আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্দি কলম ৩ (ধারাবাহিক)

চলো আবার সবুজ গড়ি
প্রায় ভোর রাতের দিকে গাড়ি এসে নোঙ্গর করে থানার নিচে। নেমে আমাকে আর মামাকে মোটা চিকনের ক্ষুদ্র পুলিশ বাহিনি নিয়ে গেলো দোতলার দক্ষিন পার্শে। বসতে দিলো বারান্দায় পেতে রাখা সেগুন কাঠের চার হাত দৈর্ঘ একটি বেঞ্চে। অস্পষ্ট অন্ধকারে সামনের গরাদ গলিয়ে দেখতে পেলাম মাটিতে নারী আকৃতির কেউ ঘুমিয়ে আছে। আমার সামনেই কয়েকটা খাঁচায় কিছু জীবন্ত মানুষ ঘুমিয়ে।

এর আগে কখনো থানায় আসার প্রয়োজন অনুভুত হয়নি যার ফলে আমি ঘার ঘুড়িয়ে চারিদিকের পরিবেশটা আঁচ করার চেষ্টা করছি। চুপচাপ কেটে গেলো ৩০টি মিনিট। সময়ের ব্যাপারটা আসলেই আপেক্ষিক। আমি যদি আনন্দে থাকি তাহলে সে খুব দ্রুত পালিয়ে যায়। আর যদি দুঃখে থাকি তবে দুরদুর করে নেড়ী কুকুরের মত তাড়িয়ে দিলেও যেতেই চাইবেনা।

বলবে আরও একটু পরে যাবো। পুলিশে ধরলে সেই অনুভুতি কি দুঃখের নাকি সুখের? আবার সুখের হয় কিভাবে? কি সব আহত হাস্যকর কথাবার্তা!! সুখের হয়। সেই সব মানুষের জন্য...যারা জীবনের দূর্বিপাকে বিক্ষুদ্ধ অসহায় ছোবোলাক্রান্ত ক্ষুধার্ত। থানায়, জেলে গুতো খেলেও চারটি ভাত দেয়া হয়। মুক্ত পৃথিবীর স্বাধীনতা দিয়ে কি হবে? আর তাদের জন্য দুঃখের যারা পৃথিবীতে নিজেদের বেহেস্ত সাজিয়ে বসেছে।

এই কথায় মতের পার্থক্য দৃশ্যমান। কিন্তু আমি কিছু বিচ্ছিন্ন প্রলাপ বকছি না। আমি জীবনের ভেতরের কথা বলছি। মাটির ধরনীটা এভাবেই আমাদের ভিরে আমাদেরকে নিজের করে নেয়। আমার কাছে? সুখ আর দুঃখের মাঝামাঝি।

চারকোনা থানা বিল্ডিংটার মাঝখানে কিছু জায়গা খোলা। ফুল গাছগুলো ঈষত অন্ধকারে ঠায় দাড়িয়ে আছে। ফুলের রংগুলো বুঝা যাচ্ছেনা। কালোতে কোনো রঙ ই স্পষ্ট নয়। আমাদের পাশে বসা পুলিশটার একটু ঝিমুনিও আসছেনা।

আমি ভেবেছিলাম আমাদেরকে কোনো খাঁচায় ঢুকাবে। কিন্তু এখনো বসেই আছি। পেট মোটা হাতপা চিকন এমন একজন এশে জানালো আপনাকে ডাকছে। মামা জানতে চাইলেন আপনাকে মানে কাকে? আমাকে দেখিয়ে বললো ... কার নাম? আপনি ই তো! জ্বি আমি। আপনাকে দারোগা স্যার ডাকেন।

চলুন... পেছনে চলতে চলতে এসে হাজির হলাম পুরোনো কাগজে বোঝাই চারটা চেয়ার টেবিলের একটা রুমে। ঐ চিকন সুরের এস.আই. বসা চেয়ারে। আমার হাতটা আবার পরাধীন হলো। বল চেক গুলো কোথায়? কিসের চেক? জানোস না কিসের চেক? দুঃখিত আমি জানিনা। তোরা ছিনতাই করসোস ... ভদ্র লোকটার সবগুলো চেক।

ওগুলা কই রাখসোস বল? আমার কাছে প্রশ্নটা অস্বাভাবিক মনে হলো। কারন এমন কোনো ঘটনার প্রত্ত্যক্ষ্যদর্শিও আমি নই। ব্যাপারটা কি? আপনি কি জানতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছিনা। ঐ ***(গালী) বল তাড়াতাড়ি। এই প্রথম আমার শরীরের সব গুলো লোম দাড়িয়ে যায়।

লজ্জায় আমার মাথার মধ্যে ঝিমঝিম করছে। আমার জীবনে আমাকে লক্ষ্য করে শুনা সর্ব প্রথম গালীই ছিলো এটা। অতীতে কেউ কখনো সত্যিই আমাকে গালী দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। কারন আমার পক্ষ থেকে ঘৃন্য এই শব্দ গুলো কেউ কোনোদিন শুনেনি। জানতাম পুলিশরা গালী দেয়।

