আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধুবর 'আবু নাইম' : এর "ভারত রাষ্ট্রের চরিত্র বিচার'' এর রাষ্ট্র চরিত্র বিশ্লেষন প্রসঙ্গে।



ক বন্ধুবর 'আবু নাঈম' তাঁর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ''টিপাইবাঁধ নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ ও ভারত রাষ্ট্রের চরিত্র বিচার । '' শীর্ষক ধারাবাহিক লেখাটির ২য় কিস্তি আজ ২৮ জুলাই ২০০৯ সকাল ৮:৩৫ মিনিটে ব্লগে প্রকাশ করেছেন। বেশ কয়েক দিন ধরে তাঁ র ২ য় কিস্তির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভাল কিছুর জন্য ধৈর্য ধারন একান্ত প্রয়োজন। আমার মত গুটি কযেক পাঠকের ধৈর্যের যথার্থ পুরস্কার ' আবু নাঈম ' কদিয়েচেন , তাঁ সংক্ষিপ্ত অথচ অসাধারণ ২ য কিস্তিতে।

খ আবু নাঈম নিঃসন্দেহে সেরা ব্লগারদের একজন । কিন্তু তাঁর পাঠক খুবই সীমিত। এটা তিনি তার এবার লেখার অবতারণিকায় বলেছেন। ''ব্লগে আমার লেখার পাঠক হাতে গোনা ৮/১০ জন। '' কেন পাঠক কম।

!? প্রথম কারণ, বোধ হয় সিরিয়াস লেখার পাঠক কম। দ্বিতীয় কারণ, ব্লগে তার লেখা পোস্টের সময় কাল। তিনি পোস্ট কলেন মাঝ রাতে কিংবা খুব সকালে। সকালে অফিসে এসে অনেক ব্লগার দৈনিক পত্রিকা পড়ে , যেনতেন ভাবে খবরের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু পোস্ট করেন। বরাবরই সে গুলোর ঠেলা ধাক্কায় 'আবু নাইম' এ অসাধারন লেখগুলো অনেক পিছনে চলে যায়।

গ বিষয় বস্তু ভারতের রাষ্ট্র চরিত্র বিশ্লেষণ। বিষয় টি এদেশের প্রগতিশীল আন্দোরনের কর্মীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে আবু নাঈম যা বলেছেন তার সাতে দ্বিমত করার কোন কারন নাই। ''ভারত রাষ্ট্রের চরিত্র বিচার করে টিপাইবাঁধ নিয়ে ভারতের অবস্থান পরিস্কার হবে কিনা, সেটা আমার কাছে যতটা জরুরি তার চেয়ে জরুরি আন্দোলনকারীদের অবস্থান পরিস্কার করা। আপনি যে শত্রুর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তার চরিত্র আপনার কাছে স্পষ্ট না হলে আপনি লড়াই করবেন কিসের ভিত্তিতে? সেই সঙ্গে এও তো সত্য যে শত্রুকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করার ওপর যুদ্ধের ফল অনেকটাই নির্ভর করে।

শত্রু নির্ধারণ সঠিক হলে মিত্র নির্ধারণও সহজ হয়ে যায়। '' ঘ ২ য় কিস্তিতে 'আবু নাঈম' ভারতীয় রাষ্ট্র তথা ভারতী পুজির ঊন্মেষ কালকে তুরে ধরেছেন, ইতিহাসের সহজ সাধারন প্রসঙ্গ টেনে। পড়ুন ' আবু নাঈম' এর ''টিপাইবাঁধ নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ ও ভারত রাষ্ট্রের চরিত্র বিচার - ২'' Click This Link আমি তাঁর লেখা ধরে একটু বিশ্লেষণ করতে চাই এবং শেষে তাঁর একটি বিশ্রেষনের সাথে আমার দ্বিমতের কারণ তুলে ধরবো। ঙ আবু নাঈমের লেখা থেকে "এমনিতে আমরা সাধারণভাবে জানি যে ভারতের সাথে আরবদের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। সেটা সমুদ্র পথে এবং খাইবারপাস হয়ে স্থল পথেও।

আরব বণিকদের হাত হয়ে ভারতের পণ্য, বিশেষত মসলিন, তাঁতসহ বিভিন্ন বস্ত্রসামগ্রী, মশলা ইত্যাদি ইউরোপ পর্যন্ত যেত। এসব পণ্যের খুব কদর ছিল ইউরোপে। যে কারণে ইউরোপ ভারতে আসার সমুদ্রপথ আবিষ্কারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। এর বাইরে জাভা, সুমাত্রা ইত্যাদি অঞ্চলের সাথেও সমুদ্রপথে ভারতের সওদাগরি বা বাণিজ্য চলত। এসব অনেক আগের কথা।

