কোন একদিন.. এদেশের আকাশে... কালেমার পতাকা দুলবে, সেদিন সবাই ... খোদায়ী বিধান পেয়ে দু:খ বেদনা ভুলবে..
তখন মাত্র উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছি। কিছুদিন ক্লাস করতে না করতেই অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তাও আবার জন্ডিস। দুরন্তপনায় বিরাট আঘাত। কিন্তু সেই আঘাতের প্রথম ধাক্কাকে সামাল দিয়েই অসুস্থ অবস্থাতেই একদিন দুপুরবেলা বেরিয়ে গেলাম তেজগাঁওয়ের দিকে।
উদ্দেশ্য ভাসানী নভোথিয়েটার। সেদিন সবেমাত্র তা উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রথম শো-ই আমার দেখা চাই। সবচে কাছের দুবন্ধুকে সাথে নিয়ে বেরুলাম। গুলশান-১ মোড় পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে সেখান হতে ৬ নম্বর বাসে চড়লাম।
বাসে অনেক ভীড়, তবু বন্ধুদের সহযোগীতায় কষ্ট করে উঠলাম, উঠে রড ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। শুরু থেকেই রাস্তায় যানজট সাথে আবার বাসের ভেতরে মনুষ্যজট। অসুস্থ শরীরের ফুসফুস কিছুতেই প্রয়োজনীয় বাতাস পেলনা আর দেহে গ্লুকোজের আবর্তনও ঠিকমত হলোনা। অতএব কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি আমার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলাম। জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমি অপুর (দুবন্ধুর একজন) কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে আছি।
ততক্ষনে গাড়ি অনেকক্ষানি রাস্তা পেরিয়েছে। একটা স্টপেজে এক যাত্রী নামার সময় তাঁর সিটটাতে আমাকে বসতে দিলেন। তারপর বাকিটা রাস্তা জানালার পাশের ঐ সিটে বসে পার হলাম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটু সামনে এসে বাস থেকে নেমে গেলাম আমরা, কিন্তু এর সাথে সাথেই এমন বৃষ্টি শুরু হল যে, কিছুতেই আর না ভিজে থাকা গেল না। তাও আবার ক্ষনিকের মাঝেই কাকভেজা।
তবে বৃষ্টিতে ভেজায় শরীরটা কেমন যেন ফ্রেস লাগতে শুরু করল। দুর্বলতাও কোথায় যেন হারিয়ে গেল। ভিজতে ভিজতেই নভোথিয়েটারের দোর পর্যন্ত এলাম এবং টিকেট কেটে ঠিক সময়েই প্রবেশ করলাম। শো শুরুর আগে ভেতরটা একটু চক্কর দিলাম। কয়েকটা মডেল সৌরজগত ও মহাবিশ্ব দেখলাম দেখে এত ভাল লাগল যে আমি পুরোই অভিভূত হয়ে গেছি।
তবে এরই মাঝে আরেকটা জিনিস খুবই কষ্ট দিচ্ছিল। তা হলো ভেতরকার সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডশনিং সিস্টেম। ঠান্ডার মাত্রা ছিল লাগামছাড়া আর তারওপর ভেজা শরীরে যেন সুই হয়ে বিদ্ধ হচ্ছিল। তারপর যখন ৩৬০ ডিগ্রি গোলাকার হলে ঢুকলাম সেখানে যেন ঠান্ডার মাত্রটা আরেকটু বেশিই ছিল। হাতটা কোনমতে ব্যাগের ভেতর ভরে ঠান্ডার হাত হতে রক্ষা পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টার সমান্তরালে পুরো শোটা অবাক হয়ে আগ্রহ ভরে দেখতে লাগলাম।
এই জিনিস প্রথমে দেখেছিলাম ডিসকভারির একটা প্রামান্য চিত্রে। সেখানে দেখেছিলাম যে, চীনের বিভিন্ন মেলার একটা বিশেষ আকর্ষন হিসেবে এধরনের প্লানেটেরিয়ামের অস্থায়ী শোএর ব্যবস্থা করে থাকত। নিজের দেশেই আরো পুর্নাঙ্গ আকারে ও দারুন এক স্থাপনার অভ্যন্তরে এই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা দেখে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছিল।
কিন্তু দু:খের ব্যপার এই, সেই ভাসানী নভোথিয়েটার আর এখন নেই। সেদিন দেখলাম বাংলাদেশের সর্বপ্রথম স্বাধীনতার ঘোসনাকারী এক অবিস্মরনীয় নেতা মাওলানা ভাসানীর নামকে সরিয়ে এখন সেখানে অন্য আরেকজনের নাম ঝুলছে।
দেখে আমার সেই গর্ববোধ হারিয়ে গেল। সেই স্থানে জায়গা করে নিল একটা চরম ঘৃনা। ঘৃনাবোধ সেই নামের মালিকের প্রতি নয়, বরং তার নাম ভেঙে যারা রাজনীতির ব্যবসা করছে তাদের প্রতি। তারাই আজ দেশের জন্য শহীদ হওয়া বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্টের মুরাল ভেঙেছে। তাদেরকে এই নীচু মানসিকতার দীর্ঘ পথ পরিক্রমার ইতি টানার জন্য অনুরোধ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।