১ম পর্ব - Click This Link
২য় পর্ব- Click This Link
---------------------------------------------------------------------------
সিলেটে ১৯৯৩ - ১৯৯৪ সালে একটা চমৎকার সাহিত্য আড্ডার পরিবেশ
গড়ে উঠে। এ সময়ে মনির উদ্দীন চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক অনুপম কার্যালয় হয়ে উঠে আমাদের আড্ডাস্থল। এর নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন, কবি সারওয়ার চৌধুরী । এই আড্ডায় যারা প্রায় নিয়মিত হাজির থাকতেন তারা হচ্ছেন - শাহ শামীম আহমেদ , শাহ তোফায়েল, শামীম শাহান, আহমদ মিনহাজ, জফির সেতু, মাহবুব লীলেন , বাইস কাদির, টি এম আহমেদ কায়সার, মোস্তাক আহমাদ দীন, ফয়জুর রহমান ফয়েজ, কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার, পারভেজ রশীদ মংগল, কাদির মুরাদ, জগলু চৌধুরী , ফজলুররহমান বাবুল সহ আরো অনেকেই ।
মাঝে মাঝে আসতেন , সৌমিত্র দেব, শুভাসিস সিনহা , আহমাদ রাশীদ(পরে আহমেদুর রশীদ নাম ধারণ করেন) প্রমুখ ।
মাশুক ইবনে আনিস থাকতেন জল্লার পার রোডের একটি আবাসিক হোটেলে। সেখানেও হয়ে যেতো মাঝে মাঝে আড্ডা । আশির দশকের শেষ দিকে সিলেটের ছড়া সাহিত্যকে যারা এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা
রেখেছিলেন , মাশুক ইবনে আনিস এদের একজন। প্রয়াত শারিক শামসুল
কিবরিয়া , মাহবুব লীলেন , রেজওয়ান মারুফ, সহ
সাপ্তাহিক ফেন্চুগন্জ সমাচার কে ঘিরে যে সব ছড়াকার নিয়মিত আড্ডা দিতেন - তারা পরবর্তী সময়ে কবিতা , গল্প লিখতেও শুরু করেন।
..............................
একজন লেখকের লেখালেখির বিন্যাস এভাবেই ঘটে।
আমরা জানি , এ
সময়ের আলোচিত কবি আবু হাসান শাহরিয়ার তার লেখালেখি শুরু
করেছিলেন ছড়া দিয়েই । এখন তিনি গদ্য, পদ্য, প্রবন্ধ- নিবন্ধ সবই
লিখছেন। ছড়া লিখেছেন শামসুর রাহমান- আল মাহমুদ- রা ও।
তাই কেউ ছড়া লিখলেই তার গায়ে ছড়াকার লেবাস লেগে গেলো , এমন
কোনো সীমাবদ্ধতার ব্যাকরণ কোথাও লিখিত নেই।
সিলেটের সাহিত্য আড্ডায় যারা আড্ডা দিতেন , তারাই যে সবাই পুরোধা
ছিলেন , তা আমি বলছি না।
তবে তারা সিলেটের সাহিত্য অংগন কে
শাণিত করেছিলেন সে সময় , তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
কেউ কেউ হয়তো মফস্বলে থেকে নিজেকে ইনট্যালেকচুয়েল পোয়েট
ভাবার দাবী সে সময় ও করছিলেন। কিন্তু তাদেরকে সামনের সারিতে এসে
সাহিত্যের ভাব আদানে কখনও দেখিনি।
.....................................
