবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার সময়ে নারীকে ঘরে বসে থাকলে চলবে না, তাকে পুরুষের সমান হতে হবে(বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় যে,নারীরা/নারীবাদী সংগঠনগুলো এখন বলছে-তাদেরকে পুরুষের সমান হতে হবে। অর্থাৎ এর অর্থ দাড়াচ্ছে- নারীরা স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, তারা পুরুষের থেকে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ নন।
তা না হলে পুরষের সমকক্ষ হবার প্রতিযেীতায় অবতীর্ণ হবে কেন ? বরং তাকে ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু তারা যে পথ অবলম্বন করেছে তাতে তারা পরাজিত,নিগৃহিতই হবে,কারণ- তারা নারী-পুরুষের আকৃতি,প্রকৃতি,শক্তি,গঠন,মানুষিকতার স্বাতন্ত্রকে বিবেচনায় না এনে ঢালাওভাবে কর্ম বন্টনে বিশ্বাসী। এ ব্যাপারে তাদেরকে তাদের জীবন দর্শনই বিভ্রান্ত করেছে) ।
তো, একবিংশ শতাব্দীর আজকের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন সংগ্রাম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অধিকার প্রাপ্ত নারী সমাজ আসলেই অধিকার পেয়েছে কিনা ,বা তাকে বোকা বানিয়ে অন্যেরা সুবিধা ভোগ করেছে কিনা এবং উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে তাকে দিয়ে ব্যবসা করিয়ে অন্যেরা লাভবান হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে আমি পূর্বে কিছুটা আলোচনা করেছি। এবার আমরা একটু ইতিহাসে যাব।
আমরা দেখবো পূর্বে নারীদের অবস্থা কি ছিল। কোন সমাজ নারীদেরকে কিভাবে দেখতো তা একটু আলোচনা করি ঃ
নারী সংক্রান্ত ইতিহাস খুব বেশী ঘাটলে আমাদের কাঁদতে হবে,তাই সংক্ষেপে বলা ভালো। হযরত ঈসা (আঃ) বা যীশু খৃষ্টের জন্ম কাল থেকে ইংরেজী সাল গনণা শুরু হয়েছে।
ঈসা (আঃ) এর পরবর্তী সময়ে তার উপর অবর্তীণ কিতাব ঈঞ্জীল বা বাইবেলের রক্ষাকারী ছিল ধর্মগুরুরা অর্থাৎ পোপরা। তারা গীর্জায় এটি সংরক্ষণ করতো।
এখান থেকে তারা কিছু মুখস্থ করে জনগনকে উপদেশ দিত। মূল বাইবেল জনগণের স্পর্শের বাইরে থাকতো। প্রিন্টিং মিডিয়া আজকের মত না হওয়াতে হাতে লেখা বাইবেল কয়েক কপি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ধর্মগুরুদের কাছে থাকতো। খৃষ্টানদের মতে যিশুর শূলে বিদ্ধ হওয়ার পর ( এবং আলকুরআনে আল্লাহর ভাষায়,“তারা ঈশাকে হত্যা করেনি,ক্রুশ বিধ্যও করেনি বরং তাদের এরুপ বিভ্রম হয়েছিল। যারা তার ব্যাপারে মতভেদ করেছিল তারা অবশ্যই এব্যাপারে সংশয়যুক্ত ছিল, ঈশার ব্যাপারে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোন জ্ঞানই ছিলনা।
এটা নিশ্চিত যে,তারা ঈশাকে হত্যা করেনি বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন,আল্লাহ পরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময়। ”(আল-কুরআন,৪ঃ১৫৭-১৫৮) মূলতঃ ঈশার(আঃ) শিষ্য মার্ক,লুক,মথি,যোহন তখন তার সাথে ছিল কিন্তু তাদের নবীকে ফেলে তারা ইহুদীদের ধাওয়া খেয়ে এমন উর্ধ্বশ্বাসে পলায়ন করে যে,পেছনে ফেলে আসা ঈশার ভাগ্যে কি ঘটেছিল, তারা তা জানে না বরং অনুমান করে থাকে) এরপর ত্রিত্তবাদের জন্ম হয়। যীশুর অনুসারীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয় । ১) রোমান ক্যাললিক ২) প্রটেস্টান্ট ৩) অর্থোডক্স। এই তিন শ্রেণীর মধ্যে দ্বন্ধ চরমে ওঠে (এ ছাড়াও আছে ‘ইভানজেলিক্যাল’,যারা অন্য সবাইকে শয়তান মনে করে।
