সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশী দক্ষ জনশক্তির চাহিদা
আমাদের সোনালী আঁশ পাট একদিন এদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। শিল্পের উৎকর্ষতা, বিদেশী ষড়যন্ত্র ইত্যাদি পাটকে ধরাশায়ী করে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান প্রবাহকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। হাজার বছরের কৃষি কাজ যখন আমাদের খাবার সংস্থান করতে হিমশিক খাচ্ছে তখন আমাদের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারী উদ্যোক্তারা আবার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি অত্যন্ত সুন্দর প্রবাহ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছেন।
এদেশে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রথম পদক্ষেপ ট্রেড লাইলেন্স থেকে শুরু করে যতসব ফার্মালিটিজের বাধা ডিঙ্গিয়ে উন্নত দেশের রুচিশীল স্পেসিফিকিশন ১০০% মেনে নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহকদের হাতে সীপমেন্ট পৌঁছে দিয়ে ডলার আয় করা সহজ ব্যাপার নয়।
আমি জাপানী এবং চীনাদেরকে দেখেছি তাদের সুশিক্ষিত ও সৃশৃংখল কর্মীবাহিনী দিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তারা কি ধরনের কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্যে কাজ করে।
সে ক্ষেত্রে অশিক্ষিত/অর্ধ শিক্ষিত নিগ্রহীত গ্রামের মহিলাদের মত কর্মীবাহিনী, ব্যাংকগুলোর বৈরীআচরণ, সরকারি কর্মকর্তাকে বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে আমাদের গার্মেন্টস উদ্যোক্তরা চলমান এক অসাধারণ যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছিলেন। এ বিষয়টিও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও অন্যান্য বৈরী পরিস্থিতির কারণে বার বার হুমকির ও শংকার সৃষ্টি করছে। বিদেশী মুদ্রা অর্জনের এই ক্ষেত্রটিও সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে বলে সচেতন সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। ১৫ কোটি লোকের খাদ্য উৎপাদনে গ্রামের চাষীদের ভূমিকা আমরা কখনো প্রশংসা করতে গরজ বোধ করি নাই। ১৯৭১-৭৪ সনে মাত্র ৪ কোটি লোকের খাদ্য যোগাড় করার সাধ্য আমাদের ছিল না অথচ আজ ১৫ কোটি লোকের খাদ্য বাড়িঘর শহর নির্মাণে বেদখল হয়ে যাওয়া সীমিত কৃষি জমিতে উৎপাদন করে এ দেশের কৃষক আমাদেরকে খাদ্যে ওনেকটাই স্বয়ং সম্পূর্ণ রেখেছে।
চাষী ও কৃষিবিদদের মেধা আর শ্রমকে যদিও প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাহত করছে কিন্তু আমাদের কৃষিবিদ আর বিশেষ করে কৃষক সমাজ কিন্তু থেমে নেই।
একটি দেশের জাতীয় সম্পদ অর্জন ও আহরণ জাতীর সার্বিক অবস্থার অবস্থান নির্ণয় করে। পাট ও গার্মেন্টস এর দুর্বল দিকগুলো আমরা জানি। কিন্তু আমাদের জনসম্পদকে সবসময়ই আমরা অবহেলা করে এসেছি। বিশ্বের যে কোন দেশের চাইতে এ সম্পদে আমরা সমৃদ্ধ কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতি কোন দিনই এই সম্পদটির দিকে মনোযোগ দেয় নাই।
জাপানীরা পরিশ্রমী জাতি হিসাবে বিশ্বখ্যাত। তাদেরকে বলা হয় "ওয়ার্কোহোলিস্ট" যেমন মদ্যপের অপর নাম "এলকোহেলিস্ট"। সেই জাপানীরা এখন ননকনভেশনাল (অপ্রচলিত) কাজ করতে অনিচ্ছুক। তারা এখন কাজের ধরণ খোঁজে।
কোরিয়ানদের অবস্থাও তাই।
ইউরোপীয়ান গরীব যারা (পূর্ব ইউরোপীয়) তারাও ফ্যাক্টরীতে প্রডাকশন লাইনের কনভেয়ার বেল্টের পাশে দাঁড়িয়ে কনভেশনাল কাজই পছন্দ করে। বাকী কাজে অনীহা। উন্নত দেশগুলোতে জন্ম হার এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে নিজ সংসারের সাধারণ কাজকর্মও অশিতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সামলাতে হচ্ছে।
আল্লাহর আশির্বাদপুষ্ট এই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কতিপয় বিভীষণের অর্থলুপতার শিকারে আজ দরিদ্র। জানাযায় যে, গত জোট সরকারের সময় কাতারের সুলতান ব্যক্তিগত উৎসাহ দেখিয়েছিলেন এদেশ থেকে শ্রমিক সংগ্রহের বিষয়ে।