কিন্তু এসব তথ্য থেকে যে বিষয়টি বেরিয়ে আসে তাহল ভারতের বুকে বণিক (merchent capital) পুঁজির বিকাশ ঘটেছিল। " এখানে ভারতের বুকে বণিকী পুজির বিকাশ সময়কাল টাকে একটু স্পেশিফিক করা দরকার। যদিও উপনিবেশিবক শাসনের ঊষা লগ্নের যে সকল (মূলতঃ ব্যাকিং) ভারতীয় পুজির কেন্দ্রগুলো (ব্যক্তি) উল্লেখ করেছেন সকলই সনাতন ধর্মালম্বি সম্প্রদায় ভুক্ত । তবে ভারত বর্ষে বণিকী পুজি বিকাশত (সংগঠিত বিকাশ অর্থ) ঘটে মুসলমানদের হাত ধরে। প্রায় বাঁধাহীন ভাবেই ভারত বর্ষে আরব বণিকরা ইসলামের আগমনের পূর্ব থেকে বাণিজ্য করে এসেছে।

সুমদ্র পথে জাভা- সুমাত্রা পর্যন্ত ভারত বর্ষের যে বাণিজ্যিক সংযোগের ইতিহাস পাওয়া যায় তা কিন্তু আরব বণিকদের .......... ভারতীয় বণিক নয়। ভারত বর্ষের সনাতন ধর্মালম্বীরা সংগঠিত বাণিজ্যে আগ্রহী হযে উঠে মুসলমানদের হাতে রাজশক্তি হারানোর পর। অপর দিকে সরাসরি রাজদন্ড হাতে পাওয়ার পর পশ্চিম হতে আসা মুসলমান শাসকরা প্রত্যক্ষ বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে পিছিয়ে পরে বা আগ্রহ হারায়। এখানে এই পিছিয়ে পরার একটা অন্যতম কারণ না বললেই না। এ সময় পশ্চিম এক আন্তৎসংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মুসলিম শাসন কেন্দ্রে পরিবর্তন ঘটে এবং ভারতীয় মুসলমান শাসকরা আরবীয় কেন্দ্রিয় মুসলমান শাসন বা খিলাফতের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে স্থায়ী ভাবে ভারতীয় হয়ে যায়।

উক্ত পরিপেক্ষিত ভারতীয় মুসলমানদের বণিকী চরিত্র হারানোর প্রক্রিয়াকে ত্বারান্বিত কের। অর্থাৎ আমরা যদি বণিকী পুজি কে শিল্পপুজি বিকাশের পথে সেতু বন্ধন হিসাবে বিবেচনা করি তবে মুসলমানরা রাজশক্তি হাতে পাওয়ার পর এক পর্যায়ে ভারত বর্ষে পিছনে হাটতে শুরু করে। এটাই শ্রেনী বিভক্ত সমাজের ইতিহাসের সাদারন সমীকরণ। ঙ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব প্রসঙ্গে আবু নাঈম বলেছেন "১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর একদিকে ভারত ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে খোদ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের করতলে চলে গেল, অন্যদিকে সিপাহী বিপ্লবে দিল্লীর মুসলমান নবাব ও তার অনুসারী ছোট ছোট মুসলমান রাজা-বাদশাদের সম্পৃক্তা ব্রিটিশদের সাথে মুসলমানদের দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। ব্রিটিশরা মুসলমানদের সন্দেহের চোখে দেখত, তাদের প্রতি অধিক বিমাতাসূলভ হয়ে উঠল, যার প্রভাব পড়েছে মুসলমান বণিকদের ভাগ্যে।

" ১৮৫৭-১৮৫৮ সাল ব্যাপী 'সিপাহী বিদ্রোহ' সম্পর্কে লেখকের বক্তবের সাথে এক মত হতে পারলাম না। সিপাহী বিদ্রোহ মধ্য দিয়ে এক দিকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে , অপর দিকে লক্ষনৌরের নবাব কিংবা দিল্লীর বাদশাহের জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী সিপাহীদের সাথে একাত্ময় হতে ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে ভারত বর্ষে সামান্ত ব্যবস্থার যবনিকাপতন ঘটে। সিপাহী বিদ্রোহ শুধু মাত্র মুসলমান সিপাহীদের বিদ্রোহ ছিল না। যুগ যুগ ধরে 'সিপাহী বিদ্রোহ' কে একটা সাম্প্রদায়িক চরিত্র দেওয়া চেষ্টা চলে আসছে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ সম্পর্কে কার্ল মার্কসের উক্তি টা লক্ষণীয় (৩০ জুন ১৮৫৭) ''এর আগেও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ হয়েছে, কিন্তু বর্তমান বিদ্রোহে কতগুলো বৈশিষ্টসূচক এবং মারাত্মক লক্ষণে চিহ্নিত।

