গত কাল রমজান মাস নিয়ে একজন শ্রদ্ধেয় ব্লগার স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তাঁর শৈশবের একই দিন একাধিক রোজা রাখার কাহিনী বলেছেন। খুব সম্ভবত প্রায় সকলের শৈশবে সকাল-দুপুর দু'বেলা খেয়ে দিনে তিনটি রোজা রাখার মজার অভিজ্ঞতা আছে। কাল সেই স্মৃতি চারণ পড়তে গিয়ে শৈশবে পড়া 'মোল্লা নাসরুদ্দীস হোজ্জা'র গল্প মন পড়ে গেল। তাই পাঠকের জন্য তুলে ধরলাম।
'মোল্লা নাসরুদ্দীস হোজ্জা'র যুগে ক্যালেন্ডারের প্রচলন ছিল না।
ফলে রমজানে রোজার সংখ্যা হিসাব রাখাটা এক রকম কঠিন কাজ ছিল। প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে প্রায় বিবাদ হত। সেই কারণে প্রতি বছর নাসরুদ্দীস হোজ্জার মহল্লার এক জনের উপর দ্বায়িত্ব অর্পিত হত রোজার সংখ্যার হিসাব রাখার জন্য। সে বছর এ দ্বায়িত্ব পড়লো 'মোল্লা নাসরুদ্দীস হোজ্জা' উপর।
হোজ্জার বুদ্ধি তীক্ষণ ।
তিনি প্রতি দিন ইফতারির আগে একটি মাটির কলসে একটি করে পাথর জমা করে রাখতেন যেন প্রয়োজনের সময় সহজেই পাথরের সংখ্যা গনণা করে সঠিক রোজার সংখ্যা জানা যায়।
হোজ্জার ছোট মেয়ে টি বাবার পাথর সংগ্রহ করতে দেখে বাবা কে সাহায্য করার জন্য যেখানে যত নুড়ি পাথর চোখে পরতো এনে সেই কলসে এনে ফেলতো।
এর মাঝে রমজানের বেশ কত দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। তারাবির নামাজের সময় হোজ্জার কাছে জানতে চাওয়া হল কত টি রমজান শেষ হয়েছে। হোজ্জা কিছু সময় প্রার্থনা করে বাড়ি এসে তাঁর কলসের পাথর গণনা করে দেখেন পাথর আছে ১৪৯ টি্ ।
হোজ্জা বুঝলেন তা হতে পারে না। তিনি তাড়াতাড়ি মসজিদে ফিরে জবাব দিলেন ' ৪৯টি রোজা অতি বাহিত হযেছে"। সকলে বলে উঠলেন , ' না, না! তা কি করে সম্ভব। '
মোল্লা নাসরুদ্দীস হোজ্জা বললেন ,' ঠিক আছে , তোমাদের যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় , তবে এই থলি কে বিশ্বাস কর । তাহলে রোজার সংখ্যা ১৪৯ টি।
''
মোল্লা নাসরুদ্দীস হোজ্জা যুগ বহু আগে গত হয়েছে। রমজানের সংখ্যা নিয়ে আজকের এ রকম যুগে বিরোধ হবার আর কোন সুয়োগ নেই। কিন্তু সত্যই কি তাই? প্রতি বছর দেখি খোদ ঢাকা শহরে বিভিন্ন গোষ্ঠি ভূক্ত মুসলমানরা রোজা শুরু ও শেষ করা নিয়ে কিংবা ঈদের দিন নির্ধারণ নিয়ে বিবাদে অবর্তীণ হয় । এই বিবাদের সমাধান তো হচ্ছেই না ; বরং য়েন দিন দিন বাড়ছে।
এই বিবাদ টি মূলত চাঁদ দেখা কে কেন্দ্র করে।
বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষতার যুগে আমরা চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে আমাদের চাঁদ আমাদের দৃষ্টি গোচর হওয়া কে গুরুত্ব দেই। অথচ কয়েক সহস্র বছর আগেই নবীন চাঁদের মাসিক আবির্ভাবের ক্ষণ গণনার ( যা কে লগ্ন বলে) বৈজ্হানিক পদ্ধতি আবিষ্কৃত।
মজার বিষয়। আমার কিন্তু এই যুগে আর আকাশে সূর্যের অবস্থান দেখে নামাজ আদায় করি না। কিংবা সচক্ষ সুবেহে সাদিকের বা সূর্যাস্তের সময় নির্ধারন করে সেহেরী করি না বা ইফতার করি না।
আমারা কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্ণয়কৃত সময় অনুসারে তা করে থাকি।
কেউ যদি বলেন চাঁদ দেখার অনিশ্চয়তা ঈদ আনন্দের অংশ । বৈজ্ঞানিক গণনা সেই আনন্দ কে মাটি করবে তাহলে কিছু বলার নেই। কিন্তু আমাদের গ্রামে শরিয়াতপুরের একজন পীরের মুরিদ তিনটি পরিবার গত বছর ঈদ করা নিয়ে যে তিক্ষতার শিকার হয়ে আজও যেভাবে জীবন যাপন করছে তাদের কথা মনে করেই আমার এ লেখা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।