বিনিময়ে কাতার এয়ারওয়েজের জন্য সপ্তাহের নির্দিষ্ট ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলেন। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমাদের সরকার একজন উপসচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল প্রেরণ করলে এতে সে দেশের সরকার বিব্রত ও অসম্মানবোধ করেন। সে সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে আজ কাতারে যে উন্নয়নের মহোৎসব চলছে সেখানে প্রায় ৫ লক্ষাধিক বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান হোত।
জনসম্পদ রপ্তানীর দেশ থাইল্যান্ড নিজ দেশেই উন্নয়নে তাদের শ্রমিকদের উচ্চ বেতন দিচ্ছে তারা আর বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে পারছে না।
বর্ত্মানে ফিলিপিনের অবস্থাও তাই।
ভারতে অর্থনৈতিক ও শিল্পক্ষেত্রে যে মহাবিপ্লব শুরু হয়েছে তাদের জনবল বিদেশে আর খুব যাচ্ছে না। আর পাকিস্তানীদেরকে তাদের স্বভাবের জন্য কেউ গ্রহণ করতেই চাইছে না। লোক চাই জাপানের, কোরিয়ার, মালয়েশিয়ার, অস্ট্রেলিয়ার, কানাডার, ইউরোপের, সৌদি আরবের, মধ্যপ্রাচ্যের, লিবিয়ার এবং আরো অনেক দেশের।
ক্লিনার, সুইপার, হেলপার, সাধারণ শ্রমিকি এদের কাজে বেতন কম, ট্যাক্স ও অন্যান্য খরচ (জনবল রপ্তানি কোম্পানীর খরচ ও অন্যান্য) বেশী অথচ মাত্র তিন মাসের প্রশিক্ষণে একজন সাধারণ ওয়েল্ডার প্রাথমিক বেতন পায় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা যা একজন ক্লিনারের বেতনের প্রায় তিন গুন।
আদম ব্যবসায়ীরা ওয়েল্ডার বা দক্ষ শ্রমিকের কাছ থেকে টাকাও দাবি করে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। কারন, এই ক্ষত্রে দক্ষ লোকের অভাব। অথচ, এই ওয়েল্ডার প্রশিক্ষণে তিন মাসে খরচ সর্বোচ্চ বিশ হাজার টাকা।
আরো তিন মাসে উন্নততর ওয়েল্ডিং প্রশিক্ষণে বেতন হয় মাসে প্রায় ৬০,০০০ টাকা। তেমনি ফিটার, আয়রন ওয়ার্কার, রাজমিস্ত্রি, রডমিস্ত্রি, কার্পেন্টার, পেইন্টার, টাইলস, মিস্ত্রি, হোম অ্যাপ্লিয়ান্স টেকনিশিয়ান, ইলেকট্রিশিয়ান, ইন্সট্রোমেন্ট ফিটার, হাই অলটিচুড ওয়ার্কার, ড্রাইভার, নার্স, মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান, বাবুর্চি, দর্জি, ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার, মেশিনসপ টেকনিশিয়ান, ইত্যাদি ছোট ছোট ট্রেনিং স্কুলগুলোতেই করা যায়।
কম্পিউটার ও আইটি বিষয়ের মত একাডেমিক উৎকর্ষতাও বিনিয়োগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহ বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়েন্ট-ভেঞ্চারে গিয়ে সম্ভাবনাময় এই ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষিত লোকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে টেকনিশিয়ান প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয়বহুল বিনিয়োগের দরকার হয় না অথচ ফলাফল খুব দ্রুত ও লাভজনক।
প্রতিদিন বিদেশ থেকে এ দেশে ডেলিগেট আসছে যারা একদিন টেকনিশিয়ানের জন্য থাইল্যান্ড, ভারত, ফিলিপিনে যেতো। এখন তারা এখানে প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে আবার ২/৩ মাস পর আসছে। ফলে ট্রেনিং স্কুলগুলো দিনরাত কাজ করে ট্রেনিং দিচ্ছে।
কিন্তু কৃতকার্য টেকনিশিয়ানগণ ফ্লাইটের অভাবে হয়রানি হতে হতে তাদের ভিসার মেয়াদ হারিয়ে ফেলছে। ফ্লাইটের অভাবে আগে ইন্ডিয়া গিয়ে তারপর গন্তব্যস্থানে বিমানে আরোহন করতো এখন আন্তর্জাতিকভাবে সর্বত্রই বিমান সীটের অভাব।
আমাদের সরকারের শ্রমমন্ত্রণালয়, বিমান ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে এ বিষয়ে একটি যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও রপ্তানির মাধ্যমে আমাদের দৈন্যদশা দূর করে বিশ্বে আমরা একটা সম্মানজনক পরিশ্রমী ও সচ্ছল জাতি হিসেবে স্থান করে নিতে পারি।
আমাদের ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ার বিশেষজ্ঞগণ জনসম্পদ উন্নয়নে যদি তাদের মনোযোগ যদি বৃদ্ধি করেন, তবে এ বিষয়ের সমস্যাগুলো দুর হতে সময় লাগবে না। মিডিয়া ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের পারঙ্গমতা প্রমাণ করেছেন।
তাদের প্রতি আমার আবেদন তারা এই বিষয়টির গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলতে যথাশীঘ্র সম্ভব তাদের ভূমিকা আরো জোরালো করতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।