আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হজ্বের সেই দিনগুলো - ৯ম পর্ব

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়

(বেশ কিছুদিন ব্যস্ত থাকায় হজ্বের সেই দিনগুলো পর্ব লেখা বন্ধ ছিলো । শেষ পর্বে মসজিদে নব্বীর রিয়াজুল জান্নাতের বেশ কিছু স্তম্ভ নিয়ে লেখছিলাম তার ধারাবাহিকতায় আজকে পরের স্তম্ভ নিয়ে লেখলাম। ) উসতানে আয়েশা বা আয়েশার স্তম্ভ এই স্তম্ভটির অবস্থান ছবিতে চিন্হিত স্থানে অবস্থিত। এই স্তম্ভটি উসতানে মোহাজিরীন বা মোহাজিরীনের স্তম্ভ নামেও পরিচিত কারন এখানে মদিনার মোহাজিরীনরা সাধারনত বসত। এই জায়গায় প্রথমদিকে হজরত মুহাম্মদ (সা: ) নামাজ পড়তেন পরে তিনি এই স্থানের পরিবর্তে উসতানে হান্নানাহ এর নিকটে নামাজ পড়া শুরু করেন।

এই স্তম্ভ নিয়ে যে কাহিনীটি জানা যায় তা হল হজরত মুহাম্মাদ (সা: ) এর ওফাতের পর বিবি আয়েশা (রা: ) সর্বপ্রথম এই স্তম্ভর সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন যে নবিজী (সা: ) এই স্তম্ভের বিষয়ে তাঁকে একদা বলেছিলেন যে এই মসজিদে নব্বীতে এমন এক জায়গা আছে যার ফজিলত এতই বেশী যে মানুষ যদি তা জানত তাহলে সেই স্থানটিতে নামাজ পড়ার জন্য লটারী ধরার জন্য লাইন ধরতো । অনেক এই স্থানটি তাঁকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য বললেন তিনি রাজী হননি কিন্ত হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা: ) বারংবার অনুরোধে অবশেষে তিনি সেই স্থানটি দেখিয়ে দেন । এই স্তম্ভের কাহিনীটি যেহেতু তিনি প্রথম বর্ননা করেন এবং তিনিই স্থানটি দেখিয়ে দেন তাই তার নামানুসারে স্তম্ভটির নামকরন করা হয়। উসতানে তাওবাহ বা গুনাহ মাফের স্তম্ভ এই স্তম্ভ আবু লুবাবাহ এর স্তম্ভ নামেও পরিচিত । হজরত আবু লুবাবাহ ছিলেন নবীজি (সা: ) সাহাবীদের একজন অন্যতম সাহাবী ।

মুসলমানদের সাথে বানু কুরায়জা নামক ইহুদী গোত্রে সাথে যুদ্ধ চলছিলো তখন এক পর্যায়ে মুসলমানরা এই গোত্রের সকলকে দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে । একপর্যায়ে তিনি নিজের ধৈর্য্যর বাঁধ ভেংগে যুদ্ধাস্ত্র ত্যাগ করতে উদ্যত হন । যুদ্ধের পূর্বে এই গোত্রের ইহুদী দের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো বিধায় তাকে ইহুদীরা ডেকে নিয়ে যায় তিনি সেই গোত্রে পৌঁছুলে ইহুদীরা তার সাথে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে তার সামনে কান্নায় ভেংগে পড়ে এবং আহাজারি করতে থাকে এবং একপর্যায়ে তারা সাহাবী হজরত আবু লুবাবাহ কে জিজ্ঞেস করে যে তাদের ভাগ্যে রাসুলুল্লাহ (সা: ) কি নির্ধারিত রেখেছেন । তাদের প্রতারনা বুঝতে না পেরে তিনি ইশারায় গলার সামনে হাত দিয়ে বুঝিয়ে দেন তাদের কতল করা হতে পারে । সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি গোপন পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দেওয়ার অনুশোচনায় নিজেকে এই স্থানে অবস্থিত একটি খেঁজুর গাছের সাথে বেঁধে বলেন যতক্ষন না আল্লাহ তাকে এই কৃত গুনাহ থেকে ক্ষমা না করবেন ততক্ষন পর্যন্ত তিনি এই বাঁধন খুলবেননা ।

