কদিন থেকে একটা বই পড়ছিলাম। পড়ি। রেখে দিই । আবার ধরি। কারণ
পড়লেই শুধু আমার হয় না।
ভাবতে হয়। ভাবি। অংক মিলাই । কেমন ছিল
সেই সময়চিত্র ? '' ঈশ্বর গুপ্ত থেকে শহীদ কাদরী '' - আব্দুল মান্নান সৈয়দ।
৪০০ পৃষ্টার বই।
ঊনবিংশ- বিংশ শতাব্দীর নির্বাচিত ৩৫ জন কবির পর্যালোচনা ।
এই বইটিকে একটা দলিল বলা যায়। মান্নান সৈয়দ কি ইতিহাস লিখেছেন ?
না ইতিহাস নয়। আবার ইতিহাস ও। উপাদান সমৃদ্ধ দলিল।
জবানবন্দী।
আচ্ছা , মানুষ কেন জবানবন্দী দেয় ? দেয় , তার নিজের পক্ষকে তুলে ধরার জন্য । রায় দেবেন বিচারক। তা জেনেও মানুষ বলে। বলে যায়।
............................................
গেল কদিন আগে আমি আবু মকসুদ সম্পাদিত '' তৃতীয় বাংলার কবি ও কবিতা'' বইটির একটা আলোচনা লিখি। তা লন্ডনে সুরমায় ছাপাও হয়।
আছে আমার এই ব্লগেও । http://www.somewhereinblog.net/blog/FAQIRELIASblog/28977065
লেখাটি পড়ে বেশ দূর থেকে আমাকে একজন ফোন করেন। কিছুটা ইনিয়ে বিনিয়ে তিনি যা বলতে চাইলেন - তার মর্মার্থ হচ্ছে , আমি
''অমুক'' কে , ''তমুক'' কে কেন কবি বলেছি ?
আমি বললাম, আমি তো কোনো সনদ দিই নি।
কবিতার কথাগুলো তুলে
এনে আলোচনা করেছি মাত্র।
তারপরও তিনি সন্তুষ্ট হলেন বলে মনে হলো না।
সোজা সাপ্টা সললেন - '' ফকির ইলিয়াস যখন কাউকে কবি বলেন, তখন তার গুরুত্ব বেশ বেড়ে যায় , কবি !''
আমি হেসে দিলাম । আমি কে ? কি ক্ষমতা আছে আমার ?
...........................................
মনে পড়ছে , আমি যখন লেখালেখির জগতে আসি , তখন আমার নিজের প্রতি আমার নিজের একটা কমিটমেন্ট ছিল। কি ছিল সেই কমিটমেন্ট ? তা ছিল এই - আমি কখনও ই আমার নিজের সীমা অতিক্রম করবো না।
আমার লেখা কোনো অশুভ বিতর্ক , সামাজিক কলহ তৈরি করে - তা আমি হতে দেবো না। কিংবা এমন কোনো লেখা
লিখবো না। আমি না না সভা সেমিনারে বলি , আমি মূলতঃ বাউল
সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি । যে সমাজ টা সব সময়ই নিভৃতচারী । কিন্তু সত্যের প্রয়োজনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
শিঙা ফুঁকে নেমেছে
ময়দানে। কারণ তাদের বিশেষ কিছু চাওয়ার নেই। সম্বল সৎসাহস।
আর এই অসীম শক্তিই তাদেরকে বিজয়ী করেছে বার বার।
.............................................
