আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরঃ নমি তোমায় বিনম্র শ্রদ্ধায়।


আজ ২৯ জুলাই ২০০৯ আধুনিকালের শ্রেষ্ট বাঙালী ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১০৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর কে নিয়ে কিছু লিখবার কোন ক্ষমতা আমার নাই। তাই বিদ্যাসাগর সম্পর্কে আমার ব্যক্তি গত অনুভুতির দু'টি কথা বলতে চাই। মাইলস্টোন ও ঈশ্বর চন্দ্র আজ পরিস্কার স্মরণ আসছে না, শিশুপাঠে কোথাও বালক ঈশ্বর চন্দ্র কে নিয়ে একটা কাহিনী পড়েছিলাম। কাহিনীটা ঈশ্বর চন্দ্রের বাবার সাথে পায়ে হেটে কলকাতা যাবার কালে পথের পাশের মাইলস্টোন দেখে ইংরেজি গননা শিক্ষা সংক্রান্ত।

কাহিনী টি আমার শিশু মনে গভীর দাগ কেঁটে ছিল । সেই শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত গাড়িতে ভ্রমনকালে জানালার পাশের সীটে বসবার আমার প্রধান আকর্ষন 'মাইলস্টোন' পড়া। আজ পঙ্কিল জীবন চলার পথে সমাজের নোংরামি আর মানুষে ভন্ডামি দেখে দেখে যখনই বারংবার হতাশ হয়ে পরি, তখনই দেখি জীবনের বাঁকে বাঁকে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর হাস্য উজ্জ্বল মুখে দাড়িয়ে আছেন । বিদ্যাসাগর উপাধি ঃ আমার ছোট বেলায় ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামের শেষাংশের 'বিদ্যাসাগর' উপাধিটি নিযে আমার চরম বিস্ময় ছিল। আম্মা বুঝি দিযেছিলেন , তিনি এত পড়াশনা করেছিলেন যে তাঁর সাথে জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় কেউ পেরে উঠতো না।

সাগরের জল যে অফুরন্ত , তেমনি বিস্তৃত তাঁর জ্ঞান। ১৮৩৯ সালের ২২ এপ্রিল 'হিন্দু ল কমিটি'র পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। এই পরীক্ষাতেও যথারীতি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ১৬ মে ল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে 'বিদ্যাসাগর' উপাধিটি ব্যবহৃত হয়। এই প্রশংসাপত্রটি ছিল নিম্নরূপ : সংস্কৃত কলেজে বারো বছর পাঁচ মাস অধ্যয়নের পর তিনি এই কলেজ থেকে অপর একটি প্রশংসাপত্র লাভ করেন। ১৮৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাপ্ত দেবনাগরী হরফে লিখিত এই সংস্কৃত প্রশংসাপত্রে কলেজের অধ্যাপকগণ ঈশ্বরচন্দ্রকে 'বিদ্যাসাগর' নামে অভিহিত করেন।

প্রশংসাপত্রটি নিম্নরূপ: এ রকম সনদধারী ব্যক্তির পৃথিবীতে ভুড়ি-ভুড়ি আছে। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমসায়িক কালে বা বর্তমান কাল পর্যন্ত তাঁর মত কিংবা তাঁর থেকে বেশি সার্টিফিকেট ধারী অনেকেই জন্মেছেন। কিন্তু অর্জিত জ্ঞানকে তাঁর মত প্রকৃত নৈব্যক্তিক প্রয়োগ করে যাওয়া মানুষ খুজে পাওয়া সমগ্র বাংলার ইতিহাসে দুষ্কর। খ্যাতির মোহঃ ১৯৩৫ সংবৎ (১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দ)-এ প্রকাশিত বর্ণপরিচয় গ্রন্থের ৫৩তম সংস্করণ। বাংলা বর্ণশিক্ষার জগতে ১৮৫৫ সালে প্রকাশিত বইটি দেড়শ বছর পরে আজও সমান জনপ্রিয়।

মানুষের অর্জিত সম্পদ কে দু ভাগে ভাগ করা যায়; এক বস্তুগত সম্পত্তি আর দুই ভাবগত সম্পত্তি। নিজ কায়িক শ্রম ও মেধাবলে অর্জিত বস্তুগত সম্পদ ( অর্থ , জমি- জমা) দু'হাতে অকাতরে বিলিয়ে যাওয়া মহৎ হৃদয়ের পরিচয নিঃসন্দেহে। কিন্তু নিজ যোগ্যতায় অর্জিত জস-মান নির্লিপ্ত ভাবে অবহেলা করার শক্তি অর্জণ অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর অর্জিত সকল বস্তগত সম্পদই শুধু অকাতরে বিলিয়ে জান নি; সত্য আর ন্যায় প্রতিষ্ঠায় নিজের সামাজিক অবস্থান- খ্যাতিকে পদদলিত করতে এক মুহুর্ত বিলম্ব করেন নি। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের কেন অবহেলিত? ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মত মানুষ কে মূল্যায়ণ করেনি তার সমসাময়িক অনেক প্রতিভাবান মানুষই।

আজও এই বিশাল মাপের মানুষটি কে সাধারণ মানুষের অন্তরালে রাখা হয় সুকৌশলে। যে টুকু হাজির করা হয় তাও খন্ডিত। কিন্তু কেন ? কেন না, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মানে হচ্ছে সকল সামাজিক অসংগতি আর বঞ্ছনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নাম। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মানে হচ্ছে সদা উন্নত শীর...... স্বাধীন চিন্তা আর যুক্তিবাদীতার মুর্ত প্রতীক ।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।