কিন্তু আমাকে দিবে তা ভাবিনি। আমার ভেতরে একটা জ্বালা অনুভব করছি। কন্ঠে কোথা হতে জোর এসে ভর করলো। আমি কঠিন করে বললাম কেউ একটা কিছু লিখে দিলেই কেইস হয়ে যায়? তার সত্যতার কোনো প্রয়োজন নেই...? হুঙ্কার মেরে হাস্যকর গলায় তিনি বললেনঃ ডলা দিলে ই সব বাইর হইয়া যাইবো। আমি জানতে চাইলাম পেটে না থাকলেও কি ডলা দিয়ে বেড় করা সম্ভব? বেশী কতা কইস না।

ক্যামনে বাইর করতে হয় তা আমার ভালোই জানা আছে। আজকের মতো ছাড়লাম। আরো তো দিন পইরা আছে। যা...। সেপাই আমাকে আবার সেঈ বেঞ্চিতে মামার পাশে বসিয়ে দিলেন।

মামা মনে মনে খোদাকে জপছিলেন। কারন স্বাভাবিক ভাবে ই এরপর মামার সিরিয়াল। ধীরে সুর্য্যটা সরে এলো আমাদের পরিচিত আকাশে। পৃথিবী অন্ধকার থেকে আলোর বলয়ে প্রবেশ করছে। মামা রেহাই পেলেন এস.আই. এর জিজ্ঞাসাবাদ থেকে।

কাছে কোনো এক মাসজিদ থেকে জগতের শ্রেষ্ঠ সেই সুর ভেসে এলো। আমি তন্ময় হয়ে শুনিই শুধু। যতই শুনি ততই অধিক পিপাসা জাগে। বন্ধুটির কাছে জানতে চাইলামঃ আপনাদের এখেনে কি অজুর কোনো ব্যাবস্থা হবে? নির্বিকার ভংগিতে সে বল্লো এখান থেকে ডান দিকে গিয়ে একটু সামনে ঐ কোনায় যে রুমটা ? ওখানে অজুর ব্যবস্থা আছে। আমি গিয়ে অজু করে আসলাম।

কি আশ্চার্য আমার সাথে সেপাইটা গেলোনা। মনে হয় নামাজি আসামি পেয়ে কিছুটা নিশ্চিত যে এটা পালাবেনা। পশ্চিম জেনে নামাজ আদায় করলাম। এরপর বসে বসে আমার স্বজনদের অপেক্ষা আর পুলিশদের হাটা চলা দেখা ছাড়া আর তেমন কোনো কাজ আমার ছিলোনা। একজন জানতে চাইলো আমি দাঁত মাজতে আগ্রহী কিনা।

আমার ব্রাশটা তো আনতে দিলোনা। আরো কতো কিছু আনা প্রয়োজন ছিলো। অন্তত একটা তাফহিম আনা দরকার ছিলো। যাক আমার আগ্রহে তারা দাঁতের মাঁজন দিলো। নীল রঙের সেই মাঁজনে দাঁত মেজে আবার চুপচাপ বসে অপেক্ষা করা...।

ঘন্টাখানেক পর আমার স্বজনেরা আসা শুরু করলো। তারা প্রচেষ্টা কম করেনি। কিন্তু অক্টোপাশের করাল থেকে আমাদেরকে ছুটানো সম্ভব হয়নি। দ্বীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে আবার আমরা পুলিশ ভ্যানে উঠলাম। মামা আর আমি পাশাপাশি।

মামা খুবই লজ্জা পাচ্ছিলেন। আমার কাছে লজ্জা লাগছিলো ভিন্ন কারনে। রাতে না হয় কেঊ দেখেনি তাই নিজেকে ভাষানী, মাহেন্দ্র রাজা পাকশে... যা ইচ্ছা তাই ভেবেছি। কিন্তু দিনে তো লুঙ্গিটা বড়ই শরমের কারন হয়ে দন্ডায়মান। আমার লজ্জাটা চোখে প্রকাশ করিনি ঠিকই কিন্তু ভেতর তো...।

বুকে ‘রব’ লেখা পাঁকা দাড়িওয়ালা একজন পুলিশ আমার দিকে অনেক্ষন ধরেই তাকিয়ে আছেন। আমি তাকাতেই চোখ নামিয়ে নিলেন। একবার ইচ্ছা হয়েছিলো বলি যে আপনার নামটা আগামীবার সংশোধন করে নিবেন দয়া করে। ওটা রব হবেনা, হবে আব্দুর রব। পরে ভাবলাম আসামীদের কাছ থেকে এসব কথা শুনাটা তার জন্য হয়তো লজ্জার কারন হতে পারে।

অনেক আঁকাবাঁকা পথ ঘুরে আমারা এসে কোর্টে পৌছলাম...(চলবে) 2009-07-14
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।