বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়
মসজিদে নব্বীর যে স্থানকে দেখার জন্য সহস্র মাইল থেকে ছুটে আসা সেই রাসুলের পবিত্র রওজা মোবারক কে দেখার জন্য আমরা সকলেই ছিলাম উদগ্রীব । তাই সকালের ফরয নামাজ শেষে দলের সিনিয়র সদস্য সারওয়ার ভাইকে খুব করে ধরলাম চলেন ভাইয়া দেখে আসি একবার রওজা মোবারক । তিনি হেসে বললেন এত অস্থির হওয়ার কিছু নাই আর এখন সকালে সেখানে যে অবস্থা সেই ভীড়ে কিছুই দেখা যাবেনা । তিনি বুদ্ধি দিলেন যেহেতু আজ আমাদের মদীনার প্রথম দিন অতএব দলের সবার উচিত আজকের দিনটি মসজিদে নব্বীতে নামাজ পড়া আর বিশ্রাম নিয়ে নিজেকে এখানকার আবহাওয়ার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া ।
যেহেতু তাকে আমরা নীতিগতভাবে দলের লীডার এবং একাধারে গাইড হিসেবে মেনে নিয়ে ছিলাম।
তাই আর কোন উচ্চবাক্য না করে সেদিনকার মত মনের ইচ্ছা মনে চেপে সাধারন ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায় করে আর বাকী সময়টুকু গেস্ট হাউসে দিনের খাবার খেয়ে কাটিয়ে দিলাম। এদিকে সারওয়ার ভাই ও বসে নেই তিনি কিছুক্ষন পরপর তার বিগত হজ্বের নানা ঘটনাগুলো আমাদের কাছে বর্ননা করে যাচ্ছিলেন। বিশেষ করে মসজিদে নব্বীতে কোথায় কি আছে এবং কোন কোন স্থানগুলো বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ ।
মসজিদে নব্বীতে সমস্ত জায়গা লাল বেশ মোটা কার্পেটে আবৃত কেবলমাত্র রিয়াজুল জান্নাহ স্থানটি সবুজ কার্পেটে আবৃত । এই স্থানটিতে আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা: ) খালি পায়ে দৈনিক পাঁচবার এই স্থানে বিচরণ করেছেন এবং এই জায়গাটি তার বাসস্থানের কাছাকাছি হওয়ায় এই জায়গাটিতে তিনি সর্বাধিক অবস্থান করেছিলেন।
রিয়াজ মানে বাগান আর জান্নাত মানে বেহেশত অর্থাৎ বেহেশেতের বাগান হিসেবে সরাসরি আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীবের সর্বাধিক বিচরনকৃত এই স্থানটি কেয়ামতের পর সরাসরি জান্নাতের সাথে সংযুক্ত করে নিবেন শেষ বিচার দিনে ।
এই স্হানটির নিকটেই আছে রাসুলের রওজা মোবারক এবং এই রিয়াজুল জান্নাহতে বিশেভাবে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এই স্থানে বেশ কটি পয়েন্টে সর্বমোট ৮টি পিলার বা স্তম্ভ অবস্থিত । এবং এর একটি স্তম্ভকে ঘিরে জড়িয়ে আছে এক একটি সত্য ঘটনা । এবং প্রতিটি ঘটনার সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িয়ে আছে আল্লাহ পাকের বিশেষ নেয়ামত , করুনা অথবা মোজেযা ।
যারা হজ্বে এবং মসজিদে নব্বীতে যাবেন তাদের সুবিধার জন্য আমি এখানে প্রতিটি স্তম্ভের পেছনের ঘটনাগুলো এবং একইসাথে সবগুলো স্তম্ভের অবস্থান এখানে তুলে ধরার জন্য চেষ্টা করব ।
