বাংলা ভাষায় প্রকাশযোগ্য শব্দগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অশ্লীল শব্দটি সম্ভবত "সংখ্যালঘু"! সেই ছোটবেলায় একবার সাময়িক পরীক্ষা ছিল দশমীর আগের দিন, আবার দশমীর পরেরদিন আরেকটা পরীক্ষা! আমার এক বন্ধু হিন্দু ছিল যে, অনেক মন খারাপ করে বলেছিলো, "এবার পূজাটা করা হলো না কুমারী পূজার দিনেও পড়াশোনা করেছি, কাল বিজয়ার দিনেও পড়াশোনা করতে হবে, পরশু তো আবার পরীক্ষা!" ছোট ছিলাম বলে তার দুঃখ বুঝিনি!
আমার ধারণা, বিশ্বের সবচেয়ে সহনশীল গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আমাদের সংখ্যালঘুরা অন্যতম। জন্ম থেকেই তারা জানে যে, তারা এমন একটা দেশের বাসিন্দা যেখানে স্বীকৃতভাবে তাদের মর্যাদা "সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন!" ধর্মনিরপেক্ষতার লেবাসে যেখানে একটা রাষ্ট্রধর্ম আছে! আমাদের মুসলমানদের ধর্মানুভূতি বলে একটা ব্যাপার আছে, তাদের নেই! ব্লগে-নেটে যখন মুহাম্মদ (সা) কে নিয়ে বাজে কথা লেখা হয় আমরা তেলেবেগুনে জেগে উঠি! কিন্তু আমাদেরই কোন ওয়াজে যখন হিন্দুদেবী নিয়ে অশ্লীল কথা বলা হয়, কুৎসা রটানো হয়, তখন তাদের ধর্মানুভূতিতে লাগে না। আমরা মূর্তি ভাঙি তারপর বলি, "দেবী দৌড়ায় পালায় গেলো না কেন?" হাহা! তাদের কিছু বলার অধিকার নেই! মার্চ মাসে আমেরিকায় এক হিন্দু বড় ভাই বলছিলেন যে, দেশে তার শ্বাশুড়ি তার কাছে অনুমতি চেয়েছেন, ওর বউ যদি কিছুদিন শাখা সিঁদুর না পরে তাহলে কি সে রাগ করবে? কারণ এলাকার মতিগতি ভালো নয়। এরপরেও ঈদের সময় আমি আমার এই সংখ্যালঘুদেরই দেখি "ঈদ মোবারক" বলতে, আমরা আনন্দিত হই। অথচ দূর্গাপূজায় অথবা ক্রিসমাসে আমি তাদের উইশ করলে; আমার স্ট্যাটাসে কমেন্ট পড়ে "তুমি কি হিন্দু/খ্রিষ্টান? এদের উইশ করো কেন?" আমাদেরই একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এদের নিয়ে ব্যঙ্গ করে কথা বলেন! তখনও তারা কিছু বলে না।
আমরাই তাদের কথায় কথায় "মালাউন" বলে গালি দেই। "মাউল্যার জাত ভালো না"!- খাঁটি বাংলা প্রবাদ! তারা মনে কষ্ট পায়, কিছু বলে না! বৌদ্ধমন্দির পোড়ানো হয়, বুদ্ধের শত বছরের প্রাচীন মূর্তি ভাঙা হয়! আমরা কিচ্ছু করতে পারি না, প্রশাসন নিরব থাকে! তারা কিছু বলে না, কারণ তারা সংখ্যালঘু! গণিমতের মাল মনে করে তাদের মেয়েদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, ধর্ষিত এক মেয়ে সম্পর্কে উল্টো সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদের এক সাংসদ দম্ভভরে বলে, "মেয়েটার মনে হয় ফারটিলিটি বেশি ছিল!" সবাই চুপ থাকে। কারণ তারা সংখ্যালঘু!
আমি একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই গর্ববোধ করি। অবশ্যই! কিন্তু আমার দেশের সব ধর্মের সব মানুষকে শ্রদ্ধা-সম্মান করি। এই দেশে আমি "সংখ্যাগুরু" হয়ে জন্মেছি! আমার সৌভাগ্য।
কিন্তু বাংলাদেশে আমার যা অধিকার, একজন সংখ্যালঘুরও তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে! "সংখ্যাগুরু"দের একজন হয়ে আপনাদের কাছে আমার বিনীত ক্ষমাপ্রার্থনা, আপনাদের অনেক সময়েই শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে, আমার পড়তে হয়নি! একজন বিবেকবান বাংলাদেশি হিসেবে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী! আমি স্বপ্ন দেখি, সেই বাংলাদেশের যেখানে আমাদের কোন "সংখ্যাগুরু"-"সংখ্যালঘু" পরিচয় থাকবে না! আমরা সবাই বাংলাদেশি পরিচয়ে পরিচিত হবো!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।