এই খবর যখন নবীজি (সা: ) কাছে পৌঁছুলো তিনি বললেন "যদি লুবাবাহ আমার কাছে আসতেন এই বিষয়ে তাহলে আমি তার গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতাম কিন্ত যেহেতু সে আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি ক্ষমা প্রার্থনা আবেদন করেছেন । তাই আল্লাহ ক্ষমা না করা পর্যন্ত কিভাবে আমি তার বাধঁন খুলে দিতে পারি " এইভাবে হজরত আবুলুবাবাহ (রা: ) বেশ কয়েকদিন কোনপ্রকার পানীয় এবং খাদ্য ছাড়া ছিলেন শুধুমাত্র নামাজ এবং প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার জন্য তার স্ত্রী এবং মেয়ে তার বাধঁন খুলে দিতো এবং কাজ শেষে আবার আগের মত তাকে বেঁধে রাখতো । এভাবে তার শ্রবননেন্দ্রিয় এবং দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে লাগলো । অবশেষে একদিন সকালে তাহাজ্জুদের নামাজের শেষে উম্মে সালামা (রা: ) ঘরে রাসুলুল্লাহ এর কাছে আল্লাহ অহী পাঠিয়ে সাহাবী হজরত আবু লুবাবাহ (রা: ) তওবা কবুলের ঘোষনা দিলেন। এই খুশীর সংবাদ নিয়ে যখন অন্যান্য সাহাবীরা তার বাধঁন খুলে দিতে চাইলেন ।

সাহাবী আবু লুবাবাহ (রা: ) বললেন যতক্ষন না পর্যন্ত রাসুলু্ল্লাহ স্বয়ং তার পবিত্র হাতে বাধঁন খুলে না নিবেন ততক্ষন পর্যন্ত তিনি নিজেকে মুক্ত করবেননা । অবশেষে ফজরের নামাজের সময় নবীজি (সা: ) মসজিদে নব্বীতে প্রবেশ করে তাকে বাধঁন মুক্ত করলেন । এই স্তম্ভটি তাই গুনাহ মাফের জন্য অত্যন্ত বরকতময় একটি স্থান হিসেবে মুসলিমদের কাছে পরিচিত । উসতানে আলী বা আলীর স্তম্ভ এই স্থানে অবস্থিত স্তম্ভের নিকটে সাধারনত সাহাবী গন মসজিদে নব্বীর প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতেন। এবং বেশীর ভাগ সময় এই দায়িত্ব পালন করতেন হজরত আলী (রা: )।

উসতানে শারীর বা বিশ্রামের স্তম্ভ এই স্থানে অবস্থিত স্তম্ভের নিকটে রাসুলুল্লাহ (সা: ) ইতিকাফের সময় অবস্থান করতেন এবং বিশ্রাম করতেন । এই স্থানটি তার ইবাদতের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে বিধায় স্থানটি সেদিক থেকে বেশ তাৎপর্যপূর্ন এবং পবিত্র । উসতানে তাহাজ্জুদ এই স্থানে অবস্থিত স্তম্ভের নিকটে রাসুলুল্লাহ (সা: ) এর জন্য গভীর রাতে একটি চাদর পাতা থাকতো সেখানে তিনি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন । এবং কথিত আছে এই স্থানেই তিনি যখন পরপর তিন রাত্রি তারাবীহ নামাজ আদায় করেছিলেন । তখন তার পেছনে একাধারে এই তিন রাত্রি সাহাবীরা তা র পেছনে জামাতে দাড়িয়ে তার সাথে নামাজ পড়া দেখে তিনি ৪র্থ রাতে আর আসেন নি এই ভয়ে যে এই নামাজ আবার আল্লাহ পাক তার উম্মতের জন্য ফরয করে দেন ।

উসতানে ওফুদ এই স্থানে অবস্থিত স্তম্ভের নিকটে সাধারনত রাসুলুল্লাহ (সা: ) তার সাথে দেখা করার জন্য আগত বিভিন্ন দেশের বা গোত্রের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করতেন । উসতানে জীবরীল বা জীবরীলের স্তম্ভ এই স্থানে অবস্থিত স্তম্ভের নিকটে দিয়ে জীবরীল (আ: ) অহী নিয়ে নবিজীর কাছে আসতেন। এই রিয়াজুল জান্নাতের মধ্যে প্রতিটি স্তম্ভের সাথে জড়িয়ে আছে এক একটি ইতিহাস আর আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত এবং বরকত । তাই প্রতিদিন আগত হাজীদের ঢল লেগেই থাকে এই বিশেষ জায়গায় কোনমতে শুধু ২ রাকাত নামাজ পড়ে নিজের গুনাহ মাফ করার এক প্রবল বাসনার।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।