পেছনে মা, ডাকছে।
বিরক্তে আমার মেজাজ চরম খারাপ। আমি তাকাচ্ছি না। প্রচন্ডভাবে চাইছি মা ডাকাডাকি বন্ধ করে চলে যাক। তবে মা ডাকাডাকি বন্ধ করে চলে গেলে এই শান্তিটা সাময়িক।
এরপর শুরু হবে বাবার ডাকাডাকি।
মহা ফ্যাসাদ। একটু পর সন্ধ্যা হয়ে যাবে। খেলার আছে আর সামান্য কিছুক্ষণ। এর মধ্যেই ডাকাডাকি।
ভাল্লাগেনা। রোজার মাসটাই এরকম।
আবার ডাক শুরু। এবার বাবা।
এবার খেলা রেখে পেছন ফিরে তাকাতেই হলো।
অমীমাংসিত অবস্থায় খেলা রেখে চলে যেতে হলো।
খেলার মাঠকে পেছনে রেখে ছোট্ট খাল পেরিয়ে বিমর্ষ বদনে বাসামুখী যাত্রা।
খালটির ওপারে দু'টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাবা, জলদি যা আযান দেয়ে দেবে।
আমি তার দিকে না তাকিয়ে দু'টাকা হাতে নিয়ে চলে গেলাম রাস্তার দিকে।
আমাকে বরফ আনতে হবে।
ইফতারিতে ঠান্ডা পানি খাওয়ার আয়োজন। ছোট্ট মফস্বলে তখনো ফ্রিজ আসেনি। তখনো এই মফস্বল জানতো, ওটা অনেক টাকা'অলা মানুষের ঘরের বস্তু। যেখানে বরফ হয়।
আমি মিনিট দশেক হেটে গিয়ে ব্যাপক ভীড়ের ভেতরে দু'টাকাসহ হাত বাড়িয়ে দেই।
বরফ বিক্রেতা লোকটার মনযোগ তখন মিনিমাম বিশজনের দিকে।
আমার মনযোগ আমার বাবার কথার দিকে। তার কঠিন নির্দেশ, আযানের আগে বরফ নিয়ে যেতে হবে। কোনো এক ভাগ্যে একটা সময় লোকটা আমার দিকে তাকায়। চটের বস্তার ভেতর থেকে 'তুষ' মেশানো বিশাল বরফ থেকে দুম করে ভেঙ্গে একটা পলিথিনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দেন।
আমি তখন রাজ্য জয়ের সমান আনন্দে বাসার দিকে দৌড়াই আর যেতে যেতে কিছুক্ষণ পর পর বরফের পলিথিন হাত বদল করি। পলিথিনে জমে থাকা ঠান্ডা পানি মুখে মেখে নেই।
ছোট্ট আমি তখন রোজা না রাখলেও শরবত, ঠান্ডা পানি খাওয়া বাসার রোজা রাখা সবার মুখ দেখলে অনায়াসে বোঝা যায় ইফতারির মুল প্রশান্তি আসলে এখানেই।
সেই মফস্বল ছেড়েছি অনেক বছর হলো। আমাদের বাসায় ফ্রিজ এসেছে তাও বারো পনেরো বছর।
নিয়মিত রোজা রাখি অনেক বছর হয়ে গেছে। প্রতি বছর প্রতিটি রোজার প্রথম দিনগুলোতে ঠান্ডা পানি মুখে নিয়ে আমার মনে হয়ে যায় সেই স্মৃতি।
ফ্রিজ থেকে বের করা বরফগুলো দেখে সেই বরফের সাথে মেলাই।
ভয়ানক অবাক ব্যাপার, এখনকার বরফগুলো কেন যেন আগের মতো ঠান্ডা লাগেনা।
কেন লাগেনা আমি বুঝিনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।