কোনো মানুষ নিজ শিকড়ের ইতিহাস না জানলে - সে তো প্রকৃত আত্মান্বেষী হতে পারে না।
আর কবি হলে তো কথাই নেই।
অশ্লীল শব্দাবলি কে না জানে ? আমরা জানি , প্রত্যন্ত বাংলায় একটা শিশু কথা বলতে শিখলেই , ভালো শব্দাবলির চেয়ে খারাপ কথাগুলোই
আগে রপ্ত করতে পারে। এবং মনেও রাখতে পারে।
তার কারণ কি ? কারণ টি হচ্ছে , মানুষের দেহের রিপু গুলো সবসময়ই
অশুভ কিছু করতে, কিছু শিখতে উৎসাহিত করে। ভালোর দিকটা তখন
চাপা পড়ে যায়।
সাধনা করে ভালোর দিকটা উজ্জ্বল করে তুলতে হয়।
সেই সাধনা - জানা, পড়া, শেখা , অধ্যবসায়।
নগ্নতা কিংবা অশ্লীল কতিপয় শব্দের ব্যবহারই যদি কবিতা হতো, তবে
পৃথিবীর গালিগালাজই হয়ে উঠতো অন্যতম পংক্তি !
না , সে সুযোগ সাহিত্য দেয় নি। ''সহিত'' শব্দটির মর্মমূলে আত্মার
অনুরণনের নামই সাহিত্য । অন্য কিছু নয়।
.................................................
তৃতীয় বাংলা , তথা বিলাতে আরেকটি সংকলন বের হয় ২০০৫ সালের
আগস্ট মাসে। '' তৃতীয় বাংলার কবিতা '' - সম্পাদক আতাউর রহমান মিলাদ। ৪০ জন কবির কবিতা স্থান পায় এই গ্রন্থে। কবি মোফাজ্জল
করিম ও তার সহধর্মীনি কবি মমতাজ জাহান করিম , বিলাত অভিবাসী
নন। তারা সরকারী চাকুরী সূত্রে বিলাতে ছিলেন ।
সম্পাদক সেই সময়টাকে ধরে রাখতে ঐ দুজন কবির কবিতাও মনোনীত করেছেন ।
সময়কে ধারণ করার এই যে বিচক্ষণতা , তা কেবল একজন প্রজ্ঞাবান
নির্বাচক -সম্পাদক ই পারেন।
এই গ্রন্থে অনেকের কবিতাই প্রতিনিধিত্ব করার দাবী রাখে ।
কিছু উদাহরণ এখানে না দিলেই নয় .........
ক .
প্রত্ন- সভ্যতা বার্ধক্যে গ্যাছে এমনই প্রশ্নের তোড়ে
ফি-সন্ধ্যায় আমরা উত্তর খুঁজি প্রাত্যহিক সুরে
[ সন্ধ্যায় বৃষ্টি এলে - সুমন সুপান্থ ]
খ
তোমার জন্য
রেখেছি ভোরের সোনালী রোদ
টোনাটোনির ক্যাসেটে কবিতার পঙতি
নির্মাণের জন্য প্রতিবাদী মায়ের একটি ভাষা
বাংলা ভাষা
[ তোমার জন্য বুনেছি নকশী কাঁথা - সফিয়া জাহির ]
গ
দ্বিধা ও দ্রোহের জ্বলে
শব্দের নদীও পেয়ে যায় অলৌকিক চাকা
অতঃপর ভাঙচুর কেবলই ভাঙা গড়ার উৎসব
[ মানুষ ঈশ্বর হলে - শাহ শামীম আহমদ]
ঘ
আমি নদী কিংবা রোদ কিংবা মেঘ নই মেঘের আকারে সম্মুখ পানে চেয়ে থাকা
অন্ধকার গলির ভেতর আমার অবস্থান কিংবা আলতাব আলী পার্কের
সবুজ ঘাস
[ আমি এবং অন্য একজন- শামীম শাহান ]
ঙ
এ কাঙালের ইচ্ছা ছিলো ঝর্ণাজলে লুন্ঠিত হবার। ফতুর হবার পাহাড় লাবণ্যে
ফর্সারাতে কাতর হলে মধ্যঘোরের ডাক, তার বড়ো ইচ্ছা ছিলো ঘরছাড়া
এক সন্ত বাউল হবার
[ সাং নালিহুরী - মুজিব ইরম ]
এভাবে অনেক কবিই বুনেছেন নিজেকে।
রচনা করেছেন তৃতীয় বাংলার
পাড়ে বসে মনের নবম পয়ার ।
( চলবে .........)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।