...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা,
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
কারো ঘরে গন্ডগোল লাগাতে চাইলে সবার আগে যেটা করতে হয়, সেটা হলো সেই ঘরে একজন বিশ্বাসঘাতককে খুঁজে বের করতে হয়। এধরনের মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়। পৃথিবীতে মেরুদন্ড হীন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সমস্যা হলো এ জাতীয় মানুষদেরই দেখি কেবল আশেপাশে। বাংলা মুলুকে জন্মানো এমন দুই জন অমেরুদন্ডী প্রাণীকে আমরা খুব ভালো ভাবে চিনি।
একজন হলো মীরজাফর আর একজন হলো গোলাম আজম। এ জাতীয় বিশ্বাসঘাতকদের পরিনামও সবক্ষেত্রেই একই রকম হয়। যেভাবে মীরজাফরকে তার অতি পেয়ারের বন্ধু ইংরেজরা লাথি মেরে গদি থেকে নামিয়েছিলো। ঠিকই একই পরিণতি দেখি আমাদের গোলাম আজমের। পাকিস্তানের শাসকরা এদেশ থেকে পালিয়েছে, কিন্তু আমাদের গোলাম আজমদের ঠিকই ফেলে রেখে গেছে।
আর তারপর আমরা তাদের সম্মান দিয়েছি। সংসদে বসিয়েছি, পতাকা লাগানো গাড়িতে চড়িয়েছি। আর এজন্যই স্বাধীনতার আটত্রিশ বছর পড়ও আমরা জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করি তাদের বিচারের জন্য, গণস্বাক্ষর নেই, একযোগে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনি। ফলাফল সেই একই। অনেক তোড় জোড়ের পরও আমরা দেখি আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি।
আমরা নাকি হুজুগে জাতি। কথাটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় না। কিন্তু এখন দেখি কথাটা অনেক সত্য। বিডিআর বিদ্রোহের মতো একটা এতো বড় ব্যাপার রীতিমতো হজম করে বসে আছি। অনেক রকম তদন্তের কথা শোনা গেছে।
কিন্তু কিছুই আমরা জানি না। এভাবে হয়তো আরো চারটা বছর চলে যাবে আর আমরা ত্যাক্তবিরক্ত হয়ে হয়তো বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবো। তখন হঠাৎ করে আবার তদন্ত শুরু হবে আর বের হবে যে পুরো ব্যাপারটা ছিলো আওয়ামী লীগের চাল। কিছু সংখ্যক আওয়ামী লীক নেতা গ্রপ্তার হবে। সেটাকে ঘিরে আবার আন্দোলন হবে।
তারপর আবার আওয়ামী লীগ আসবে, তারা আবার তদন্ত করে বের করবে সে এটা ছিলো বিএনপি এর ষড়যন্ত্র। পুরো বিষয়টাই হবে একটা রাজনৈতিক ইস্যু। আন্দোলনের জন্য যেটাকে সহজেই ব্যাবহার করবে দুই পক্ষই। এটা আর অবাক হবার মতো ব্যাপার কী? বঙ্গবন্ধুকেই তো আমরা ব্যাবহার করি ভোট পাওয়ার জন্য। সেদিন দেখলাম বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে জিয়াউর রহমানের ভাষ্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
আমরা এতোটাই দুর্ভাগা যে এদেশে মহান নেতাদের ছবিকে একবার চুমু খাই আবার পরক্ষনেই জুতো দিয়ে মাড়াই। এটা বঙ্গবন্ধু বা জিয়া দু’জনের জন্যই প্রযোজ্য। ব্যাপারটা আমাদের কাছে খুব সহজ মনে হয়। অথচ দেশের বাইরে এই ব্যাপারটার জন্য আমরা কতটা ছোট হই তা কি আমরা জানি। একটা জাতি, যার স্বাধীনতার ঘোষনা কে দিয়েছে তা নিয়ে দড়ি টানাটানি করে সে জাতি সম্পর্কে পুরো পৃথিবী কি ভাবতে পারে সেটা কি আমাদের মহান দুই নেত্রী ভেবে দেখেছেন কখনো।
এখন আমরা মেতে আছি টিঁপাইমুখ নিয়ে। টিপাইমুখ বাঁধ দেশের জন্য খারাপ না ভালো তার চেয়ে বড় ব্যাপার এটা একটা রাজনৈতিক ইস্যু। এটাকে ব্যাবহার করে এক পক্ষ অপর পক্ষকে কাবু করতে পারবে। এরমাঝে ভারত কিন্তু তাদের যা দরকার তা ঠিকই আদায় করে নিবে। এজন্য তাদের দরকার হবে এক বা একাধিক মীর জাফর।
