সিরিয়ায় সেনা অভিযান নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আর তাঁর এই পদক্ষেপে রীতিমতো ব্যঙ্গ করতে শুরু করেছে সিরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম। তারা বলছে এটা ‘আমেরিকার ঐতিহাসিক পশ্চাদপসরণ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। সিরিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
সিরিয়ার সরকারি দৈনিক ‘আল থাওরা’ আজ তাদের প্রথম পাতায় লিখেছে সীমিত সেনা অভিযান সত্ত্বেও সিরিয়ায় পুরোপুরি যুদ্ধ লেগে যেতে পারে।
সেই ভয়েই ওবামা মার্কিন কংগ্রেসের অভিমত জানতে চেয়েছেন। কাগজটির মতে, কংগ্রেস লাল বা সবুজ যে সঙ্কেতই দিক, আমেরিকা যে পিছু হটছে সেটা স্পষ্ট। ব্রিটেন পাশ থেকে সরে গিয়েছে। ওবামা যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ভয়েই পিছু হটছেন বলে সিরিয়ার সংবাদমাধ্যমের দাবি। আসাদ বলছেন, তিনি আক্রমণের মোকাবিলা করতে তৈরি।
সিরিয়ার মতামত স্বাভাবিক ভাবেই খারিজ করেছে আমেরিকা। মার্কিন পররাস্ট্র সচিব জন কেরি আজ বলেছেন, “আমেরিকা পিছু হটেছে ভাবার কারণ নেই। সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত শুধু মার্কিন কংগ্রেসের হাতে নেই। প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই চলবেন। ” আসাদের সঙ্গে হিটলার আর সাদ্দামের তুলনা করে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের প্রমাণ যে মিলেছে, তা ফের মনে করান তিনি।
তা হলে সিরিয়ায় সীমিত সেনা অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের মতের জন্য কেন আদৌ অপেক্ষা করতে চান ওবামা? আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওবামার জন্য এটা অন্যতম বড় জুয়া। জাতিসংঘ-মার্কিন কংগ্রেস, দেশের মানুষ এবং ব্রিটেনের সমর্থন ছাড়াই তিনি সিরিয়ায় অভিযানে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে গত সপ্তাহে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন ওবামা। তার পরেই তিনি মার্কিন কংগ্রেসের মত জানতে চেয়েছেন। তাঁর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস। এর পরিণতি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মতো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রিপাবলিকানদের মধ্যে অনেকেই জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে ভোট হলে তাঁরা সিরিয়া অভিযানে সায় দিতেন না। ডেমোক্র্যাটদের আধিপত্য যেখানে, সেই সেনেটেও ওবামা সঙ্কটে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা। তবে হোয়াইট হাউস অফিসারদের মত, সেনা অভিযানের প্রস্তাব কংগ্রেসে খারিজ হলেও ওবামা সিরিয়ায় সেনা অভিযান চালাতে পারেন। কিন্তু সেটা অবশ্যই তাঁর পক্ষে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত হবে। তবে ফ্রান্স এখনও অভিযান চালানোরই পক্ষে।
ফলে ওবামা তাদের সমর্থন পাবেন।
তবে কংগ্রেস অনুমোদন দিক আর না-ই দিক, সিরিয়ায় সেনা অভিযান যদি হয়ও, তার কিন্তু দেরি আছে। মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা এখন ছুটি কাটাচ্ছেন। ৯ সেপ্টেম্বরের আগে তাঁরা ওয়াশিংটনে ফিরছেন না। তাঁদের দ্রুত ফেরার জন্য ওবামা কোনও চাপও দেননি।
সুতরাং ব্রিটেনের মতো তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন যে তিনি অনুভব করছেন না, সেটা স্পষ্ট। ওবামা নিজে আগামী সপ্তাহে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সেন্ট পিটার্সবুর্গ যাচ্ছেন। সেখানে উঠবে সিরিয়া প্রসঙ্গ। আয়োজক দেশ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন খোলাখুলি বলছেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগে হাত রয়েছে বিদ্রোহীদেরই। আমেরিকাকে তারাই উস্কোচ্ছে।
সিরিয়ায় সরকার-বিরোধী জোট ‘ন্যাশনাল কোয়ালিশন’ তাদের হতাশা গোপনও করেনি। ওবামা আরও সময় নিচ্ছেন দেখে তারা বলেছে, ‘‘ভেবেছিলাম দ্রুত কিছু করা হবে। আমেরিকার নিষ্ক্রিয়তায় ফের আঘাত হানতে পারে আসাদ বাহিনী। ’’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।