এই প্রথম সিপাহী বাহিনী হত্যা করল তাদের ইউরোপিয় অফিসারদের। মুসলমান ও হিন্দুরা তাদের তাদের পারস্পরিক বিদ্বেষ পরিহার করে মিলিত হয়েছে সাধারণ মনিবের বিরুদ্ধে ,' হিন্দুদের মধ্য থেকে তা শুরু হয়ে আসলে তা শেষ হয়েছে দিল্লির সিংহাসনে এক মুসলমান সম্রাটকে বসিয়ে;'। ১৮৫৮ সালে সিপাহী বিদ্রোহের অবসানের পর ''ব্রিটিশরা মুসলমানদের সন্দেহের চোখে দেখত, তাদের প্রতি অধিক বিমাতাসূলভ হয়ে উঠল, যার প্রভাব পড়েছে মুসলমান বণিকদের ভাগ্যে। '' এ উক্তির সাথে একমত হতে পারছি না। ভারতের মুসলমানরা যে ইংরেজ আগমনের আগেই তাদের বণিকী উৎকর্ষতা হারাতে শুরু করেছিল , আমি তা আগের মন্তবে বলেছি।

বরং ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে আমরা দেখি...................... সিপাহী বিদ্রোহে ইংরেজদের আশ্রয় দাতা হওয়ায় ঢাকার বর্তমানে নবাব পরিচয ধারীরা ইংরেজদের সুনজরে আসে এবং নবাব উপাধি পায়। সিপাহী যুদ্ধোত্তর কালে সারা ভারতবর্ষে এ রকম সুনজর পাওয়া মুসলমান অভিজাত শ্রেনী একে বারে কম নয়। মনে রাখতে হবে, দীর্ঘ মুসলমান শাসন কাল স্বত্ত্বেও ভারত বর্ষে মুসলমানরা সংখ্যা লঘু এবং সমাজের নিন্মবর্গেই ছিল সিংহ ভাগ মুসলমানদের অবস্থান। চ ১৮৫৮ সালে ভারত বর্ষে সিপাহী বিদ্রোহের ঘটনা চক্রের মধ্য দিয়ে খোদ ব্রিটেনে ক্ষমতার ভার কেন্দ্রের এক মৌলিক পরিবর্তন সূচিত হয়। যদি কার্ল মাকর্সের ভাষা বলি (১৮৫৩)..... '' ভারতের প্রগতিতে এতো দিন পর্যন্ত গ্রেট ব্রিটেনের শাসক গোষ্ঠিগুলোর যে স্বার্থ ছিল সেটা নিতান্ত আকস্মিক , অস্থায়ী ও ব্যতিরেকমূলক।

অভিজাত শ্রেনী চেয়েছিল জয় করতে,ধনপতিরা ( বণিকী পুজি মালিক) চেয়ে ছিল লুন্ঠন আর মিল-তন্ত্রীরা (শিল্প পুজি মালিক ) চেযেছিল শস্তায় বেঁচে বাজার দখল। এখন দান উল্টে গেছে। মিল-তন্ত্রীরা আবিষ্কার করেছে যে উৎপাদনশীল দেশরূপে ভারতের বূপান্তর তাদের কাছে একান্ত জরুরী............''। আবু নাঈম বলেছেন ''ব্রিটিশের হিন্দু-মুসলমান বিভাজন নীতির ফলে শিকে ছিঁড়ল হিন্দু ব্যবসায়ীদের ভাগ্যে । আর এ সময় থেকেই শুরু হয় টাটা-বিড়লা প্রমুখ পুঁজিপতিদের উত্থান।

''........................... শিকে ছিঁড়া দৃষ্টি ভঙ্গি টাকে আমার কাছে অবৈজ্ঞানিক মনে হয়। পুজির ধর্ম -বর্ণ-জাত-পাত বিচার নেই। য়েখানে , যে শর্তে তার বিকাশের সম্ভাবনা সেখানেই পুজি হাজির হয় ........ যে পুজির স্বার্থ রক্ষায় উপযুক্ত তার সাথেই তার হৃদতা। প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের মহা সূত্র নিৎসন্দেহে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন নীতি ( কার্ল মার্কস যাকে রোমানদের divide et impera নীতির সাথে তুরনা করেছেন)। আমরা মোটা দাগে ইংরেজদের ইই নীতি কে হিন্দু মুসলমান বিবাজন রূপে দেখি।

কিন্তু ইংরেজের বিভাজন নীতি ছিল আরও গভীরে বিস্তৃত। আর্য্য-অনার্য্য , বর্ণ, আঞ্চলিকতা নানা ভাবে তাঁরা বিভাজন নীতি প্রয়োগ করেছে। তবে প্রশ্ন ১৮৫৭ সার উত্তোর ভারত বর্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ে াভিজাত শ্রেনীর হাতে ধনপিত মহাশয়ে কৃপা মিরার কারন কি? কারণ, ব্রটিশ মিল-তন্ত্যী বা শিল্প পুজির সাথে তড়িৎ গতিতে গাঁট ছাড়া বাঁধার যোগ্যতা থাকা বা প্রাক্ক প্রস্তুতি থাকা। পড়ুন পৃষ্ঠা ১৬ হতে ১৯ Click This Link


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।