সেটা সরকারের মধ্যে হতে পারে, বাইরেও হতে পারে। আর কেন জানি মীর জাফর আর গোলাম আজমের মতো লোক গুলো বাংলাদেশেই জন্মায়। সরকারের মধ্যে যাদের কে দেখা যাবে বিশেষ বিজ্ঞ, কথায় কথায় জননেত্রী জননেত্রী করে হাঁক দেয়, ম্যাডামের নাম শুনলে বিশবার সেজদা দেয়, তাদের মধ্যে থেকে এক আধজন মীরজাফর বা গোলাম আজম খুজে নিতে কষ্ট হবার কথা না তাদের। এই জাতীয় চাটুকারদের কারনেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম নেতাদের একজন হয়েও বঙ্গবন্ধুকে জনপ্রিয়তা হারাতে হয়েছিলো এদেশে। আর এদেরে জন্যই আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ি।
দিনবদলের কথা বলে যে সরকার এসেছিলো তারা কতোটুকু দিন বদলাতে পেরেছে জানি না। তবে দিন রাতের সময় ঠিকই একঘন্টা বদলে দিয়েছে। আমি এখন দেশে নেই। কিন্তু দেশ থেকে প্রতিদিনই খবর পাই লোড শেডিং কমেনি বরং বেড়েছে। আমরা রুপপুর পারমানবিক প্রকল্পের কথা শুনে আসছি সেই পাকিস্তান আমল থেকে যেটা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
হয়তো এই সরকারও এটাকে সফল করতে পারবে না। আরো পাঁচ বছর পর আবার এই প্রকল্প নিয়ে জাগরন শুরু হবে। তখন হয়তো রাশিয়ার বদলে চীন এগিয়ে আসবে সাহায্য করতে। আবার চুক্তি হবে। আবারো বাতিল হবে।
বিদ্যুৎ ঘটতি বাড়বে। কাজের কাজ কিছুই হবে না। কারন মিন্টু রোড এলাকায় কখনো লোড সেডিং হয় না। দেশের বাইরে এসে দেখলাম সবাই একই কথা বলে, আগামী দশ পনেরো বছর পর সুপার পাওয়ার হবে ভারত আর চীন। আর আমরা, হয়তো পেছাতেই থাকবো।
ভারতীয়দের সাথে প্রচুর কাজ করতে হয়। তাদের একটা জিনিস আমার খুব ভালো লাগে। তারা সবার আগে নিজেদের পণ্যটাকে গুরুত্ব দেয়। চাইনিজ জিনিস দামে কম হলেও তারা ইন্ডিয়ান পন্যটা কিনে। একজন ইন্ডিয়ান আর একজন ইন্ডিয়ানকে টেনে তুলে।
যে কারনে ওরা এগিয়েই যাবে, আর আমরা হয়তো কেবলই পিছিয়ে পড়বো। কেবল চীন আর ভারত নয় এই যাত্রায় এখন আছে ব্রাজিলও।
লেখাটা শেষ করি একটা মজার ঘটনা দিয়ে। এখানে আমার অফিসে আমি আর আমার বন্ধু রনি ছাড়া আর কোন বাংলাদেশী নেই আমাদের সাথে। তাই আমরা দু’জন সমানে বাংলা বলি।
কেউ বুঝে না। অফিসের কে খারাপ, কে ভালো, কোন বসের উচিৎ শিক্ষা হওয়া দরকার, কোন বসকে দেখতে বান্দরের মতো লাগে এসব জোড়ে জোড়ে বলি। সেদিন ও দুজন মিলে গল্প করছি, হঠাৎ পাশ থেকে এক নাইজেরিয়ান স্পষ্ট বাংলায় বলে বসলো, ‘বাংলা তেকে এসেছো? বালো আছো?’। আমরা দুজন তো থ। যতটানা অবাক তার চেয়ে বেশী আতঙ্কিত।
সেই নাইজেরিয়ানটা আসলে বাংলা জানে। তার কোন এক বন্ধুর কাছ থেকে শিখেছে। তবে ভাগ্য ভালো সেদিন তার সামনে আমরা কারো সম্পর্কে খারাপ কিছু বলিনি। তবে এই নাইজেরিয়ানটার সাথে মাঝে মাঝেই বাংলায় কথা হয়। খুব ভালো লাগে তার মুখে বাংলা শুনতে।
সেদিন বলছিলো,”তোমাদের এখন হাসিনা আছে, আগে খালেদা ছিলো। তার আগে আবার হাসিনা। খালেদা আবার হাসিনা আবার খালেদা। খালি হাসিনা আর খালেদা। কোন আলাদা নাই।
এটা ভালো না। “ সুদূর নাইজেরিয়াতে বসে সে বুঝছে যে আসলেই এই চক্রটা ভালো না। কিন্তু এ থেকে বের হবার আমাদের উপায় নেই। আর এজন্যই কি আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।