আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। তার দেশের কথাই লিখি তোমাদের জণ্য। সময়টা বিকাল ৫.১৫ একা একা হাটছি। হটাৎ চোখে পড়লো রাস্তার পাশের একটা গাছে ঝোলানো ছোট্ট একটা সাইনবোড -" হাতের রেখায় ক্লিয়ার ভাগ্য দেখুন মাত্র ৫ টাকায় "
জ্যোতিস সম্রাট বাবা আকবর আলী
এই মূল্য সংকটের বাজারে যেখানে এক ব্যনসন সিগারেটের দাম ৭ টাকা,সেখানে ৫ টাকায় নিজের ভবিষ্যতটাকে কৃষ্টাল ক্লিয়ার ভাবে দেখার এমন মারাত্তক সুযোগটা আর হাতছাড়া করতে ইচ্ছা করলোনা ! পকেটে ৪৪ টাকা আছে,এগিয়ে গেলাম।
জ্যোতিস বাবাজী সামনেই পাটি পেতে রেডী।
হালকা পাতলা গরণ আর কালো দাড়ি এই দুটো খেয়াল করছি। পান চিবুতে চিবুতে মন দিয়ে তিনি হাতের রেখা সংক্রান্ত বই থেকে জ্ঞান আহরণে ব্যস্ত। মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসলেন। সামনের একটা ফোকলা দাঁতের ফাক দিয়ে লাল লাল মুক্তা ঝরছে।
'সালামুলাইকুম বাবাজী ,আসেন।
বসেন।
আমি মৃদু হেসে পাশে বসলাম। আমি একটা জিনিষ খেয়াল করলাম বাবাজীর সামনে সাজানো সব কয়টা জ্যোতিস সংক্রান্ত বইয়ের মলাটের উপরে মেয়েদের বাম হাতের ছবি। ছেলেদের হাতের রেখা বিষয়ে বাবাজীর জ্ঞান নিয়ে কিঞ্চিত বিভ্রান্ত বোধ করছি এখন।
'দেখি বাবা হাতটা' বলে হাসলেন।
আবারো লাল গলিত মক্তা ঝরে পড়লো।
আমি আমার বাম হাতটা সামনে মেললাম।
তিনি হেসে বললেন- বাবা ডান হাত দেখান। ম্যাইয়া মানুষগো বামহাত আর পোলগো ডান হাত তাগো ভবিষ্যত কয়।
'ও আচ্ছা আচ্ছা।
আমি তটস্থ হয়ে ডান হাত এগিয়ে দিলাম। তিনি সস্তা একটি ম্যগনেফাইট গ্লাস নিয়ে আমার অনগত ভবিষ্যতটাকে কৃষ্টাল ক্লিয়ার পযবেক্ষন করতে লাগলেন। আমিও নিজের হাতের তালুর রেখায় ভাগ্য সংক্রান্ত কিছু দেখা যায় কিনা...খুঁজতে লাগলাম। একটা ছোট্ট কাটা দাগ আর কিছু ময়লা বাদে আর কিছুই চোখে বাদলোনা। কিন্তু বাবাজী ঠিকই অনেক কিছ্ই দেখে ফেললেন।
পুরো ১ মিনিট পর বললেন 'রাজ কপাল ... রাজ কপাল' বলে তিনি আমার হাতে চুম্বন করলেন !
আমি অতি উতসুক হয়ে বললাম- কি দেখলেন বাবা ?
বাবা বললেন- অগাধ ধণ-সম্পদ অগাধ ! দ্যাশের সব ব্যাংকও আপনের এতো টাকা রাখতে পারবোনা ! বিদেশ গমন দুই শত ভাগ নিশ্চিত ! সোজা আমেরিকা !! আপনের সমনে কোন শত্রু সামনে খাড়াইতে পারবোনা !
আমি আনন্দে আটখানা।
বাবা বললেন- 'দ্যাশের সবচাইয়া বড় নাইকা ঐশ্যরিয়ার লগে আপনের বিয়া হইবো !
আমি হচকিত হয়ে বললাম- বাবা ঐশ্যরিয়ার তো ইন্ডিয়ার আর ওর স্বামীর নাম অভিশেক। মেয়েও হয়ে গেল কয়দিন আগে।
বাবা হেসে বললেন- ওইই হলো... ওর লাহান এক রাজকুমারীর লগে আপনের শাদী মোবারক হইবো...ইনশাল্লাহ।
আনন্দে এখন আমি কি করবো মাথায় আসছে না।
ঈদের থেকে বেশি আনন্দ অনুভব করছি।
বাবা একটা মাদুলী আমার বেধে দিলেন এবং মূল্য ধায করলেন একশত এক টাকা। মোট বিল ১০১+৫=১০৬ টাকা।
আমি ৬২ টাকা পরে নিজ দ্বায়িত্বে পৌঁছে দেবার অঙ্গিকার করে বাসায় ফিরলাম।
অতপর পরদিন সকালেঃ
১) বাবার কাছ থেকে আগেই নেওয়া পরীক্ষার ফিস জমা না দেওয়ার অপরাধে আমার দৈনিক পকেটভাতা প্রদান বন্ধ।
২) মোবাইলে টাকা না থাকায় আগের দিনে অভিমানকরা গালফ্রেন্ডের রাগও ভাঙ্গাতে পারলাম না।
৩) একটা গোলাপ ছিঁড়ে নিয়ে সরাসরি গালফ্রেন্ডের বাসার জানালার সামনে দাড়িয়ে গেলাম। হট্যাৎ ওর বড় তিন ভাই উদয় হলো! এবং বেজায় খাতির করলো। (হাত+লাঠি দিয়ে)
৪) গালফ্রেন্ড সাফ জানিয়ে দিলো, আজকের পর আমকে আর সে চেনে না।
৫) বাসায় এসব জানাজানি হওয়ায় বিকালে আমাকে গ্রামের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হলো।
শেষ অবধিঃ
...এখানে বিদ্যুৎ এখনো পৌছায়নি। মোবাইলের চাজ ও প্রায় শেষ। তাই হারিকেনের আলোতে মোবাইলটাকে চাজ দিতে দিতে নিজের হাতের রেখায় লেখা কিছু অতিত আর বতমান শেয়ার করলাম। আর ভবিষ্যৎ টার কথা কাল কোন একদিন হয়তো বলবো, যদি তা সত্য হয় কখনো !!!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।