আরবীতে পিলার বা স্তম্ভ কে বলে উসতান বলে। তাই নিচের নামগুলো উসতান বলে অভিহিত করব যাতে সেখানে যেয়ে সহজেই মনে পড়ে যায়।
উসতান বা স্তম্ভসমূহের নাম
১। উসতানে হান্নানাহ বা হান্নানাহের স্তম্ভ অথবা ক্রন্দনরত স্তম্ভ
২। উসতানে আয়েশা বা আয়েশার স্তম্ভ
৩।
উসতানে তওবা বা তওবার স্তম্ভ
৪। উসতানে শারীর বা শারীরের স্তম্ভ
৫। উসতানে আলী বা আলীর স্তম্ভ
৬। উসতানে ওয়াফুদ বা প্রতিনিধি স্তম্ভ
৭। উসতানে তাহাজ্জুদ বা তাহাজ্জুদের স্তম্ভ
৮।
উসতানে জিবরীল বা জিবরীলের স্তম্ভ
নিচে একটি স্কেচের মাধ্যমে পিলার গুলোর অবস্থান তুলে ধরলাম পাঠকের সুবিধার্থে । কারন বাস্তবে দেখা গেছে রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশ করলে মনের অবস্থা এমন দাড়াঁয় তখন পিলার গুলো চিনতে একেতো কষ্ট হয় । এছাড়া নানা মানুষের নানা মতে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়।
উসতানে হান্নানাহ বা হান্নানাহের স্তম্ভ অথবা ক্রন্দনরত স্তম্ভ
এই পিলারটির নাম উসতানে হান্নানাহ বা ক্রন্দনরত পিলার হওয়ার পেছনে একটি সুন্দর ঘটনা আছে। যেই ঘটনাটি রাসুল (সা: ) এর জীবনে একটি আল্লাহ প্রদত্ত মোজেযা হিসাবে বিবেচিত ।
এই স্থানে মূলত নবিজী নামাজ পড়তেন এবং জুম্মার খোতবার সময়ে এই স্থানে একটি ছোট জীবন্ত খেঁজুর গাছ ছিলো যার গায়ে তিনি হেলান দিয়ে খোতবা পড়তেন । পরবর্তীতে যখন মসজিদের উন্নয়নের সাথে সাথে নবিজী (সা: ) এর জন্য একটি মিম্বর তৈরী করা হয় । তখন তিনি সেই খেঁজুর গাছের পরিবর্তে সেই মিম্বরে দাঁড়িয়ে খোতবা পড়ছিলেন । ঠিক এই সময় সারা মসজিদে দেয়ালে গায়ে কারও যেন ফুঁপানো কান্নার আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো এবং উপস্থিত সবাই সেটা শুনতে পেলেন । উপস্থিত সবাই দেখলো সেই খেঁজুর গাছের থেকে যেন এই আওয়াজ আসছিলো ।
রাসুলুল্লাহ (সা: ) সেই গাছের নিকটে যেয়ে তার গায়ে হাত রাখা মাত্রই সেই কান্নার আওয়াজ থেমে গেল। রাসুলুল্লাহ (সা: ) উপস্থিত সব সাহাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন " এর আগে এর নিকটে আল্লাহর জিকির শোনা যেত এবং মিম্বর তৈরী হওয়ার পর এই জিকির না শুনতে না পেরে এই গাছটি কেঁদে উঠেছে । আমি যদি এর গায়ে হাত না রাখতাম তাহলে কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত এই কান্না থামতোনা । "
এই গাছটি পরবর্তীতে মরে শুকিয়ে গেলে এই স্থানেই একে পুঁতে ফেলা হয় এবং রাসুলুল্লাহ (সা: ) ওফাতের পর আব্দুল বিন ওয়ালিদের শাসন আমলে এই স্থানে একটি মিম্বর তৈরী করা হয় যার নাম মেহরাবে নাবী। এই মেহরাবে নাবীর দিকে মুখ করে দাঁড়ালে এর ডান দিকের পিলার টি হচ্ছে উসতানে হান্নানাহ ।
চলবে ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।