আরো অনেক ভাগ আছে তবে তারা উক্ত ৩ শ্রেণীর মত ততটা শক্তিশালী নয় )। একশ্রেণী অপরশ্রেণীর থেকে শ্রেষ্টত্ব অর্জনের জন্য বাইবেলের সংস্কার করেছে নিজেদের স্বপক্ষে এবং এটা নিয়ে দ্বন্দ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে বহুবার। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তারা পূর্ববর্তী কিতাবগুলোকে বিকৃত করেছে ...” জনগন পোপ কে শ্রদ্ধা করতে করতে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যায় যে, তারা তাদের পরকালের মুক্তির দূত মনে করতে থাকে। আর পোপরা বা ধর্মগুরুরা অধিক সম্মান শ্রদ্ধা পবার জন্যে বাইবেল ,তাওরাত,যাবুর সহ অন্যান্য আসমানী কিতাবকে নিজেদের মত করে সম্পাদনা করে। রাষ্ট্রের শাসনকর্তা বা রাজাকেও পোপ নির্যাতন করতো।
রাজা পোপের অনুগত বান্ধা ছাড়া কিছুই ছিলনা। পোপতন্ত্রে নারীকে মানুষের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। তারা ছিল পুরুষের করুনার পাত্র। সম্পদের অধিকার দূরে থাক,সাধারনভাবে বেঁচে থাকার জন্যে তাদেরকে পুরুষ সমাজের করুণার উপর নির্ভর করতে হতো। পোপ বা ধর্মগুরুরা প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন নারীকে আশা করতো, যারা গীর্জার জন্য জীবন উৎসর্গ করবে।
সেই নারীরা বিয়ে করতে পারতো না। নিরামিষ,খেতে হতো,এক রংয়ের বিশেষ কাপড় পরতে হতো। দিন,রাতের অধিকাংশ সময় তারা পোপের সেবাযতœ এবং পোপের তৈরীকরা ইবাদত করতো। তাদের উপর এত কঠোরতা আরোপ করা হতো যে তারা বাইরে বের হতে পারতো না। অনেকে মানুষিক ভাবে বিপর্যস্থ হতো।
যখন রোগগ্রস্থ হয়ে পড়তো, তখন জীনে ধরেছে বলে পাদ্রীরা তাদেরকে বেদম প্রহার করতো। ডাইনি আখ্যায়িত করে হত্যা করত। অনেককে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। রাজা যে পদ্ধতিতে রাজ্য শাসন করত সে পদ্ধতি পোপের কাছ থেকে নিতে হতো। জনগণ পোপকে মুক্তির দূত মনে করতো তাই তার সমস্ত আইনকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহন করা হতো।
এই সময়ে সমাজের সুউচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের পরিবারবর্গ খুবই নিরাপদে ছিল এবং এলিট শ্রেণীর নারীরা খুবই সম্মানজনক জীবনযাপন করতো। তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম ছিল।
শুধু খৃষ্টানরা নারীর সাথে এমন আচরণ করেনি পৃথিবীর প্রতিটা প্রান্তে নারী অবমানাকর অবস্থার মধ্যে ছিল। ইহুদীরা একইভাবে তাওরাত বিকৃত করে নারী নির্যাতন করেছে ও নারীকে ভোগের সামগ্রী বানিয়েছে ধর্মের দোহাই দিয়ে। গোটা ইউরোপ-আমেরিকায় নারী ছিল অবাঞ্চিত বস্তু।
তাকে যেমন খুশি তেমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তার দূর্বলতার সুযোগে পুরুষরা বা শক্তিশালীরা অসহায় নারীকে ভোগ্যপণ্য বানিয়েছিল
............................চলমান ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।