অবশ্য সবাই সামনে আসতে পারে , কিংবা সামনে আসতে হবে - তেমন কোনো কথাও নেই । তবে দায়িত্ব নিয়ে লেখালেখির একটা বোধ তো থাকা উচিৎ ।
আর যাদের সেই বোধ নেই কিংবা যারা ছদ্মনামে দূরে থেকে
নিজেকে পরখ করার অপচেষ্টা করেন , সাহিত্যে তারা সৎ কি না তা নিয়ে
প্রশ্ন থেকেই যায়।
১৯৯৩-৯৪ সালে আমি কয়েকবার লন্ডনে যাওয়া আসা করি। এই সুযোগে
লন্ডনের বাংলা পত্রিকার সাথে আমি সিলেটের কবিদের একটা সেতুবন্ধন
তৈরির প্রয়াসী হই । সেই বিবেচনায় , আমি শাহ শামীম আহমেদ, শাহ তোফায়েল, শামীম শাহান,মাহবুব লীলেন, জফির সেতু প্রমুখের বেশ কিছু
কবিতা নিয়ে এসে লন্ডনের সাপ্তাহিক সুরমা, জনমত, নতুন দিন, পুর্বদেশ
ইত্যাদি কাগজে ছাপার ব্যবস্থা করি।
সে সময়েই লন্ডন প্রবাসী না হয়েও ( অবশ্য এখন তিনি ইংল্যান্ড অভিবাসী ) বিলেতে কবি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন ,
কবি শাহ শামীম আহমেদ।
এমনও দেখা গেছে একই সাথে কয়েকটি সাপ্তাহিকে তার কবিতা ছাপা
হয়েছে লন্ডনে। ফলে তিনি আসলে লন্ডনী কি না সে প্রশ্ন করেছেন আমাকে অনেকেই ।
হাজার মাইল দূরে থেকেও কবির প্রাপ্য সম্মান ও ভালোবাসা যে পাঠকের কাছ থেকে পাওয়া যায় ৯৩-৯৪ সালে সে প্রমান করেছেন , কবি শাহ
শামীম আহমেদ ।
...................................
১৯৯২ -১৯৯৪ সালে সিলেটে লিটল ম্যাগ প্রকাশের একটা প্রচেষ্টা ছিল
প্রশংসনীয়। আহমেদুর রশীদ সম্পাদিত '' শুদ্ধস্বর '' , শামীম শাহান
সম্পাদিত '' গ্রন্থি '' , মোস্তাক আহমাদ দীন সম্পাদিত '' বিকাশ'' ,
ফজলুররহমান বাবুল সম্পাদিত '' ঋতি '' , শুভেন্দু ইমাম সম্পাদিত ''
'' শিকড় '' ও ''পাঠকৃতি'' , শাহ শামীম আহমেদ সম্পাদিত
'' হৃদি '' , মাশুক ইবনে আনিস সম্পাদিত '' কাকতাড়ুয়া '' ইত্যাদি অন্যতম।
নাম মনে এলে পরে আরো যোগ করবার আশা ব্যক্ত করছি ।
এই সময়ে একজন তরুণ কবি তুষার সাখাওয়াত এর জন্ডিস আক্রান্ত হয়ে
অকাল মৃত্যু সিলেটের সাহিত্য অংগন কে খুবই শোকাহত করে।
তার আত্মার শান্তি কামনা করে তারই একটি কবিতা
তুলে দিচ্ছি এখানে ।
চাবুক
তুষার সাখাওয়াত
----------------------
কথার চাবুক কত যে তীক্ষ্ণ
স্নায়ু বিদ্ধ করে
রক্তাক্ত করে বুক ।
রক্তের রুদিত ধারায়
প্রেমাংশু চুষে রক্ত
- চুষে চাবুক।
ব্যথাতুর হৃদয় ক্ষত চায়,
আরো দেবে ?
লক্ষ যোজন পূর্ণ হবে
তুষিত হবে চাওয়া
গুলি লাগা পাখি
ডানা ভাঙা কষ্টে
খোঁজে ফেরারী হাওয়া ।
এই নবীন কবির সাথে আমার ও আড্ডা হয়েছে কয়েকবার। তার ধীশক্তি
আমাকে আকৃষ্ট করেছে বার বার ।
( চলবে ...........)
ছবি - ঋতি - ফজলুররহমান বাবুল সম্পাদিত । ৫ম সংখ্যা ।
বৈশাখ-১৪০৭
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।